পাথরঘাটার নিসর্গভূমি বিষখালীর পাড়ের ‘নীলিমা পয়েন্ট’

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

ছবিঃ পাথরঘাটা নিউজএখানটায় বিষখালীর জলধারা বিলীন হয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। নদীর বাঁধের পারে দাঁড়ালে যতদূর চোখ যায়—গহিন জলরাশি ছুঁই ছুঁই সুনীল আভা ছড়ানো আকাশে শোভন মেঘের ধীর লয়ের মিছিল। নদীতীরের চরে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। চরভূমিতে জোয়ারের জলে দোদুল্যমানতায় ভেসে থাকে দৃষ্টি সুখকর সবুজ প্রকৃতি। সাগরের জলরাশি ছুঁয়ে এসে শরীরের প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় নির্মল বাতাস। বিকেল নামলে দর্শনার্থীদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে বাঁধের পারের চরাঞ্চল। সৌন্দর্যপিপাসুরা দিগন্তবিস্তৃত উদার প্রকৃতির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিমোহিত আবেশে প্রায় যেন হারিয়ে যায় আকাশের নীলিমায়।

বরগুনার উপকূলীয় পাথরঘাটা পৌর শহরের দক্ষিণ অংশের বিষখালী নদীতীরের শহর রক্ষা বাঁধ ও তার আশপাশের এলাকা এখন পর্যটন সম্ভাবনায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছে দিন দিন। সুনীল আকাশ আর বিশাল জলরাশি এখানে মিলেমিশে একাকার যেন—আর তাই এ স্থানের নামকরণ করা হয়েছে ‘নীলিমা পয়েন্ট’। বরগুনা জেলা প্রশাসন পর্যটন সম্ভাবনার দিকটি মাথায় রেখে আগামী শুক্রবার নীলিমা পয়েন্ট নামের এই চিত্তকর্ষক পর্যটন স্পটটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়েছে।

পাথরঘাটা পৌর শহরের দক্ষিণে ২ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে বিষখালী নদীর তীরে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি মেরামত করা হচ্ছে, সুরক্ষার জন্য স্থাপন করা হচ্ছে কংক্রিট ব্লক। এখনো ব্লক বসানোর কাজ অসম্পূর্ণ। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনা। সব সময় থাকে মৃদুমন্দ বাতাস। সব সময় কানে প্রশান্তির পরশ বোলায় নদীর বহমান পানির ছন্দ। নৌকায় জেলেদের আনাগোনায় গোধূলীতে নীল আকাশ মিতালি করে বিষখালীর পূর্ব তীরের সবুজ-শ্যামল গাছগাছালির সঙ্গে। বাঁধে নির্মিত ব্লকে বসে সন্ধ্যায় দেখা যায় পূর্ব দিক থেকে চাঁদ ওঠার দৃশ্য। চাঁদের আলো পড়ে শান্ত নদীতে এক অপার্থিব নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

দুপুরের সূর্য ক্রমে পশ্চিমে হেলে পড়লে এখানে এক-দুজন করে শুরু হয় লোকসমাগম। নির্মল প্রকৃতির পরশে অবসর-বিনোদনে মশগুল লোকজন এখানে অবস্থান করে রাত অবধি। দৈনন্দিন কাজের চাপে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শহুরে মানুষগুলো কোলাহলমুক্ত এই পরিবেশে কংক্রিটের ব্লকের ওপরে বসে থেকেও খুঁজে প্রশান্তির পরশ। এখানে এসে তাদের হয়তো মনে পড়ে নিজ ঘরে দখিনের জানালা খুলে বসে থাকার কথা।

শহরের ঈমান আলী সড়কের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে বেড়িবাঁধটি যেখানে শেষ হয়েছে, তার নাম স্থানীয়ভাবে পুতাভাঙ্গা, কোথাও আবার মুতানিয়া বলে পরিচিত। এ ছাড়া সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বাঁধটি বারবার ভেঙে যায় বলে অনেকের কাছে এলাকাটি ‘ভাঙন’ নামেও পরিচিত। স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, একসময় সুন্দরবনগামী বাওয়ালিরা বিষখালীর তীরে তাঁদের নৌকা নোঙর করত। জীবিকার তাগিদে বিপদসংকুল সুন্দরবন অভিযানে যাওয়া-আসার কালে বাওয়ালিরা এই এলাকাকে নিজেদের পছন্দমতো নামে নামকরণ করলেও কাগজপত্রে এসবের কোনো তথ্য নেই। লোকমুখে প্রচলিত সেই নামগুলোও অনেকের কাছেই তেমন শোভনীয় নয় বিধায় এখন এর নামকরণ করা হয়েছে নীলিমা পয়েন্ট।

পাথরঘাটা কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নৃপেন্দ্র নাথ সাধক বলেন, শহরের দক্ষিণ অংশে সমৃদ্ধ বিষখালী নদী যা গিয়ে মিশেছে সাগর মোহনায়। এখানকার প্রকৃতি ও বহমান বাতাস মনে প্রশান্তি এনে দেয়। নদীতীরের সুউচ্চ ঢাল বেয়ে চরভূমিতে ছড়িয়ে আছে নানা বৃক্ষ। বাঁধ থেকে যত দূর চোখ যায় বিশাল জলরাশি আর সুনীল শোভন নীলাকাশ। এর নীলিমা পয়েন্ট নামকরণ যথার্থ। যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়ন ঘটাতে পারলে এখানে পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পাথরঘাটা পর্যটন সম্ভাবনাময় উপজেলা। শহরের মানুষের সময় কাটানোর জন্য ভালো স্থান নীলিমা পয়েন্ট। এর উন্নয়ন আবশ্যক।’ উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, ‘নীলিমা পয়েন্টকে শহরের উৎকৃষ্ট আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘নীলিমা পয়েন্ট স্থানটি মনোরম। পর্যটন সম্ভাবনা হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর উন্নয়নে শিগগির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)