ধনী গরীব বৈষম্যকে সামনে নিয়ে আসছে অনলাইন ক্লাশ: শারলিন আক্তার
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাশের সিদ্ধান্ত নতুন করে ধনী গরীব বৈষম্যকে সামনে নিয়ে আসছে না তো! ইদানিং একটা সংবাদ ঘুরে ফিরে চোখের সামনে আসছে সেটা হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাশ শুরু করতে যাচ্ছে। দেশের এরকম পরিস্থিতিতে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই সিদ্ধান্ত আমার কাছে সত্যিই অবাক লেগেছে। আমি পুর্নবিবেচনা করে দেখতে অনুরোধ জানাতে চাই সেইসব নীতি নির্ধারকদের যাদের মাথা থেকে এই সিদ্ধান্ত গুলো বের হয়েছে। একই সাথে আহ্বান জানাই সেইসব শিক্ষকদেরকে এই বিষয়ে বাস্তবতার নিরিখে কিছু ভাবার জন্য যারা বিভিন্ন সময় নীতিবাক্যে দেশ ভাসিয়ে দিলেও দেশের এই রকম পরিস্থিতে মুখে কুলপ এঁটে বসে আছেন। এই সিদ্ধান্তটা মোবাইল কোম্পানিগুলোর আয়ের আরেকটা পথ উন্মোচন করে দেওয়া নয়তো আবার। কেননা এই অনলাইন ক্লাশে যদি সত্যিকার অর্থে কারও উপকার হয় সেটা হল মোবাইল কোম্পানি গুলোর। কেননা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এমন একটা যায়গা যেখানে সব শ্রেণীর বাবা মায়ের সন্তানেরা পড়াশুনা করেন। এখানের বেশীরভাগ ছাত্ররাই টিউশন করিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে থাকে। আমার জানা মতে কেউ কেউ আবার তাদের এই টিউশনির টাকার একটা অংশ বাড়িতে বাবা মাকেও পাঠিয়ে থাকেন আর সেই টাকায় তাদের পরিবার চলে। আর বর্তমানে তাদের আয়ের পথ পুরোটাই বন্ধ রয়েছে। এইসব ছাত্রদের কথা চিন্তা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা যেখানে ছাত্রদেরকে পরিচয় গোপন রেখে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করছেন সেখানে এরকম সিদ্ধান্ত এক ধরনের রসিকতা নয় কি। কর্তৃপক্ষ কিভাবে নিশ্চিত হল যে সকল ছাত্রের অনলাইন ক্লাশের সুযোগ রয়েছে যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের এখনও অনেক যায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কই ভালভাবে কাজ করেনা, নাকি তারা তাদেরই দলে যারা বাংলাদেশকে এখন কানাডা কিংবা সিঙ্গাপুরের মত ভাবেন।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনা থেকে অনলাইন ক্লাশের সূত্রপাত করেছেন, সুতরাং সেখানে আমার কিছু বলার নেই কেননা তাদের অন্যতম ফোকাস হচ্ছে ব্যবসা করা। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের এরকম পরিস্থিতে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরেকটু ভাবা উচিৎ ছিল। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার প্রথম ও প্রধান হচ্ছে খাদ্য সেই খাদ্যই যেখানে আমরা মানুষের নিশ্চিত করতে পারছিনা সেখানে শিক্ষা নিয়ে ভাবার এখন সময় কোথায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এরকম সিদ্ধান্ত আবার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ওলটপালট করে দিবেনা তো। কারণ এই সিদ্ধান্ত তো ছাত্রদের মধ্যে ধনী গরীব বৈষম্যকে আবার নতুন করে সামনে নিয়ে আসছে।
তাই সত্যিই যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের এই পরিস্থিতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে তাদের এমন কোন উপায় বের করতে হবে যাতে সকল ছাত্রের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে আমার মনেহয় সবচেয়ে ভাল বিকল্প হতে পারে কোন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ক্লাসগুলো সম্প্রচার করা যেটা ইতিমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে করা হচ্ছে।
লেখকঃ শারলিন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন গরীব ছাত্রী যার এলাকায় এখনও মোবাইল নেটওয়ার্ক ভালভাবে কাজ করেনা।