এনায়েতপুর জুড়ে তোলপাড় ও বিতর্ক খুদে ছাত্রদল নেতা এখন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ৬ মে ২০১৮

এনায়েতপুর জুড়ে তোলপাড় ও বিতর্ক খুদে ছাত্রদল নেতা এখন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি
চৌহালী  প্রতিনিধিঃ তিনি ছাদ্দাম হোসেন ওরফে ছাদ্দাম ভুঁইয়া স্বাধীন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার খুকনী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক।  হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি বনে যাওয়ায় স্থানীয় ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সহ সবার মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এক সময়কার কৌশলী এই মাদ্রাসা ছাত্রের রাজনৈতিক ভাবে এক দল থেকে অন্যদলের পদ বাগিয়ে নেবার ঘটনায় উভয় দলের নেতা কর্মীদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বড় দুই দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে থাকা “ডিগবাজি ছাদ্দামের” বিষয়টি তার গ্রামের লোকজন জানতে পেরে হতভাগ হয়েছে।

 

স্থানীয় ছাত্র সংগঠন এবং এলাকাবাসী জানান, জেলার এনায়েতপুর থানার গোপিনাথপুর গ্রামের কদ্দুস কসাই পারিবারিক ভাবে বিএনপির একজন সমর্থক। তার ৩ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে ছাদ্দাম ছিল তৃতীয়। শিশুকাল থেকেই পাশের গ্রাম সোনাতলা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখা পড়া করতো। জামায়াতের ঘাঁটি খ্যাত এ মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ার সুবাদে সংগঠন ছাত্র শিবিরের সাথেও ছিল তার সখ্যতা।

 

এখানে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়ার পর এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১১ সালে সে এসএসসি পাশ করে। সে সময় সরকার বিরোধী যেকোন সভা-সমাবেশে তার সবর উপস্থিতি থাকায় ২০১২ সালের দিকে খুকনী ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সময় এনায়েতপুর থানা ছাত্রদলের আহবায়ক সালেহ আহমেদ জামিল ছাদ্দামকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নিযুক্ত করেন। এরপর বিএনপি এবং তার সহযোগী সংগঠনের যে কোন সভা সমাবেশে তার কর্মকান্ড ছিল প্রশংসিত।

এরপর ঢাকা সরকারী তিতুমীর কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষা গ্রহন শুরু হলেও সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রাকিবুল করিম খান পাপ্পুর ঢাকায় দলীয় কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। এরই মধ্যে শিবির ঘুড়ে ছাত্রদলে আসা ছাদ্দাম হোসেন এলাকার ঢাকায় অবস্থানে থাকা সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। তাদের সংস্পর্শে আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের সভা সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজেকে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বনে যায়। কৌশলে সে দলীয় নেতাদের সান্বিধ্য লাভ করে গত ২২ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। সংগঠনের পদ প্রাপ্তির ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের নিজস্ব প্যাডে সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তাকে দেয়া হয়।

 

চিঠিটি গত ৩ মে তার ফেসবুক “ঝধফরহ ইযঁরুধ” তে পোষ্ট করলে নিজ এলাকা এনায়েতপুর থানা সহ জেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষুব্ধ হয় থানা ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ। এ ব্যাপারে এনায়েতপুর থানা ছাত্রদলের আহবায়ক সালেহ আহমেদ জামিল, যুগ্ম আহবায়ক শাহরিয়র ইমন এবং খুকনী ইউনিয়ন ছাত্র দলের সভাপতি আফজাল হোসেন জানান, ছাদ্দাম আমাদের ছাত্রদলের একজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা। দলীয় ভাবে তার সক্রিয়তা থাকায় তাকে এর আগে খুকনী ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তবে হঠাৎ করে শুনছি সে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের নেতা বনে গেছেন।

বিষয়টি আসলেই হাস্যকর। আমাদের ছাত্রদলের মাঠ পর্যায়ের কর্মী নিয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় মর্যাদার মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বানানোয় আমরা ব্যাথিত ও ক্ষুদ্ধ। ছাত্রদল নেতা ইমন আরো জানান, আমি বিষয়টি নিয়ে কৌশলে প্রতিবাদী কমেন্ট করায় আমাকে ফেসকুকে ট্যাটার্স দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে ছাদ্দাম হোসেন। আমাকে দেখে নেয়ারও হুমকি দিয়েছে সে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাকা জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইলে বাড়াবাড়ি না করার জন্য ছাদ্দামের পক্ষে তার আত্বীয় এনায়েতপুর থানা যুব দলের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন ব্যাপারী ছাত্রদলের এক নেতাকে হুমকি দিয়েছে বলে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এক সময়কার এনায়েতপুর থানা ছাত্রলীগের নেতা এমদাদুল হক মিলন ও খুকনী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন জানান, ছাদ্দাম হোসেন ওরফে ছাদ্দাম ভুঁইয়া স্বাধীন এলাকায় সক্রিয় ভাবে এখানো ছাত্রদল ও এক সময় শিবির করতো।

 

চান্দে সাইদীকে দেখা গিয়েছে গুজব তুলে জামাত-বিএনপির গোপিনাথপুরে হিন্দুরের ঘরবাড়িতে হামলা ও মন্দির ভাংচুরের সঙ্গে সেও জড়িত ছিল। সেই ছেলে কিভাবে ছাত্রলীগের মহানগর উত্তর কমিটির পদ পায়, এটা আমাদের প্রশ্ন। ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতেই শিবির ছাত্রদল করা এই কৌশল অবলম্বন কারীকে ছাত্রলীগে স্থান দেয়া হয়েছে। নিজ থানা বা জেলা হলে কখনোই এটা সম্ভব হতোনা। যারা পদ দিয়েছে তার ও পরিবারকে না জেনেই কারো প্ররোচনায় এ কাজ করেছে। তাই এ ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে জরুরী পদক্ষেপ দাবী করছি।

 

বিষয়টি ব্যাপক ভাবে নাড়া দিয়েছে ছাদ্দামের নিজ গ্রাম গোপিনাথপুরে। গ্রামের প্রবীন সমাজ সেবক ও এনায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গাজী মোজাম্মেল হক জানান, ঘটনাটি শুনে আসলেই হতভাগ হয়েছি। ছাদ্দামরা পারিবারিক ভাবে বিএনপির সমর্থক। সে ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা হয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী ছাত্রলীগের সহ সভাপতির পদ পায় কিভাবে। প্রকৃতরা মুল্যায়িত হচ্ছেনা। যারা দলের বিরোধী তারাই চামচামী করে দলে বড় পদ বাগিয়ে নিচ্ছে। আবার তারাই বিতর্কিত কাজ করে দলের দুর্নাম ছড়াচ্ছে। তাই এদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।

এদিকে বিতর্কিত ভাবে পদ বাগিয়ে নেয়া ছাদ্দাম হোসেন ওরফে ছাদ্দাম ভুঁইয়া স্বাধীনের ব্যবহৃত ০১৬১৫-৬০৫০৫০ নং  মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।  বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমাদের কমিটি গত ২৬ এপ্রিল বাতিল হয়েছে।  

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)