রিফাত হত্যার ঘটনায় যেভাবে ফেসে গেলেন স্ত্রী মিন্নি

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৭:৩৬ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ছবিঃ পাথরঘাটা নিউজক্যামেরায় খুব স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, রিফাত হত্যার দিন স্বামিকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন আয়শা আক্তার মিন্নি। অথচ সেই মিন্নিই কিনা এখন ফাঁসির আসামি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন কি এর নেপথ্য?

বুধবার আদালতে রিফাত হত্যা মামলার রায়ের পর্যপেক্ষণে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ভূবন চন্দ্র হালদার বলেছেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডটি জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় আয়শা যুক্ত ছিলেন। ঘটনার সময় আয়শা তার স্বামীকে রক্ষার করতে গিয়েছেন, এটা সিম্পেথি আদায়ের কৌশল ছিল বলে প্রতীয়মান। আয়শা তার স্বামী রিফাতকে কোপানোর সময় রিফাতকে রক্ষার চেয়ে নয়ন বন্ডকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রতীয়মান।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক বলেন, মামলায় বিচারক তার পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, আয়শার পরিকল্পনায় এবং তার কারণেই এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এতে বলা বলা হয়েছে, হত্যার আগে আয়শা মামলার মূল আসামি নয়ন বন্ডের সাথে এক মাসে ৪৪ বার এবং নয়ন বন্ড আয়শার সাথে ১৬ বার ফোনে কথা বলেছেন। এ ছাড়া অসংখ্যবার ম্যাসেজ চালাচালি করেছেন।

গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রী আয়শার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা ঘটনার পর ২৭ জুন এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে প্রধান সাক্ষী করা হয় আয়শাকে। মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার পরপরই বদলে যেতে থাকে মামলার দৃশ্যপট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই হত্যায় আয়শাকে দায়ী করে বিভিন্নভাবে প্রচার শুরু হয়। মামলার ১৮ দিন পর ১৩ জুলাই এ হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত, এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন আয়শার শ্বশুর আবদুল হালিম শরীফ। পরদিন আয়শার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তারা।

এরপর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। ১৬ জুলাই আয়শাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনসে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আয়শার বাবা মোজ্জামেল হোসেন শুরু থেকেই আয়শার গ্রেপ্তার এবং এ মামলায় তাকে আসামি করার ঘটনাকে প্রভাবশালী মহলের কারসাজি বলে দাবি করে আসছেন। এরপর নিম্ন আদালতে কয়েক দফা জামিন আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আয়শার পক্ষে জামিন আবেদন করেন উচ্চ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আইখান পান্না। গত বছরের ২৯ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আয়শাকে জামিন দেন।

পরে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আয়শাই রক্তাক্ত রিফাত শরীফকে রিকশায় করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। বরগুনা জেনারেল হাসপতালের সামনে লাগানো সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গত ২৬ জুন সকাল ১০টা ২১ মিনিটে আয়শা একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে রক্তাক্ত ও অচেতন রিফাতকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যান। সেখানে দাঁড়ানো এক যুবক রিফাত শরীফকে বহন করা রিকশার দিকে দৌড়ে আসেন। রিফাতের অবস্থা দেখে তিনি হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিকশার পাশে আসেন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই এগিয়ে আসেন। এরপর রিকশা থেকে নামিয়ে অচেতন রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। এরপর আয়শা হাসপাতালের সামনে উপস্থিত একজনের ফোন নিয়ে কারো সাথে কথা বলেন। এরপর তিনি হাসপাতালের ভেতরে যান। কিছু সময় পর আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন ও চাচা আবু সালেহ হাসপাতালে যান। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে।

এ সময় সেখানে রিফাত শরীফের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম ওরফে জন ও তার কয়েকজন বন্ধু হাসপাতালের সামনে আসেন। মঞ্জুরুল বেশ কিছু সময় ফোনে কথা বলেন। ১০টা ৪৪ মিনিটে অক্সিজেন ও ২টি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে ওই অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। ১০টা ৪৯ মিনিটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে অ্যাম্বুলেন্সটি।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)