পাথরঘাটাতে ‘সূর্যডিম’ বিক্রির টাকায় চলছে এতিমখানা লিল্লাহ বোর্ডিং

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ১ জুলাই ২০২১

সূর্যডিম

‘সূর্যডিম’। সবুজ, বেগুনি আর গাঢ় লাল রঙের মিশ্রণে আমটি দেখতে অনন্য সুন্দর। দেখা মাত্রই দৃষ্টি কাড়বে। বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামি আম। যা ‘সূর্যডিম’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। এ আম জাপানে ‘মিয়াজাকি’ নামে খ্যাত। রেড ম্যাঙ্গো বা এগস অফ সান নামেও পরিচিত। বিশ্ববাজারে দামি এ আম বরগুনার পাথরঘাটায় চাষ শুরু করেছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র মরহুম মল্লিক মোহাম্মদ আইয়ুব।

উপকূলীয় পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাতেমপুর গ্রামে এ আমের প্রথম চারা রোপণ করেছেন মল্লিক মোহাম্মদ আইয়ুব। যিনি গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালিস্ট হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মৃত্যুর তিন বছর পূর্বে সরুপকাঠীর ছারছীনা নার্চারি থেকে এ জাতের আম চারা সংগ্রহ করে তার খামার বাড়িতে চাষ করেন। মল্লিক মোহাম্মদ আইয়ুব কর্তৃক তাইফাইন্ড ট্রাষ্টে ওয়াকফকৃত ২০ একর জমির খামার বাড়িতে এর আগেও আম রুপালি, ফজলি, হিম সাগর, ব্রুনাই, লেংরা সহ ১৮ প্রজাতির আমের চাষ করেছেন।

প্রত্যেক প্রজাতির আমের গাছে ভালো ফলন হয় আসছে। তবে করোনা মহামারীতে ভালো দামে বিক্রি করতে পারেননি বলে জানান তাইফান্ড ট্রাষ্টের বোর্ড সদস্য আব্দুর রহিম। বাগানের প্রতিটি গাছেই ৫০-৬০টি আম ধরেছে। মুলত যারা ক্যামিকেল মুক্ত আম খায় সে সকল সৌখিন আমভক্তরাই এই বাগান থেকে আম কিনছেন বলে জানান তিনি। প্রতিবছর এ বাগান থেকে ৪-৫ লাখ টাকার আম বিক্রি হলেও করোনার কারনে এবছর বিক্রি হয়েছে মাত্র দেড় লাখ টাকা।

আব্দুর রহিম আরো জানান, শখের বসে প্রয়াত মল্লিক মোহাম্মদ আইয়ুব তার ওয়াকফ কৃত খামার বাড়িতে আম চাষের পাশাপাশি দেশীয় ৩২ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলেন। এসকল ফল বিক্রি করে হাফেজিয়া মাদ্রাসা ইয়াতিম খানা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন তিনি। এছাড়াও সিজনাল শাকসবজি থেকে বছরের সারামাসের খাবারের জোগান দিয়ে আসছে নিজ বাড়ির আমিরাবাদ এতিমখানা লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের।

পাথরঘাটা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব প্রফেসর মাওলানা গোলাম কিবরিয়া জানান, পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে কর্মে। তেমনি মরহুম মল্লিক মোহাম্মদ আইয়ুব তার কর্মের ফল মৃত্যুর পরও ভোগ করতেছেন। কেননা তিনি তার সকল সম্পত্তি তাইফান্ড ট্রাষ্টে ওয়াকফ করে দিয়ে ট্রাষ্টের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির ফল গাছ লাগিয়ে তার আয়ের সবটুকুই ধর্মীয় কাজে ব্যায় করে দিচ্ছে। এর সওয়াব তিনি সদগাহ হিসেবে পেতে থাকবেন।

পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল জানান, মল্লিক মোহাম্মদ আইয়ুবের খামার বাড়ি ঘুরে দেখেছি। তিনি একজন রুচিশীল মানুষ ছিলেন। নানা প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে তার বাগানে। এর মধ্যে সূর্যডিম আমে বাগান নজর কেড়েছে সকলের। আমরা মনে করছি এ এলাকার সমতল ভূমিতে সূর্যডিম আম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সূর্যডিম নয় বিদেশি উন্নত জাতের নানা প্রজাতির আম চাষও সম্ভব এ উপজেলার সমতল ভূমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এসব আম চাষে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)