পাথরঘাটার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল তালুকদারের কষ্টের জীবন!

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল তালুকদারসুঠাম দেহের অধিকারী তিনি। জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনও করেছেন। নিজ গ্রামের প্রথম জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন তিনি যার নাম শহিদুল ইসলাম তালুকদার মুকুল, গেজেট নম্বরঃ ৯৯৬। তিনি পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের লেমুয়া গ্রামের হাজী নুরুল ইসলাম তালুুকদার ছেলে।

১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনে জুনের মাঝামাঝির সময় ভারতে তিনিসহ ৮০জন উন্নত প্রশিণ শেষে ১৮ বছর বয়সেই সুন্দরবন অঞ্চলের ৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ কয়েকমাস যুদ্ধ শেষে ১ ডিসেম্বর দেশে আসেন। ওইদিনই নিজ গ্রামে প্রথম স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলন করেছেন। এতো কিছুর পরেও আজও নিভৃতে পল্লীতে দিন কাটছে অতি কষ্টে। কেমন আছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, কিভাবে চল তার সংসার-জীবন? নিভৃত পল্লীর কুড়ে তৈরী করেছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষনা কেন্দ্র। যার নাম ‘মুক্তিযুদ্ধ গবেষনা কেন্দ্র নবম সেক্টর মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’। যেখানে ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বই রয়েছে। এছাড়া নিজেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন পান্ডলিপি। নিজের ইতিহাস নিয়ে পান্ডলিপি লেখা শুরু করেছেন। সাংবাদিকদের দেখামাত্রই কেঁদে উঠলেন তিনি।

দীর্ঘ ৩৫ বছর রায়হানপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন ২৮ বছর ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এই বীর। বীরের সাথে ১৯৭১ সনে পাকিস্তানে বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হলেও শেষ বয়সে এসে হেরে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা মুকুল। হঠাৎ কালো মেঘ তার জীবনে এসে সব কিছু তছনছ করে দিয়ে গেলেন, যার পরিণতি পঙ্গুত্ব।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল তালুকদার বলেন, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বামনা উপজেলার ভাইজোরা এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১ বছর ২ মাস চিকিৎসা শেষে জীবন ফিরে পেলেও আগের মতো হাটতে পারছেনা। স্ট্রেসারই চলাচলের একমাত্র ভরসা তাঁর। প্রায় ২ বছর মানবেতর জীবন করছি। কারো কোন সহযোগিতা পাইনি।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাগ্যে কিছুই ঘটে নাই, সবার ভাগ্য পরিবর্তন হয়, আমার ভাগ্য আরও দুর্বিসহে পরিণত হয়েছে। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার জীবন। অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও ওদের ভাগ্যে একটি চাকরীও জুটেনি। এক্সিডেন্টে ৬ লাখ শেষ করে আজ নিঃস্ব। অর্থের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছি। শেষ জীবনে নিজের ভাগ্যের চিন্তা বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সাথে দেখা এবং সন্তানদের ভাগ্যের পরিবর্তন চান তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ও বরগুনা জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব এমএ খালেক জানান, মুকুল আমাদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এক্সিডেন্ট হওয়ার পর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন তা ভাবতে পারিনি। আল্লাহর রহমাতে আমাদের মাঝে এসেছেন। এখন তিনি খুবই অসহায়। আর্থিক অসচ্ছলতা এখন তার বড়ই বেদনার। এখনো তার চিকিৎসা জরুরী, সরকারকেই করতে হবে।

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১১ ডিসেম্বর

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)