শিক্ষার সর্বস্তরে সংবিধান ও আইন বাধ্যতামূলক করা হোক”

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মোঃ রেজা-উর রহমান রাজু,

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হলো সংবিধান কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো যে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও অনেকের নুন্যতম ধারনা নেই সংবিধান সর্ম্পকে। কিন্তু নিজেকে একজন সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সংবিধান জানা খুবই জরুরি বলে আমার মনে হয়। যদিও উচ্চশিক্ষার পর বিভিন্ন চাকুরির পরীক্ষার জন্য ধরাবাঁধা কিছু অনুচ্ছেদ মুখস্থ করে পরীক্ষার প্রয়োজনে, সংবিধানকে জানার জন্যে না। সংবিধানে ২১ অনুচ্ছেদে বলি হয়েছে যে- নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য হল সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা। সংবিধান মান্য করার প্রশ্ন তখনই আসে যখন সংবিধান সর্ম্পকে ধারনা থাকবে, না জানলে তো আর মান্য করার প্রশ্ন আসে না ঐ ব্যাক্তির জন্যে। আমরা জানি রাষ্ট্রের ৩ টি অঙ্গ যেমন-নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ। এই ৩টি বিভাগ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন দ্বারা চলে যা হল সংবিধান।

সংবিধান কি? যদি সাধামাটা ভাবে বলি তাহলে বলা যায় যে রাস্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ কিভাবে চলবে সেই সম্পর্কে গাইডলাইন হল সংবিধান। আমাদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হলেও সংবিধান জানা দরকার। যেমন সংবিধানের ৩য় অধ্যায় জনগনের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৭-৪৪ পর্যন্ত বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে! রাষ্ট্র যে কোন মৌলিক অধিকার দিতে জনগনের কাছে বাধ্য এবং রাষ্ট্র যদি সেই অধিকার দিতে ব্যার্থ হয় সেক্ষেএে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা যাবে কিনা! সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়েরের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রের কাছ থেকে আদায় করে নেয়া জাবে। আইনে ভাষায় একটি কথা আছে যে আপনি আপনার অধিকার ছাড়িয়া দিলে অধিকার ও আপনার কাছ থেকে ছাড়িয়া যাবে।

 

এখন আসি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে। অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে যে ছোট বাচ্চারা আবার কিসের সংবিধান শিখবে। তবে ছোট বাচ্চা কিন্তু বড়দের দ্বারা প্রভাবিত হয় সব থেকে বেশি। সেই জন্যে ছোট বয়স থেকে সহজ ভাষায় ছোটদের উপযোগী করে বই সরকার থেকে সরবরাহ করা উচিত এবং মজার ছলে পড়ানো হলে ছোট বয়স থেকেই আইন মানতে এবং আইন সম্পর্কে জানতে সচেতন হবে। বর্তমানে আশারবানী এই যে ছোটখাট কিছু আইনি বিষয় ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম ক্লাসে পড়ানো হয়। অনেকেই বলতে পারেন ছোট শিশুদের আবার কিসের অধিকার! তবে এক্ষেত্রে আমার উত্তর যে, আমাদের দেশের মানুষের মস্তিষ্কের ভিতর আইন না মেনে চলার একটা প্রবনতা আছে। যদি শিশু বয়স থেকে এই ধরনে প্রবনতা দূর করতে পারা যায়, তবে আইন না মানার যে বিষয় সেটা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

 

এখন আসি কলেজ সম্পর্কে। যখন একজন ছেলে বা মেয়ে স্কুলের গন্ডি পার হয়ে কলেজে আসে তখন তার মধ্যে মানোষিক একধরনের পরিপক্কতা আসে এবং নতুন করে যখন আবার সংবিধান ও আইনি বিষয় পড়ে তখন সেই ছাত্র বা ছাত্রী অনেক বিষয় সহজে বুঝতে পারবে, কারন স্কুলে কিছুটা হলেও সংবিধান এবং আইনের ধারনা পেয়েছে। এতে করে ঐ ছাত্র বা ছাত্রীর আইনি সতেচনতা আর একটু বৃদ্ধি পায়। এরপর কলেজে যখন সংবিধান বা আইনের বিষয়গুলো আর একটু বিস্তারিত পড়বে তখন অনেক বিষয় তাদের জন্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে। যা তাদের পরবর্তী জীবনে আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। একদিন যেহেতু ছাত্র -ছাত্রীরাই দেশের হাল ধরবে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে সেহেতু শিশু বয়স থেকে অন্য বিষয়ের সাথে সাথে দেশের সংবিধান এবং ছোট ছোট আইনি বিষয় যতটা সম্ভব ধারনা দেয়া উচিত এতে করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে।

অনেকের মনে এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, ছোট খাট আইনি বিষয় বা আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলতে কি ইঙ্গিত করেছি? প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, তবে এর উত্তর যদি দেই সেক্ষেত্রে আমার ব্যাক্তিগত অভিমত-বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ট্রাফিক আইন, নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন, পাবলিক নুইসেন্স, যৌতুক নিরোধ আইন, পেনালকোড ইত্যাদি। তবে এর সাথে আর কিছু বিষয় যোগ করা যেতে পারে এবং সংবিধানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এক্ষেত্রে ৩টি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, আইনে ভাষা খুবই সহজ ভাবে ব্যাবহার করতে হবে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা সহজে বুঝতে পারে এবং কোন প্রকার দূর্বোধ্যতা সৃষ্টি না হয়। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আইনের খুটিনাটি এই বিষয়গুলো ধাপে ধাপে প্রতিটি ক্লাসে পড়াতে হবে। ৩য় বিষয় হলো বিভিন্ন আইনের সম্পূর্ন বিষয় কি পড়তে হবে? এর উত্তর অবশ্যই না, আইনের যে বিষয়টুকু না জানলেই নয়।

 

যারা মনে করেন আইন শুধু ছাত্র-ছাত্রী, আইনজীবী, বিচারকরা জানলেই চলবে তারা এই ধারনা পাল্টানোর চেষ্টা করলে রাস্ট্রের জন্যে আইন বাস্তবায়নের পথ সহজ হবে। কারন সামগ্রিকভাবে সামাজিক সচেতনতা ছাড়া আইন কার্যকর করা এবং সমাজ থেকে অন্যায় দূর করা দূরহ কাজ। তাই জীবনে চলার পথে ছোট খাট আইনি যে সব বিষয় জানা দরকার তা জানার চেষ্টা করার পাশাপাশি আইন শিখবার অন্যতম একটা মাধ্যম হতে পারে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায় আইনি খুটিনাটি বিষয় অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে।

মোঃ রেজা-উর রহমান রাজু,

আইন বিভাগ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)