গৌতম ঘোষের সামনে যেতে পারাই আমার বড় প্রাপ্তি:কুসুম শিকদার

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০২:৫৪ এএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ০২:৫৫ এএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮

কুসুম শিকদার
অনলাইনে আলাপনঃ সাথে ছিলেন বড় পর্দার প্রিয়মুখ অভিনেত্রী কুসুম শিকদার। ২০১০ সালে ‘গহীনে শব্দ’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক। শুরু থেকেই অভিনেত্রী হিসেবে প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। এরপর করেছেন ‘লাল টিপ’। এ ছবিটিও বেশ প্রশংসা অর্জন করে। সর্বশেষ তিনি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘শঙ্খচিল’-এ কাজ করেছেন ভারত বর্ষের মেধাবী নির্মাতা গৌতম ঘোষের পরিচালনায়। ছবিটি মুক্তির পরে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জিতে নেয় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। আর এবার এই সিনেমার হাত ধরেই প্রথমবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন কুসুম শিকদার। পুরস্কার ঘোষণার পর অনুভূতি এবং শঙ্খচিল ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় প্রথমে অভিনন্দন আপনাকে…
ধন্যবাদ আপনাকে।

অভিনয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেলেন। কেমন লাগছে?
আসলে যে কোনো শিল্পীরই প্রশংসা বা স্বীকৃতি পেতে ভালো লাগে। এটা আমি অস্বীকার করবো না। আমারও ভালো লাগছে। যেহেতু এটা অভিনয় শিল্পী হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বা সর্বোচ্চ সম্মান। নিঃসন্দেহে আমি এমন পুরস্কার প্রাপ্তিতে পুলকিত। আর জানি না এটা বলা ঠিক কি কিনা, আমার চেয়ে অনেক সিনিয়র শিল্পীরা রয়েছেন, অনেক স্কিলড অভিনেত্রীরা রয়েছেন যারা এই পুরস্কারটি পাননি। কিন্তু আমি তৃতীয় চলচ্চিত্র দিয়েই এই পুরস্কারটি পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! এরজন্য আমি জুরি বোর্ডের কাছে কৃতজ্ঞ এবং আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।
শঙ্খচিল ছবিতে যে চরিত্রে আপনি অভিনয় করলেন, যখন চরত্রটা যাপন করছিলেন। তখন কি ভেবেছিলেন যে এই চরিত্রে অভিনয় আপনাকে এমন স্বীকৃতি এনে দিবে। মানে এরকমটা কি বোধ হয়েছিলো কিনা?
দেখুন, কাজ করার সময় এরকমটা কোনো শিল্পীর মনে হয় না। এ ধরণের ভাবনাগুলো আসে না। কারণ কাজে এতো বেশি ইনভলবমেন্ট থাকে, বা কনসেন্ট্রেশান থাকে যে কাজ ছাড়া অন্যকোনো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য থাকে না। সত্যি কথা বলতে, এরকম ভাবতে মনেও থাকে না। তবে দেশে মুক্তির আগেই যখন ভারতে রিজিওনাল ফিল্ম হিসেবে ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলো তখন কিছুটা মনে হয়েছিলো। কারণ সিনেমা নিয়ে ভারতের মতো এতো কম্পিটিশন যে জায়গায় সেখানে যখন সেরা ছবির স্বীকৃতি অর্জন করেছিলো তখন মনে হয়েছিলো, আমি কিছুটা করতে পেরেছি। যেহেতু এটা আমার অভিনীত চলচ্চিত্র ছিলো। তখন ভেবেছিলাম, হয়তো এই অর্জনটা ভারতেই শুরু এবং সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনতো আমার দেশে ছবিটির এমন স্বীকৃতিতে আমি বেশ উচ্ছ্বসিত।

আর যা বলছিলেন, যে আমি যখন এই ছবিতে অভিনয় করছিলাম তখন স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে কিছু ভাবছিলাম কিনা! ওই মুহূর্তে আসলে কিছু ছিলো না। কিন্তু কোনো ছবিতে কাজ করতে গেলে যেকোনো শিল্পীর কিছু স্বপ্ন থাকে, আকাঙ্ক্ষা থাকে। এগুলা কেউ বলে, আবার কেউ বলে না। কেউ প্রকাশ করে, আবার কেউ করে না। কিন্তু আমি এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সুপ্তভাবে হলেও একজন শিল্পীরতো এমন আকাঙ্খা থাকেই।

সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল কিংবা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের পর বাংলা চলচ্চিত্রে গৌতম ঘোষ একটা বিশাল জায়গা জুড়ে আছেন। তার সিনেমায় কাজের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আপনার কাছে?
অবশ্যই। প্রথমত তার সিনেমায় কাজ করা বিশাল একটা চাপের ব্যাপার ছিলো। তার সিনেমা দেখে আমরা বড় হয়েছি। মানে বর্তমানে আমার যা বয়স, তারও আগে থেকেই গৌতম ঘোষ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে যাচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনালি অ্যাকলেইমড একজন ডিরেক্টর। আর তার আগের সিনেমাগুলোতে যারা নায়িকা ছিলেন, তাদের মধ্যে শাবানা আজমি, রেখা, টাবু এবং শর্মিলা ঠাকুরের মতো মানুষেরা আছেন। সেইখানে আমার নামটাই যখন চিন্তা করেছি, সেটা আমার জন্য একটা স্ট্রেসের ব্যাপার ছিলো। যে এমন একটা মানুষের সিনেমায় কাজটা কীভাবে করবো! এতো বড় নির্মাতার সাথে কাজ করার প্রস্তাব, তার উপর এটা যেহেতু যৌথ প্রযোজনার ছবি ফলে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার আরেকটা ব্যাপার। সব মিলিয়ে মস্ত চাপেই ছিলাম বলা যায়! তারউপর ছবিতে আমার বিপরীতে সুপারস্টার প্রসেনজিৎ!

চাপের উপর চাপ!
হ্যাঁ। গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ আর গল্পটাওতো ইন্টারনেশনাল বা গ্লোবাল ক্রাইসিস নিয়ে। এটাতো শুধু ভারত বাংলাদেশের ক্রাইসিস নয়। দেখানো হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ নিয়ে কিন্তু এটা ইউনিভার্সাল। পৃথিবীতে বহু সীমান্তবর্তী দেশের মধ্যে এরকম ক্রাইসিস চলমান। এবং মানুষকে প্রতিনিয়ত এধরণের ক্রাইসিস নিয়ে স্ট্রাগল করতে হয়। তো সবকিছু মিলিয়েই আসলে স্ট্রেস ছিলো শঙ্খচিলে কাজ করা। এটা আমার জন্য ভিন্ন রকমের এক চ্যালেঞ্জও ছিলো বলা যায়। শেষ পর্যন্ত আমার কঠোর পরিশ্রম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পেলো।

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হওয়ার পর গৌতম ঘোষের সঙ্গে কি কথা হয়েছে আপনার?
আমার প্রডিউসারদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর সাগর ভাই(ফরিদুর রেজা সাগর), আশির্বাদ চলচ্চিত্র থেকে হাবিব ভাই। তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ছবিতে আমার সহ-অভিনেতা প্রসেনজিতের সঙ্গে কথা হয়েছে, কিন্তু স্যারের(গৌতম ঘোষ) সাথে এখনো কথা হয়নি। আসলে উড়ো খবর অনেকদিন ধরেই শুনছিলাম, কিন্তু সরকারিভাবে ঘোষণা হলোতো দুদিন হলো। শিগগির স্যারের সাথে কথা বলবো।

একটু আগে বলছিলেন যে, গৌতম ঘোষ কাজ করেছেন শাবানা আজমি, রেখা কিংবা শর্মিলী ঠাকুরদের মতো তারকাদের নিয়ে। তার ছবিতে আপনিও কাজ করলেন। অভিনেত্রী হেসেবে আপনার সামনে এমন কোনো আইডল কি আছেন?
আমার পছন্দ বা প্রিয়ের তালিকাটা অদ্ভুত। পছন্দের বই, পছন্দের সিনেমা বা পছন্দের নায়ক নায়িকার তালিকাটা কিছুদিন পরপর পরিবর্তিত হতে থাকে। এটা ফিক্সড থাকে না। এখন একটা বই পড়ে ভালো লাগলো, দেখা গেলো দু’মাস পর আরেক বই বা সিনেমা এই মুগ্ধতাকেও ক্রস করে গেলো। আমার পছন্দ নির্দিষ্ট থাকে না। তবে অভার অল যদি বলেন, কার অভিনয় আমার ভালো লাগে, সেই ক্ষেত্রে আমি আমার দেশ থেকে নির্দ্বিধায় শমী কায়সারের নাম বলবো। ভারত থেকে টাবুর অভিনয় ভালো লাগে। আর যদি হলিউডে যাই তাহলে বলবো কেট উইন্সলেট ভালো লাগে।

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন, এটা শোনার পর কৃতজ্ঞতার তালিকায় কার নাম সবার আগে নিয়েছেন?
অনেকের নাম। অনেকেই সংশ্লিষ্ট ছিলোতো শঙ্খচিল ছবিতে কাজ করার বিষয়ে। এরআগে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের দুই ছবি গহীনে শব্দ ও লাল টিপ ছবিতে আমাকে সরাসরি ছবি দুটোতে অভিনয় করতে বলা হয়েছে। কিন্তু শঙ্খচিল ছবিতে কিন্তু এমনটি হয়নি। আমাকে অডিশন দিয়ে রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে তারপর এই ছবিতে অভিনয় করতে হয়েছে। এই ছবিতে অভিনয় করার আগে শুধু আমি নই, আমার আগের জেনারেশনের অনেকেই অডিশনে ডাকা হয়েছিলো। আমার অডিশন নেয়ার সময় স্বয়ং গৌতম ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। এবং উনার ছেলে ঈশানও ছিলেন। তারা আমার অডিশন নিয়েছেন। আর অডিশনটা আমি এজন্য দিয়েছিলাম যে, ছবিতে অভিনয় করি কিংবা নাই করি। কিন্তু অডিশনের জন্য হলেওতো গৌতমের ঘোষের মতো নির্মাতার সামনে আমি দাঁড়াতে পারবো। পাঁচ মিনিট অন্তত কথা বলতে পারবো। বলা যায়, গৌতমের ঘোষের সামনা সামনি হতে পারাই আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। এই লোভেই আমি অডিশন দিয়েছি। শঙ্খচিল ছবিতে যে আমি অভিনয় করতে পারবো, এটা ভাবিনি। কারণ অডিশন দেয়ার আগেই আমার চেয়ে সিনিয়র আর্টিস্টের নাম শুনেছিলাম অডিশন লিস্টে। তো কৃতজ্ঞতার কথা যদি বলি, তাহলে গৌতম ঘোষ স্যার, সাগর বস(ফরিদুর রেজা সাগর), হাবীব ভাইয়ের নাম আসবে। আমার সহ অভিনেতা প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির প্রতিও কৃতজ্ঞতা। উনি কিন্তু এই ছবিটার হাফ প্রডিউসারও। মানে ভারত বর্ষের অংশটার প্রযোজক উনি।

শঙ্খচিল ছবির পর বড় পর্দায় সামনে কোনো কাজ নিয়ে কি আসছেন?
আমি প্রথম অভিনয় করি গহীনে শব্দ ছবিতে। ২০১০ সালে যে ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলো। এরপর ‘লাল টিপ’ রিলিজ হলো ২০১২ সালে। যে ছবিতে অভিনয় করে আমি মেরিল-প্রথম আলোতে বেস্ট পপুলার অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে আমি সেরা অভিনেত্রী হয়েছিলাম। এরপর ২০১৬ সালে করলাম শঙ্খচিল। এটার জন্যও সর্বোচ্চ স্বীকৃতিটা পেলাম। এগুলো এজন্য বলা, আমার কাজের অনেক গ্যাপ থাকে। আমার কাছে কাজের অফার আসলেই যে করি তা না, আসলে আমি চাই না আমারা কাজ রিপিট হোক। আমি প্রচণ্ড প্রেম, প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকে কাজটা করি। আমি চাই, আমি মরে গেলেও আমার কাজগুলো বেঁচে থাকুক। আর এজন্যই আমি এরকম কাজই করতে চাই, যে কাজগুলো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। বহুদিন বেঁচে থাকবে যে কাজগুলো, আমি তাই করতে চাই। এজন্যই আমার কাজের সংখ্যা কম। আমি নেক্সট কী কাজ করবো,আমি জানি না। আল্লাহ চাইলে কাজ হবে, না চাইলে হবে না। সেটা কবে হবে আমি জানি না।

ধন্যবাদ আপনাকে…
এ এম বি । পাথরঘাটা নিউজ । সুত্রঃ চ্যেনেলআইঅনলাইন

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)