থোকায় থোকায় ঝুলছে কেওড়া ফল, সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠতে পারে নতুন শিল্প!

আল আমিন ফোরকান
আল আমিন ফোরকান,
প্রকাশিত: ০৯:৪১ এএম, ৩ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৪ এএম, ৩ আগস্ট ২০২১

---বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিশখালী নদীর তীরে বৃক্ষরাজির মধ্যে বেশিরভাগই কেওড়া গাছ। উপকূলীয় এলাকায় এই ম্যানগ্রোভ গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। এ গাছের আসল নাম সোন্নেরাতিয়া আপিতালা (Sonneratia Apetala)। বনাঞ্চলের উঁচু গাছ হিসেবে এগুলো পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা করে, তেমনি উপকূলকে ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচাতেও রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।

লবণসহিষ্ণু এ গাছে বছরের জুন থেকে অক্টোবর মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে টক জাতীয় এক ধরনের ফল ধরে। ফলটি উপকূলবাসীর কাছে কেওড়া ফল নামে পরিচিত। বিভিন্ন বন্য প্রাণীর বিশেষ করে বানরের প্রিয় খাবার এটি। শুধু বন্য প্রাণীর কাছেই নয়, এখানকার মানুষের কাছেও ফলটি অতি জনপ্রিয়।

সরেজমিনে কয়েকটি কেওড়া বন ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ গাছেই এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে কেওড়া ফল। ফলটি সবুজ রঙের এবং প্রায় গোলাকৃতির। প্রত্যেকটি ফলের ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। ভেতরে বেশ বড় বিচি। একেকটি বিচিতে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫টি।

বন্য প্রাণীর পাশাপাশি মানুষও উপকারী হিসেবে এ ফল নানাভাবে খেয়ে থাকে। ফলটির ওপরের সবুজ রঙের মাংসল অংশটুকু টক স্বাদের। টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় কাঁচা ফল লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া সিদ্ধ করে, তরকারি রান্না করে, ডালের সাথে রেঁধে, টক রেঁধে, বিভিন্ন স্বাদের আচার ও চাটনি তৈরিসহ নানাভাবে খাওয়া যায় এটি। তাছাড়া মাছের খাবার হিসেবেও পঁচা কেওড়া ব্যবহার করা যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কেওড়া ফলে প্রায় ১২ শতাংশ শর্করা, ৪ শতাংশ আমিষ, ১.৫ শতাংশ ফ্যাট, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন; বিশেষত ভিটামিন সি এবং এর ডেরিভেটিভ রয়েছে।

এছাড়া এ ফল পলিফেনল, ফ্লাভানয়েড, অ্যান্থোসায়ানিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আনস্যাচুরেটেড ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড, বিশেষ করে লিনোলেয়িক অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। ফলটিতে চায়ের মতো ক্যাটেকিনসহ বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আমাদের দেশে প্রাপ্ত ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিফেনল রয়েছে আমলকিতে, তারপরই কেওড়া ফলের অবস্থান। পলিফেনল শরীরে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, আর্থারাইটিস, হৃদরোগ, এলার্জি, চোখের ছানি এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহসহ প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিতে বাঁধা প্রদান করে।

ফলটিতে আমলকি, আপেল ও কমলার তুলনায় বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক রয়েছে। এ ফলের রয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটের পীড়ার জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াকে দমনের এক কার্যকরী ক্ষমতা। তাছাড়া ফলটিতে প্রচুর পরিমাণ পালমিটিক অ্যাসিড, অ্যাস্করবাইল পালমিটেট ও স্টিয়ারিক অ্যাসিড রয়েছে; যা খাদ্যশিল্পে খাদ্য পক্রিয়াকরণে এবং তৈরি খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)