ভালোবাসা ও ঘৃণা হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেঃ- শাহ্ মোহাম্মদ নেছারুল্লাহ

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ১২ এপ্রিল ২০১৮

শাহ্ মোহাম্মদ নেছারুল্লাহ
ঈমানের রয়েছে অনেক শাখা-প্রশাখা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করা”। মুমিন হতে হলে ঈমানের কারণেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কাউকে ভালবাসতে হবে আর কাউকে ঘৃণা করতে হলে তাও ঈমানের কারণেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
তবেই আশা করা যায় ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের পরিপূর্ণতার অর্জিত হবে। এটি ঈমানের একটি সুদৃঢ় শাখা‌। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা বা পার্থিব কোনো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কাউকে ভালবাসা বা তার সাথে শত্রুতা পোষণ করা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসা অর্থ হলো কোনো দ্বীনদার বা আল্লাহ ওয়ালাকে তার দ্বীনদারীর কারণে ভালবাসা। অনুরূপ আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করার অর্থ হলো আল্লাহ ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুগত বর্জন এবং তার মাঝে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেম না থাকার কারণে ঘৃণা করা। এটাই ঈমানের দাবি।
যারা একমাত্র মহান আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পরস্পরে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এতে তাদের পার্থিব কোনো স্বার্থ জড়িত থাকবে না; এরূপ ব্যক্তিদের মহান আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের কঠিন সময়ে তার রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না এবং অবশেষে তাদেরকে জান্নাতে প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করবেন।
এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রাহঃ বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ তা’আলা এমন দু’বন্ধুকে ডাকবেন, যারা পার্থিব কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্য ছাড়াই একমাত্র আল্লাহর তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পরস্পর পরস্পরের মাঝে ভালবাসা স্থাপন করেছিলো। যাদের উদ্দেশ্য ছিল মহান আল্লাহ তায়ালার ইজ্জত ও মহত্বের বিকাশ করা। তিনি ডেকে বলবেন, সে সব লোক সকল কোথায় যারা নিঃস্বার্থে পরস্পর ভালবাসা স্থাপন করেছিলো, আজ আমি আমার আরশের ছায়ার নিচে তাদেরকে ছায়া প্রদান করব। আজ আমার আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া কোথাও নেই ।( মুসলিম শরীফ)
হাদীসে কুদসীতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার গৌরব ও মহত্বের খাতিরে যারা পরস্পরকে ভালবাসে তাদের জন্যে পরকালে বিরাট নূরের মিম্বার হবে যা অবলোকন করে নবী ও শহীদগণ লোভাতুর হবেন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি উত্তম কাজ হচ্ছে কাউকে ভালবাসলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা আর কাউকে শত্রু ভাবলে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই শত্রু ভাবা । তিনি আরো বলেছেন, তুমি যাকে ভালোবাসবে পরকালে তার সাথেই তুমি থাকবে।
আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় দুনিয়াতে মানুষ যার সাথে থাকবে তথা যাকে অনুসরণ করবে কিয়ামতের দিবসে তার সাথেই তার হাশর হবে কেউ সৎ লোককে ভালোবাসলে তার সাথে হাশর হবে বিনিময় পাবে মহান আল্লাহ-তায়ালার রহমতে ছায়ায় আশ্রয় ও জান্নাত। আর অসৎ লোক কে ভালোবাসলে তার সাথেই তার হাশর হবে বিনিময় হবে জাহান্নাম।
এ বিষয়ে আল্লামা খাত্তাবি রহঃ বলেন, হাদিসের আলোকে পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় অধিক আমল না করে থাকলেও নিষ্ঠার সাথে অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নেককার লোকদের ভালবাসলেও তাদের সাথে হাশরের মাঠে একত্রিত হওয়া যাবে‌। সুতরাং বুঝা যায় যে নবীগণ, সালেহীনগণ, আলেম ওলামা এবং উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন লোকদের ভালবাসতে হবে। তাহলে পরকালে তাদেরকে দলভুক্ত হওয়া সম্ভবপর হবে।
পক্ষান্তরে আল্লাহদ্রোহী ও ইসলামবিরোধী লোকদেরকে ভালবাসলে তাদের সাথে হাশর হবে।
মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করে বাস্তব জীবনে আমলের মাধ্যমে জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখকঃ শাহ্ মোহাম্মদ নেছারুল্লাহ ( কবি, সাহিত্যিক, ইসলামী লেখক ও গবেষক) ছারছীনা শরীফ।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)