রিফাত হত্যার ৩ বছর, আজও থামছে না মায়ের কান্না

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ২৬ জুন ২০২১

ছবিঃ সংগ্রহীতশাহনেওয়াজ শরীফ ওরফে রিফাত শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু দুই বছর আগে সন্তানকে হারিয়ে সবকিছু যেন চুরমার হয়ে গেল। আর সেদিন থেকেই চোখের অশ্রু ঝরছে রিফাতের মা ডেইজি বেগমের। বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তার ফেলে যাওয়া স্মৃতি। ছেলের শোকে এখন শয্যাশায়ী মা।

আজ ২৬ জুন বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর হলো। ২০১৯ সালের এ দিনে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে তারই স্কুলজীবনের বন্ধু সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ও তার সঙ্গীরা।

রিফাতকে কবর দেওয়া হয় বাড়ির দরজায়। প্রতিদিন সকাল-বিকেল ছেলের কবরের সামনে গিয়ে মা প্রার্থনা করেন- রিফাতকে আল্লাহ যেন জান্নাতবাসী করেন। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সকালেও ছেলের কবরের সামনে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ডেইজি বেগম।

আলোচিত এ হত্যা মামলায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। অপরদিকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়ায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিনি বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, রিফাত আমার একমাত্র ছেলে ছিল। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সুখের সংসার ছিল। মিন্নির কারণে আমার সেই সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। আমাদের ছেলে হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যকর হলে হয়তো কিছুটা সান্ত্বনা পাব। আদালত খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন এ মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হয়।

রিফাতের বোন ইসরাত জাহান মৌ বলেন, ভাইয়াকে আর ফিরে পাব না। তবে তার খুনিদের রায় হলে আমরা একটু সান্ত্বনা পাবো। স্বস্তি পাবেন আমার মা।

মামলার বিচার কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ আমিন উদ্দিন বলেন, করোনার কারণে সব মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই রিফাত হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুত শুনানি হয় সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নেব।

ঘটনার দিন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে কিশোর গ্যাং ‘বন্ড বাহিনী’। এরপর বিকেলেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রিফাতকে কুপিয়ে জখমের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

এ ঘটনায় ১২ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। এতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল। এরপর আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিও দেখে মিন্নির বাবার বিরুদ্ধেও মামলা করার কথা জানান রিফাতের বাবা।

একপর্যায়ে মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে ১৬ জুলাই রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে স্বামী হত্যায় ফেঁসে যান মিন্নি। পরদিন তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দুদিন পরে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন।

একই বছরের ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা হয়। এ মামলায় মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। আর বাকি চারজনকে খালাস দেওয়া হয়।

একই বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের ছয়জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় শিশু আদালত। এছাড়া চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিনি বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়। পরে নিম্ন আদালতের এ রায়ের পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দণ্ডিতরা। তবে করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় এ মামলার বিচার কার্যক্রম থমকে আছে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)