বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলন বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান কিছু অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্খিত বিষয় নিয়ে কথা

নোমান আল সাকিব
নোমান আল সাকিব, ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ০৩:২৬ এএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮

---
যেহেতু সম্মেলন অতি নিকটে তাই প্রত্যেক কর্মীর নিজের পছন্দের মানুষ আছে, যাকে সে নেতা হিসেবে দেখতে চায়! রাজনীতির মাঠের ডিজিটাল সংস্করণ ফেসবুকসহ জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলোতে পছন্দের ভাইকে নিয়ে প্রচুর প্রচার-প্রচারণা! সভাপতি চাই/ সেক্রেটারি চাই/ মূল নেতৃত্বে দেখতে চাই……ইত্যাদি ইত্যাদি!

যাই হোক, সম্মেলন হয়ে যাবে দেখতে দেখতে।কারো পছন্দের ভাই নেতা হবে, বাকিরা নিরাশ হবে! কেউ কেউ আনন্দে ভাসবে,হতাশায় কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে দিবে!কেউ সভাপতিকে মেইন্টেইন করবে,কেউ বা সেক্রেটারিকে! “কার রাজনীতি করো?” এমন প্রশ্নের উত্তর আসবে সভাপতির রাজনীতি করি অথবা সেক্রেটারির রাজনীতি করি।কিন্তু বলবে না বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি,শেখ হাসিনার রাজনীতি, ছাত্রলীগের রাজনীতি।

সম্মেলনের পরে পোস্টার/ব্যানার/ফেস্টুনে ছেয়ে যাবে অলিগলি। পোস্টারে সভাপতি/সেক্রেটারি দুজনের ছবি না দিয়ে শুধু নিজ নিজ পছন্দের ভাই/নেতার ছবি দেয়া হবে।

ফেসবুকে শুরু হবে ঝড়! এক দিনেই দুই নেতার ফেসবুক ফলোয়ার বেড়ে যাবে লাখখানেক।নেতা যে স্ট্যাটাস-ই দিবে তাতে লাইক/কমেন্ট/শেয়ারের বন্যা বয়ে যাবে! প্রিয় ভাই, প্রিয় নেতা, রাজনৈতিক অভিভাবক, রাজনীতির জন্মদাতা এমন অসংখ্য তেল মিশ্রিত কমেন্ট আর মেনশনে ধন্য হবে ফেসবুক! নেতাদের সংস্পর্শে একান্ত কাছের কয়েকজন থাকবে যাদের কাজ হলো ফ্যান-ফলোয়ার বাড়লো কিনা, লাইক/কমেন্ট বাড়লো কিনা এগুলো তদারকি করা।

যে এলাকা থেকে নেতা আসবে সেই এলাকার বিড়ালও বাঘের বেশে চলাফেরা শুরু করবে।নেতাদের চারিদিক পরিবেষ্টিত হবে কিছু নব্য-আগন্তুক যাদের রাজনীতির বয়স মাত্র কয়েক মাস কিন্তু ভাবখানা থাকবে এমন যেনো ১০-২০ বছর রাজনীতি করে এমন অবস্থাণে এসেছে।সত্যিকারের আদর্শিক কর্মীরা, রাজপথের কর্মীরা নেতাদের কাছে যাবার অথবা মন খুলে দুই মিনিট নেতার সাথে কথা বলার স্কোপ পাবে না। ভাইলীগের উত্থাণ ঘটবে জোরেশোরে! বক্তব্য/বিবৃতিতে নেতারা বলবেন আমরা তেলবাজি পছন্দ করি না, ভাইলীগ করা যাবে না,কিন্তু তৈল মর্দন কারীকেই তারা বেশি প্রায়োরিটি দিবেন,ভাইলীগ করা ভাইয়াকেই বেশি ভালোবাসবেন।

নব-নির্বাচিত সভাপতি/সেক্রেটারি নিজ নিজ অনুসারী কর্মীদের ফ্লোর দিবেন, যারা তার সম্মেলনের সময় শক্ত ক্যান্ডিডেট ছিল, তাদের দমিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন! নেতাদের অনুসারী কর্মীরা পদবঞ্চিত বড় ভাইদের সাথে এবং তাদের অনুসারীদের সাথে শিখিয়ে দেওয়া স্টাইলে বেয়াদবি করবে, যাতে তাঁরা মধুর ক্যান্টিনে কিংবা রাজনৈতিক প্রোগ্রামে আসা বন্ধ করে দেয়!

এভাবে কিছুদিন যাবার পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য সিভি চেয়ে নির্দেশনা আসবে। সাথে সাথে ভীড় বাড়বে রাজনৈতিক অঙ্গণে।উপচে পড়া ভীড়ের এই স্রোত থাকবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ দিতে বড় বড় নেতাদের সুপারিশ আসতে শুরু করবে। ছোট নেতা, মাঝারি নেতা, বড় নেতা, জাতীয় নেতা এমনকি আন্তর্জাতিক নেতাদেরও থাকবে অসংখ্য সুপারিশ! লবিং/তদবির শুরু হয়ে যাবে! বাসাকেন্দ্রিক/চেম্বারকেন্দ্রিক রাজনীতি আরো সরগরম হবে। কম রাজনীতি করে, রাজপথে না থেকে, এমনকি একদিনও রাজনীতি না করেও ভাইদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে,সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে বড় বড় পদ দখল করবে অনেকেই মানে অধিকাংশ-ই। ত্যাগীরা হবে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত।কারণ রাজপথের কর্মীরা যে তৈল মর্দনে পিছিয়ে! ভাইলীগ যারা করবে তারা পদ পাবে,আর যারা সম্মেলনকালীন নেতাদের বাইরে অন্য কোনো ভাইকে সাপোর্ট দিয়েছিল, দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পরেও তারা পদবঞ্চিত হবে।যারা প্রার্থী ছিল কিন্তু নেতা হতে পারে নি তারাও অনেকেই পদবঞ্চিত হবে। সুবিধাবাদীদের আনাগোণা থাকবে রাজনীতির মাঠজুড়ে!

পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরে হঠাৎ করেই চিত্রটা পাল্টে যেতে শুরু করবে। পদ নিয়ে অনেকেই গুহাবাসী মানবে পরিণত হবে। বিশেষ করে সুপারিশে পদপ্রাপ্ত এবং রাজনীতি না করে পদ পাওয়া নেতাদের মিছিল/মিটিং য়ে পাওয়া যাবে না! আবার একাংশ যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছে, মাঠের কর্মী তারা পদ না পাওয়ায় কিংবা কাঙ্খিত পদের স্থলে ছোট পদ পাওয়ায় তারাও অনেকেই মাঠ থেকে বিদায় নিবে। কিছু নিবেদিত প্রাণ, রাজনীতি পাগল নেতা-কর্মী তখনও মিছিল/মিটিংয়ে সক্রিয় থাকবে।

এভাবে ধীরে ধীরে সময় বয়ে যাবে,গঠণতন্ত্র আর পারিপার্শিক চাপে আবার সম্মেলনের আবহাওয়া তৈরি হবে! আবার নিজের ভাইকে নিয়ে প্রচারণা,, সম্মেলন, নতুন নেতৃত্ব,………..!

চক্রাকারে ঘুরছে রাজনীতি’র চক্র!

শুধু সেন্ট্রাল নয়, যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়/জেলা/উপজেলা ইউনিটের চিত্র এটা!!! এমন রাজনীতি কি আমাদের কাঙ্খিত ছিল? রাজনীতি কি আসলেই এমন হওয়া উচিত ছিল??

★নিজস্ব মতামত: আমি একজন ছাত্রলীগ কর্মী। সামনে ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনে যে দুজন-ই নেতৃত্বে আসুক না কেনো,তারা দুজনেই আমার নেতা।কারণ- জননেত্রী শেখ হাসিনার ম্যান্ডেড নিয়েই তারা নেতৃত্বে আসবেন।যেহেতু নেত্রী তাঁদের অনুমোদন দিবেন, তাই ছাত্রলীগ করতে চাইলে তাঁদের নেতা মানতে আমি-আমরা বাধ্য।

দীর্ঘদিনের রাজপথের ত্যাগী,পরিশ্রমী, কর্মীবান্ধব, মুজিব আদর্শ লালনকারী, শেখ হাসিনাপ্রেমী দুজন যোগ্য নেতৃত্ব আসুক,যাদের নেতৃত্বে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে, আগামী নির্বাচনে আবারো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসবে এবং ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে আবির্ভূত হবে বাংলাদেশ এমনটাই প্রত্যাশা….!

২৯ তম জাতীয় সম্মেলন সফল হোক
জয়তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

লেখক: ইমরান খান নাহিদ
সাংগঠনিক সম্পাদক,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

এন এ এস/পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)