পাথরঘাটার জেলে পল্লীতে ঈদ আনন্দ ম্লান

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ৩ জুন ২০১৯

পাথরঘাটার জেলেবঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের মাছ ধরার উপরে মাছ ধরার নিশেধাজ্ঞা দেয়ায় হতাসায় ভুগছে পাথরঘাটার জেলে পল্লীর মানুষ। এর আগে বিগত বছর গুলোর যত নিশেধাজ্ঞা দিয়েছে তা জেলেরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই পালন করেছে। বর্তমান সময়ে যে নিশেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাতে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যেতে বসেছে এ উপকুলে। হিমশিম অবস্থায় আছে ট্রলার মালিকরা। এবছর ঈদের আগে ৬৫ দিনের অবোরধ দেয়ার কারনে মানুষ চরম হতাশায় পরছে কিভাবে তারা তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে। এ উপজেলার প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ ইলিশ মাছ শিকারের সাথে জড়িত।

সরেজমিনে জেলে পল্লীতে গেলে দেখা যায়, একের পর এক অবরোধ দেয়ায় জেলেরা প্রায় দিশেহারা হয়ে গেছে। এরকম কিছু দিন পর পর অবরোধ দেয়ায় এ বছরে মাছ ধরার কোন সুযোগই পাচ্ছেননা তারা। এই দীর্ঘ সময় মাছ ধরতে না পারলে ট্রলার মালিকদের লাখ লাখ টাকার পুঁজি, জেলেদের দেয়া দাদন সবকিছুই ভেস্তে যেতে বসেছে। এতে জেলে পরিবার গুলোর ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছে তারা। জেলে পরিবার গুলোর শিশুদের ঈদের আনন্দ থাকলেও প্রাপ্ত বয়স্কদের কোন ঈদের অনন্দ নেই।

উপকুলীয় জেলে মনির, কালাম, রফিকুল ইসলাম জানান, কিভাবে আমরা ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঈদ করব ভেবে পাচ্ছি না। আমরা বাপদাদার আমল থেকে ইলিশ মাছ ধরে জিবিকা নির্বাহ করি মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোন কাজ জানিনা।তাই অন্য কাজ করতে চাইলে কেউ কাজ দিচ্ছে না।অশিক্ষিত হওয়ায় পেশার পরিবর্তন করতে পারছিনা।আমাদের জালেতো ইলিশ ছাড়া অন্য কোন প্রকার মাছ ধরা পরে না। তাহলে কোন এই অবরোধ আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। আমাদের জন্য অন্য কোন ব্যাবস্থা না করে কেন এই অবরোধ দিল। আমরা এখন দাদনের জন্য ট্রলার মালিকের কাছে গেলেও তারাও ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তারিয়ে দেয়।এবছরের ঈদ জেলেদের জন্য নয় , এই ঈদ সরকারের নিজের জন্য। তারা আমাদের দিয়ে প্রতি বছর অনেক টাকা কামিয়ে নেয় আবার আমাদের উপরেই সব চাপিয়ে দেয়।

পাথরঘাটা পৌরশহরের কসমেটিকস ব্যাবসায়ী মনির, কাপর ব্যাবসায়ী জয় বিশ্বাস, মুদি দোকানদার সেলিম জানান, অবরোধের কারনেই বাজারে লোক সমাগম খুবিই কম। গত বছরের তুলনায় এই ঈদেবেচা কেনা নেই বল্লেই চলে। লাখ লাখ টাকা লোন এনে ঈদের জন্য মালামাল উঠেয়েছি, বাজারে ক্রেতা না থাকায় লোকসান গুনতে হবে এবছর।

ট্রলার মালিক আলম মোল্লা ও মাসুম কোম্পানী জানান পৌরসভা থেকে ৪০ কেজি চাল নিতে বলেছে ৪০ কেজি চালের দাম দিয়ে একটি ইলিশ মাছ কেনা যায়না। আমরা কারো কাছে ভিক্ষা চাইনা। একই সাগরে ভারতীয়রা মাছ ধরবে আমরা ধরতে পারবনা। দায় দেনা করে ইলিশ ধরার জন্য ট্রলার সাগরে যাওয়া উপযোগি করেছি। এখন মাছই ধরতে পারবনা সেখানে ঈদে বাড়ী থাকাই সন্বব হবে না।

বাংলাদেশ ফিসিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, নিশেজ্ঞা চলা কালে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে সকল মাছের পোনা নিধনের উৎসব চলছে অথচ ইলিশ মৌসুমে ইলিশ নাধরার জন্য নিশেজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইলিশ মৌসুম জৈষ্ঠ মাস থেকে ১৫০ দিন (৫মাস) তার মধ্য ৬৫দিনের নিশেজ্ঞা আবার মা ইলিশ রক্ষার জন্য ২২ দিন বন্ধ। বাকী ক’দিন যদি আবাহাওয়া খারাপ থাকে তা হলে ইলিশ মৌসুমের ইলিশের স্বাদ থেকে বাংলা দেশের মানুষ বঞ্চিত হবে।

বরগুনা জেলা সৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালম আজাদ জানান, এবছর জেলেদের উপরে ৬৫ দিনের অবরোধ দেয়া হয়েছে। তাই বর্তমান সময়ে সমুদ্রের সকল প্রকার মাছ আহরন নিষেদ। এসমে জেলেদের জন্য অর্থিক অনুধান হিসেবে ৪০ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে যাতে সকল জেলে এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)