শিশু-কিশোরদের রোজার অভ্যাস গঠনে করণীয়

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৩:৫৫ এএম, ১১ মে ২০১৯

শিশু
যেসব বাবা-মা ছোট ছোট সন্তান কিংবা শিশু-কিশোরদের ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের ইবাদতে অভ্যস্ত করেন, তারাই আসলে বুদ্ধিমান। এমন অনেক পরিবারের দেখা মেলে, যেখানে বড়-ছোট সবাই মিলেই রোজা রাখছেন কিংবা নামাজ আদায় করছেন। মা যখন নামাজে দাঁড়াচ্ছেন তখন ছোট ছোট শিশুটিও জায়নামাজ বিছিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সবাই সেহেরি খাচ্ছে, সঙ্গে শিশুটিও অংশ নিচ্ছে এবং সারাদিন ক্ষুধা-পিপাসা নিয়েই রোজাটা রাখতে চাচ্ছে। এসব দৃশ্য সত্যিই খুব চমৎকার।

শিশু-কিশোরদের জন্য ইবাদত সাধ্যের বাইরের কিছুই নয়। এর জন্য চাই অন্তরের ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটা শিশু-কিশোরদের মনে ঢালতে হবে একেবারে ছোটবেলা থেকেই। আর এ জন্য সবচেয়ে উত্তম ও জরুরি ভূমিকা পালন করবেন মা।

শিশুদের পাঁচ বছরের পর থেকেই মা আগ্রহী করে তুলবেন রোজা রেখে সওয়াবের ভাগীদার হতে। শিশুর কষ্ট হলেও বলবেন, সোনা আমার! আরেকটু চেষ্টা করো; আর অল্প সময়ই তো বাকী। প্রয়োজনের তাকে শুয়ে-বসে থাকতে বলবেন। তাও চেষ্টা করুক, ক’দিন পর পর দু’একটা করে রোজা রাখাতে। শিশুটি যেদিন রোজা রাখবে সেদিন সবার সামনে তাকে বার বার বাহবা দিন, উৎসাহ দিন। তার প্রশংসা করুন। এতে তার মনে সাহস বাড়বে ও সে আনন্দিত হবে। সে উপলব্ধি করবে, সে অনেক মহান একটা কাজ করেছে। ইফতারেও বাচার পছন্দের আইটেম রাখবেন, যাতে সে নিজেকে স্পেশাল ভাবতে পারে। সে যেন বুঝে সে রোজা রাখার মাধ্যমে পরিবারে সবার চোখেই খুব স্পেশাল।

হাদিসে সাত বছর বয়স থেকে নামাজের জন্য বলার কথা আসলেও বাচ্চাদেরকে বুঝ হওয়ার পর থেকেই মা নামাজে সময় নিজের পাশে নিয়ে দাঁড়াবেন। বাবা মসজিদে নিয়ে যাবেন, এতে করে শিশুরা নামাজের সঙ্গে পরিচিত হয়। রমজানেও মা শিশুদের নিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করবেন ও তাদেরকে তারাবির নামাজের ব্যাপারে বলবেন। মা যখন কোরআন তেলাওয়াত করবেন তখন শিশুদেরও কায়দা-আমপারা দিয়ে বসিয়ে রাখবেন। ইফতারের সময় শিশুরা যেন মায়ের কাজে সাহায্য করেন, তাই তাদের ছোট ছোট কিছু কাজ ভাগ করে দেবেন। কেউ দস্তরখানায় গ্লাস দেবে, কেউ পানি বা শরবতের জগ, কেউ রান্না ঘর থেকে প্লেট এনে রাখবে। কিংবা প্রতিবেশিদের কাছে ইফতার নিয়ে যাবে। এলাকার ফকির মিসকিনদের ইফতার দিয়ে আসবে ইত্যাদি।

অল্প করে হলেও শিশুদেরকে রমজানের সবকাজে অংশগ্রহণ করাবেন। এই মাস যে ব্যতিক্রম একটি মাস, অনেক রহমত-বরকতের মাস; তা যেন বাচ্চারাও উপলব্ধি করতে পারে।

তবে আমরা কিছু ভিন্ন দৃশ্যও দেখে থাকি। যা বড়ই দুঃখজনক। কিছু কিছু মা-বাবা ছোট বাচ্চা তো দূরে থাক, রোজা ফরজ হয়েছে এমন ছেলেমেয়েদেরও রোজা রাখতে দেন না। তাদের গরমে কষ্ট হিবে এই ভেবে, কিংবা পরীক্ষা চলছে, না খেয়ে পড়াশুনা ভালো হবে না এই ভেবে। বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক। বলি, আপনি আপনার বাচ্চার দুনিয়ার গরমের কথা ভাবছেন অথচ জাহান্নামের আগুনের কথা ভাবছেন না। দুনিয়ার পরীক্ষার কথা ভাবছেন অথচ আখেরাতের পরীক্ষার কথা ভাবছেন না। ছেলেমেয়েদের এই বুঝ দিচ্ছেন যে, আমার দুনিয়া আগে, এরপর ইবাদত। আগে আমার পড়াশুনা, আগে আমার ক্যারিয়ার, এরপর আমার ইবাদত। এতে করে শুধু অভিভাবকরা যে শুধু গোনাহ কামাচ্ছেন তাই না। বরং শিশুদেরকেও গোনাহগার করছেন, নানান ফজিলত থেকে বঞ্চিত করছেন এবং ইবাদতের কাজায় ডুবিয়ে দিচ্ছেন। এক সময় এই বাচ্চাই কষ্ট পাবে এই ভেবে যে, মা-বাবা রোজা রাখতে বলেন নাই কিংবা তাগাদা দেন নাই। এখন এতো এতো কাজা আদায় করতে হচ্ছে কষ্ট করে। আর সেই রমজানের রহমত-বরকত আর ফজিলত তো পাচ্ছে না তারা।

দুনিয়াতো অল্প ক’দিনের। দুনিয়ার জীবন শেষে আমাদেরকে শুধুমাত্র ইবাদতটা নিয়েই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। সেই ইবাদতেও যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে পরকালে পার পাবো কীভাবে? পরকালে যদি আমরা এমন ইবাদত নিয়ে যদি যাই যা সময়মতো করা হয়নি, অথবা তা অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে করা হয়নি, তা খুশু-খুজুর সঙ্গে করা হয়নি- তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কে?
আপনি আপনার সন্তানের দিকে তাকিয়ে ভাবুন, তাদের জন্য কোনটা বেশি জরুরি? দুনিয়া না আখেরাত? কোনটা সাজাতে আপনি তাকে বেশি সাহায্য করবেন?

শিশু সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে সেহেরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া, সদকা, ফিতরা সব আদায় করবেন এবং প্রতিটা জিনিস নিয়েই তার সাথে আলোচনা করবেন। তাকে জানাবেন, তাকে শেখাবেন। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে কিংবা এটা ভাববেন না, সে বড় হলেই জানবে।

বরং আপনিই তার প্রথম শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকা। আপনি তাকে যতো ইবাদত শিখাতে পারবেন, তার বেশি সদকায়ে জারিয়া হবে। আপনারই সন্তান। আপনাকেই তাকে শিখাতে ও অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)