ঘুরে আসুন বরগুনার শুভ সন্ধ্যায় জ্যোৎস্না উৎসবে

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১০:০২ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

শুভ সন্ধ্যা, জ্যোৎস্না উৎসব
বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর যেখানে সাগরে মিশেছে ঠিক সেখানে; নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের স্নিগ্ধ বেলাভূমি- ‘শুভসন্ধ্যার’ বিস্তীর্ণ বালুচরে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ডিসেম্বর।
একদিকে সীমাহীন সাগর; আরেকদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিড়ি। একদিকে দীর্ঘ ঝাউবন, তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা; আরেকদিকে সীমাহীন সাগর। সবমিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার- শুভ সন্ধ্যা সৈকত!
প্রেম পিয়াসীর অপেক্ষায় খোলা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউবন।তুমি আসবে তারই প্রতীক্ষায়। দক্ষিণের খোলা বাতাস ঝাউবন স্পর্শ করে যাচ্ছে পরম আবেশে। খোলা বাতাসের ছোঁয়ায় প্রেমিকার উড়ন্ত চুলের মতো দুলছে ঝাউগাছগুলো। জন্ম থেকেই সমুদ্রের খোলা বাতাস গায়ে মেখে ঝাউগাছগুলো এখন অনেক বড় হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ আর ঝাউগাছের মাঝখানে শূন্য বালুরাশি। এ যেন দৃষ্টিনন্দন এক সৈকত! সমুদ্রের মৃদু ঢেউ, বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ। এই প্রেমময় দৃশ্যপটের নাম- শুভ সন্ধ্যা।দক্ষিণে তাকালে অথৈ সাগরের ঢেউ আর ঢেউয়ের সাথ দোল খেল মাছ ধরার ট্রলার ব্যাতীত আর কিছুই দেখা যাবে না।
শহুরে সভ্যতায় হয়তো পেয়েছেন আপনি অনেক কিছু। কিন্তু হারিয়েছেন কী- কখনো কি ভেবে দেখেছেন! শ্রাবণের জলে সর্বাঙ্গ ভিজিয়েছেন কবে সর্বশেষ- মনে পড়ে!
শরত-শিশিরে নগ্ন পায়ে হেঁটেছেন কবে সেই স্মৃতি জানি ভুলেই গেছেন! মোম-জোছনায় চোখ-মন ভরানো হয় না কতকাল তা আপনার চেয়ে ভালো আর কে জানে! তাইতো এই আয়োজন, “জোছনা উৎসব”।
ত্রিমোহনার রূপালি জলরাশি ঘেঁষে বিস্তীর্ণ সৈকতে বসে হৈমন্তী পূর্ণিমা দেখে আপনি শিহরিত হবেনই। জোছনাপাগল হাজারো মানুষের সাথে গান, কবিতা, পুঁথি, জারি সারি শুনে/শুনিয়ে মুগ্ধ আপনাকে হতেই হবে।
আসছে পূর্ণিমায় এখানেই জলজোছনায় একাকার হবে জোছনাবিলাসী হাজারো মানুষ।
অভিজ্ঞতা আর স্মৃতিকে সমৃদ্ধ করতে প্রিয় স্বজনদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তালতলীর শুভসন্ধ্যা সৈকতে, বরগুনার জোছনা উৎসবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের স্নিগ্ধ বেলাভূমি ‘শুভ সন্ধ্যার’ বিস্তীর্ণ বালুচরে পঞ্চমবারের মত এ উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।
এ উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বরগুনার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ উৎসবে যোগ করা হয়েছে নানা আয়োজন। উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শুভ সন্ধ্যা সৈকতে শুরু হয়েছে বাহারি পণ্যের পসরা
সাজানোর প্রস্তুতি।
এখানে আসলে দেখা যাবে, সাগর পাড়ে সবুজের সমারোহে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও পাখির কুহুতান। মৃদু ঢেউয়ের ভালোবাসা পায়ে লাগিয়ে, স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে লাগিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে একেকটি গোধূলি সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার মুহূর্তটা কোনো পর্যটকের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রকৃতি প্রেমের এমন লোভে পড়ে গেলে এই স্বর্গে যেতে মন চাইবে বারবার।
শুধু সমুদ্র ভ্রমণ কিংবা সৈকতের বালুময় সৈকত দর্শনার্থীর মন ভরাবে তা নয়। সমুদ্রের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু দেখার সুযোগ মিলবে এখানে এলেই।
শুভ সন্ধ্যার পাশেই আশার চরের অবস্থান। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস এই চরে। আবার শীতের মৌসুমে পর্যটকরাও সেখানে যান। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, গভীর অরণ্য, বিশাল শুঁটকিপল্লী রয়েছে আশার চরে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরটিতে ঘর বাঁধে। বছরে সাত থেকে আট মাস থাকে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যস্ততা। তালতলী রাখাইন পল্লী আশার চরের কাছেই রয়েছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লী। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লী কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে।
আশারচরের শুঁটকি পল্লী, টেংরাগিড়ি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সোনাকাটা ইকোপার্কের হরিণসহ বন্যপ্রাণী ইত্যাদি দেখার পাশাপাশি দেখা মেলে মৎসজীবীদের কর্মব্যস্ততা আর সৈকতের বুকে স্থানীয় শিশুদের উচ্ছ্বাস। এখানে নদী সমুদ্রের তাজা মাছ পাওয়া যায় ফকিরহাট বাজারের ছোট ছোট খাবারের হোটেলগুলোতে, যা পর্যটকদের পেট ভরাবে। এখানে খুব অল্প টাকায় খাওয়া যাবে মাছ ভাত বা গ্রামীণ স্থানীয় সব খাবার। এই সৈকতটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নবীন বিবেচনায় খাবার ও মাছের দাম তুলনামূলক সস্তা।
যেভাবে যাবেনঃ
জোছনা উৎসবের জন্য নলবুনিয়া শুভসন্ধ্যা’র উদ্দেশে বরগুনা থেকে একাধিক লঞ্চ ছেড়ে যাবে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায়। কেবিন ভাড়া সিঙ্গেল-১,২০০/- ডাবল-২,০০০/- ডেক-৩০০/-(আসা-যাওয়া) বরগুনা থেকে “শুভ সন্ধ্যা” যেতে সময় লাগবে কমবেশি তিন ঘণ্টা।
বরগুনার নদী বন্দর (লঞ্চঘাট) থেকে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তালতলীর শুভসন্ধ্যা সৈকতের উদ্দেশ্যে দু’টি দ্বিতল লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
বরগুনা থেকে যারা যাবেন তারা লঞ্চের বুকিং দেয়ার জন্য (বাবুল লাল ঘোষ- নাজির, বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়- ০১৭১৪৯০৬৬৮১) এবং ( পলাশ লস্কর, অফিস সহকারী, সহকারী কমিশনার ভূমি এর কার্যালয় বরগুনা-০১৭৩৭৩৭৪৪২৪) এই দু’টি নম্বরে ফোন দিয়ে লঞ্চের কেবিন বুকিং দিতে পারেন।
ডাবল কেবিন ২০০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ১২০০ টাকা। ডেক ৩০০ টাকা। সিঙ্গেল, ডাবল কেবিন এবং ডেকের প্রতিজন যাত্রীর জন্য প্যাকেট লাঞ্চ সরবরাহ করা হবে।
জ্যোৎস্না উৎসবে
লঞ্চে কেবিন সংখ্যা একেবারেই সীমীত। কেবিন না পেলেও কোন সমস্যা নেই। সাথে মাদুর আর বিছানার চাদর আনলে আপনি কেবিনের চেয়ে অনেক বেশি সাচ্ছন্দে যেতে পারবেন। দল বেঁধে আড্ডা আর কোরাস গানের সাথে সাথে আপনি মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে পেঁছে যাবেন শুভসন্ধ্যার স্নিগ্ধ সৈকতে।
আমতলী লঞ্চঘাট থেকে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তালতলীর শুভসন্ধ্যা সৈকতের উদ্দেশ্যে একটি দ্বোতলা লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
আমতলী থেকে যারা যাবেন তারা লঞ্চ বুকিং দেয়ার জন্য (মোঃ মজিবুর রহমান, নাজির, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় আমতলী- ০১৭৯২২৫৩৫৮৬) এই নম্বরে ফোন দিয়ে লঞ্চের বুকিং দিতে পারেন।
ডাবল কেবিন ২০০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ১২০০ টাকা। ডেক ৩০০ টাকা। ডাবল কেবিন এবং ডেকের প্রতিজন যাত্রীর জন্য প্যাকেট লাঞ্চ সরবরাহ করা হবে।
লঞ্চে কেবিন সংখ্যা একেবারেই সীমীত। কেবিন না পেলেও কোন সমস্যা নেই। সাথে মাদুর আর বিছানার চাদর আনলে আপনি কেবিনের চেয়ে অনেক বেশি সাচ্ছন্দে যেতে পারবেন। দল বেঁধে আড্ডা আর কোরাস গানের সাথে সাথে আপনি মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে পেঁছে যাবেন শুভসন্ধ্যার স্নিগ্ধ সৈকতে।
এছাড়া পাথরঘাটা থেকে যারা যাবেন তারা লঞ্চ_বুকিং দেয়ার জন্য পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির আব্দুল্লাহ আল মামুন- (০১৭১৪৭২৭৯২৩) এর সাথে যোগাযোগ করবেন।
লঞ্চ শুভসন্ধ্যায় ভেড়ার পর আর কেউ লঞ্চে অবস্থান করতে পারবেন না। লঞ্চ নদীর মাঝখানে চলে যাবে। সুতরাং অতটাকা কেবিন ভাড়া দিয়ে কেবিনে যাওয়ার চেয়ে সাধারণ আসনের টিকেট কেটে দল বেঁধে ডেকে যাওয়াটাই হবে অনেক বেশি আরাম দায়ক বলে মনে করছেন অধিকাংশ জোছনা সারথীরা।
বরগুনা থেকে যারা লঞ্চ মিস করবেন তারা কীভাবে যাবেন?
১. সড়কপথে বাস/মটরবাইকে গোলবুনিয়া, চালতাতলী, লতাকাটা হয়ে ট্রলারযোগে তালতলী।
২. তালতলী থেকে ভাড়ায় চালিত মটরবাইকে নলবুনিয়া “শুভসন্ধ্যা” সৈকত (ভাড়া জনপ্রতি ৫০/-টাকা)
পটুয়াখালী থেকে কীভাবে যাবেন?
১. বাসযোগে সরাসরি তালতলী (ভাড়া-১৫০/-)
২. তালতলী থেকে মটরবাইকে নলবুনিয়া “শুভ সন্ধ্যা” সৈকত (ভাড়া জনপ্রতি-৫০/-)
বরিশাল থেকে কীভাবে যাবেন?
১. রূপাতলী স্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে সরাসরি তালতলী (ভাড়া-২০০/-)
২. তালতলী থেকে মটরবাইকে নলবুনিয়া “শুভসন্ধ্যা” সৈকত (ভাড়া জনপ্রতি -৫০/-)
ঢাকা থেকে কীভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বরগুনার উদ্দেশ্যে সকালে এবং বিকেলে বাস ছেড়ে আসে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। তাছাড়া ঢাকা সদরঘাটা থেকে প্রতিদিন বিকেল ৫টায় এবং ছয়টায় দু’টি দোতলা লঞ্চ ছেড়ে আসে। ভাড়া ডেক ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ২২০০ টাকা।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)