র‍্যাবে বদলী নিয়ে পুলিশের অসন্তোষ

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

---
বিশেষ প্রতিবেদন: ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ জঙ্গী, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মুলের অঙ্গিকার করে  “বাংলাদেশ আমার অহংকার” স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করে পুলিশের এলিট ইউনিট র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

জন্ম থেকে অদ্যাবধি যাত্রা পথের এই সময়ে সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত পুলিশের এলিট ইউনিট র‍্যাবের অনেকগুলো অর্জন বাহিনীর সুনামকে যেমন উর্ধ্বমুখী করেছে বিপরীতে নারায়নগঞ্জের ৭ খুন, পটিয়ার মাজার লুটের ঘটনাসহ বিচার বহির্ভুত হত্যা, গুম, গুপ্ত হত্যা ও অপহরণের মত গুরতর অপরাধ জনক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে বাহিনীটি জনগণের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ।

র‍্যাব গঠনের শুরু থেকেই বাহিনীতে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান ও মর্যাদার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বাহিনীর মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে । এ অসন্তোষের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুলিশের একটি ইউনিট হওয়া সত্ত্বেও বাহিনীটিতে পুলিশের র‍্যাংককে সর্বদা নিম্নগামী করা হয়েছে ।

সরকারের গেজেট মোতাবেক পুলিশ পরিদর্শক ও উপ পুলিশ পরিদর্শক পদটি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা লাভ করলেও র‍্যাবে এই দুই র‍্যাংকের মূল্যায়ন হচ্ছে মুলত ফোর্স হিসেবে । বিপরীতে বাস্তবতা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে মামলা মোকদ্দমা, এজহার লিখন, জব্দ ও তল্লাশী তালিকা প্রস্থুত করন সহ বিভিন্ন আইনী বিষয়াদি পুলিশের এসআই (নিঃ) গণের দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে । আইন শৃংখলা বাহিনীতে আইন সম্পর্কে দক্ষ্য ও যোগ্য লোকের মূল্যায়ণের বিপরীতে পুলিশ বাহিনীর মেরুদন্ড খ্যাত পুলিশের নিরস্ত্র এসআই ও পরিদর্শক পদ দুটিকে চরম অবমূল্যায়ণ ও অবহেলা করা হয়েছে বলে পুলিশ সদস্যরা মনে করছেন যা অসন্তোষ ও ক্ষোভের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

র‍্যাব গঠনের প্রাক্কালে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে কোটার ভিত্তিতে পুলিশ সদস্যগণ দুই বছরের জন্য প্রেষনে বদলী হিসেবে র‍্যাবে চাকরী করে আসছেন । প্রেষণের মেয়াদ শেষ হলে সংশ্লীষ্ট পুলিশ সদস্যের বিপরীতে অন্য একজন সদস্য র‍্যাবে জয়েন করার পর পরই উক্ত প্রেষণের মেয়াদ সম্পন্নকারী পুলিশ সদস্যকে তার মাতৃ ইউনিটে ফেরত পাঠানোর বিধান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন অযুহাতে ও অজানা কারনে যথাসময়ে মাতৃইউনিটে ফেরত না পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে । এতে করে তাদের অনেক কে অতিরিক্ত ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত র‍্যাবে অবস্থান করতে হচ্ছে এর ফলে এসব পুলিশ সদস্য মানষিক বিমর্ষতায় ভোগছেন ।

বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে পুলিশ বাহিনীতে নতুন একাধিক ইউনিট গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে পুরাতন ইউনিটগুলোর সাথে নতুন ইউনিট থেকে র‍্যাবে সদস্য প্রেরণের কোটার সমন্বয় সাধন করা হয়েছে । ফলে পুরাতন অনেকগুলো ইউনিটের কোটা হ্রাস করে হ্রাসকৃত কোটাগুলো নতুন ইউনিট থেকে পুলিশ সদস্য প্রেরণের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই পূরণ করা হয়েছে বলে জানা যায় ।ফলে যেসব ইউনিটের কোটা হ্রাস করা হয়েছে সে সমস্থ ইউনিটের হ্রাসকৃত কোটায় র‍্যাবে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের প্রেষণ আদেশ বাতিল পূর্বক জরুরী ভিত্তিতে তাদেরকে স্ব স্ব মাতৃইউনিটে ফেরত পাঠানোর জন্য গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে নির্দেশনা প্রেরণ করা হয় ।

পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সমন্বয়ের আওতায় থাকা পুলিশ সদস্যরা র‍্যাবে জয়েন করার পর তাদের বিপরীতে র‍্যাবে কর্মরত হ্রাসকৃত কোটার সমান সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে গত জানুয়ারী মাস থেকে পর্যায়ক্রমে পৃথক পৃথক স্মারক মুলে মাতৃইউনিটে জরুরী ভিত্তিতে ফেরত পাঠানোর জন্য র‍্যাব হেডকোয়ার্টার কর্তৃক র‍্যাবের সকল ব্যাটালিয়নে নির্দেশ পাঠানো সত্ত্বেও দীর্ঘ চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও অধিকাংশ ব্যাটালিয়ন এ আদেশ এখন পর্যন্ত কার্যকর না করে সময় ক্ষেপন ও বিভিন্ন অযুহাতের আশ্রয় গ্রহন করছে বলে প্রেষণ আদেশ বাতিল হওয়া পুলিশ সদস্যরা অভিযোগ করেছেন ।

র‍্যাব হেডকোয়ার্টারের এ আদেশ কবে নাগাদ পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েও পুলিশ সদস্যরা ধোয়াশা ও সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন ।এমন পরিস্থিতিতে সমন্বয়ের আওতায় থাকা পুলিশ সদস্যরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের আশু দৃষ্টি কামনা করেন ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, যেহেতু তাদের প্রেষণ আদেশ বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের রিলিভারগণ ইতিমধ্যে র‍্যাবে জয়েন করেছেন ও এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে জরুরী ভিত্তিতে মাতৃইউনিটে ফেরত পাঠানোর জন্য র‍্যাব হেডকোয়ার্টার কর্তৃক নির্দেশনা জারির পরও তাদেরকে মাতৃইউনিটে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। তাই তারা নির্ধারিত দিন তারিখ উল্লেখ করে সমন্বয়ের আওতায় থাকা পুলিশ সদস্যদের মাতৃইউনিটে ফেরত পাঠানোর আদেশ জারির জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সুদৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন।

এন এ এস/পি এন

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)