এক মানুষের চারটা পা!

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৫:৪৬ পিএম, ২১ মে ২০১৮

এক মানুষের চারটা পা!উনিশ শতকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী জোসেফিন মার্টিল করবিন নামের এক মহিলা বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেন সেদেশে। আলোচনার কারণ তার স্বাভাবিক মানুষের মত দু’টা না থেকে, চারটা পা ছিল। অদ্ভুত না? এক মানুষের আবার চারটা পা হয় কি করে! এমন কথা কি কস্মিনকালেও কেউ শুনেছে?

জ্বী শুনেছে। ইতিহাস শুনেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের অনেক মানুষ দেখেছেও।

‘ফোর লেগড ওম্যান’ বা ‘চার পায়া মহিলা’ হিসেবেই সেসময় পরিচিত হয়ে ওঠে জোসেফিন মার্টিল করবিন। উপরের ছবির দিকে তাকালে যে কেউ দেখতে পাবে পোষাকের নিচে মহিলার চার পা। জ্বী না, ফটোশপ না। সত্যিকারের চার পা। চলুন শুনে আসি সে চার পায়ের ইতিহাস!

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির লিংকন কাউন্টিতে ১৮৬৮ সালে জন্ম হয় মার্টিল করবিনের। জন্মের সময় সব দিক দিয়েই স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। তার জন্মের আগে বা পরে কোন ধরণের অস্বাভাবিকতা ছিল না তার মধ্যে। ছোটবয়স থেকেই সে ছিল সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী, সুস্থ-সবল এক মেয়ে। অস্বাভাবিকতা বলতে একটা, তার পায়ের সংখ্যা ছিল চারটা। স্বাভাবিক মানুষের মত দু’টা নয়, বরং তার পা ছিল চারটা।

জোসেফিন মার্টিল করবিন, যুক্তরাষ্ট্র, চার পায়ের মানুষ

জন্মের সময় থেকেই তার দুটো পায়ের ভেতরের দিকে ছোট সাইজের আরও দু’টো পা দেখা যায়। এই অস্বাভাবিকতার কারণ খুঁজতে গেলে, প্রথমে ডাক্তারটা মনে করেন, মার্টিল করবিলের বাবা-মার কোন সমস্যা থেকে হয়ত হয়ে থাকতে পারে এ সমস্যা।

কেননা, মার্টিলের বাবা-মার মধ্যে দুটো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন ডাক্তার। এক, মার্টিল করবিনের মা ন্যান্সি, তার বাবা উইলিয়াম এইচ করবিনের চেয়ে বয়সে দশ বছরের বড় ছিল। আর দুই, মার্টিল করবিনের বাবা-মা দু’জনের মধ্যে শারীরিক গঠনে অদ্ভূত রকমের মিল ছিল। তাদের দু’জনেরই চুলের রং ছিল লাল, চোখ ছিল নীল এবং গায়ের রং খুবই ফর্সা। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে এতটাই মিল ছিল যে ডাক্তার তাদের মেডিকেল রিপোর্ট দেখার আগে সন্দেহ করেছিলেন, তারা দু’জন হয়তো রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত।

কিন্তু ডাক্তার শেষ পর্যন্ত করবিনের বাবা-মার মধ্যে এমন কোন অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাননি, যার কারনে তার এ ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তারা খুবই স্বাভাবিক এক দম্পতি ছিলেন, যাদের আরও সাত সন্তানের সবাই স্বাভাবিক হয়ে জন্মেছিল। বিপত্তি ঘটেছিল কেবল মার্টিল করবিনের বেলায়।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য ডাক্তাররা করবিনের এই অস্বাভাবিক অবস্থার কারণ খুঁজে বের করতে সমর্থ হন। মার্টিল করবিন ‘ডিপিগাস’ নামক এক বিরল শারীরিক অবস্থা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এর ফলে তার পাযের দু’পাশে আরও দুটি পা নিয়ে সে জন্মগ্রহণ করে। তার চারটা পা থাকলেও বাইরের দু’টো স্বাভাবিক আকৃতির এবং ভেতরের দু’টো বেশ ছোট আকৃতির। ভেতরের দু’পায়ের মাত্র তিনটা করে আঙ্গুল ছিল্। সে দুটি পা ও করবিন নাড়াচাড়া করতে পারত। যদিও সেগুলোতে খুব একটা জোড় পেত না। অবশ্য জোড় পেলেও সেগুলো কাজে লাগত না। কেননা, সেগুলো স্বাভাবিক দু’টি পায়ের তুলনায় ছোট ছিল বলে মাটি ছুঁতে পারতনা।

মার্টিন করবিলের এই অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থার কথা যখন মানুষ জানতে পারল, অনেক মানুষ কৌতুহলী হয়ে দেখতে আসত তাকে। করবিনের ১৩ বছর বয়স হতেই তার বাবা, উইলিয়াম এইচ করবিল এটিকে টাকা উপার্জনের একটা ভালো উপায় হিসেবে মনে করলেন। একারণে, তিনি করবিলকে নিয়ে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন। যারাই তাকে দেখতে আসত তাদের দিতে হতো এক ডাইম পরিমাণ অর্থ। করবিনের বাবা মেয়ের এই অস্বাভাবিক অবস্থার প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেশি আয় করার প্রতি এতটাই উৎসাহিত ছিলেন যে, তিনি প্রচারণার মাধ্যমে বেশি দর্শনার্থী আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিউজপেপারে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দিয়েছিলেন।

এভাবেই মার্টিল করবিনের নাম ছড়াতে থাকে ধীরে ধীরে। অনেক মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তিনি। বিভিন্ন সার্কাস থেকে তার ডাক আসতে থাকে। একসময় প্রদর্শনীর জন্য ঘর ছেড়ে করবিন আশেপাশের ছোট ছোট গ্রাম ও শহরগুলোতে যেতে থাকে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার জন্য। তার প্রদর্শনীর চাহিদা বাড়লে, উপার্জনও বাড়তে থাকে সেসব প্রদর্শনী থেকে। শোম্যানদের কাছে তার চাহিদা বাড়তে বাড়তে একসময় এমন অবস্থা হয় যে, তাকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় নকল চার পায়া মহিলাদের দিয়েও শো এর আয়োজন হতে থাকে।

আঠার বছর বয়সে মার্টিল করবিন প্রদর্শনীর এই ব্যবসা থেকে অব্যাহতি নেন। সেসময় তার পরিচয় হয় ক্লিনটন বিকনেল নামের একজন ডাক্তারের সাথে। ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। ১৯ বছর বয়সে সেই ডাক্তার ভদ্রলোককে বিয়ে করে সংসারী হন, চারপায়া মার্টিল করবিন।

বিয়ের একবছর বাদে ১৮৮৭ সালের কোন একদিন মার্টিল করবিন আবিষ্কার করেন তিনি অন্ত্বসত্ত্বা হয়েছেন। করবিন ডাক্তারের কাছে যান শরীরের বাম পাশে প্রচন্ড ব্যাথা, জ্বর, মাথাব্যাথা, এবং ক্ষুধামন্দা নিয়ে। যদিও তার শরীরের গঠন অদ্ভুত ধরণের ছিল, তবু ডাক্তাররা তার মা হওয়ার ব্যাপারে কোন অসুবিধা দেখতে পান না। প্রথমবার অন্তসত্ত্বা হওয়ার তিনমাসের মাথায়ই প্রচন্ড শারিরীক সমস্যার কারণে ডাক্তাররা তার আবোরশন করতে বাধ্য হলেও মার্টিল করবিন পরে সুস্থ-সবল চারটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছিলেন।

প্রদর্শনী এবং বাচ্চা জন্ম দেবার পর মার্টিল করবিনের জীবনে আর কোন অস্বাভাবিকতা ছিল না। যদিও অনেক মানুষ তাকে নিয়ে আলোচনা করত, অনেক মেডিক্যাল জার্নালে তাকে নিযে রিপোর্ট বের হত, তবু তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে অন্য আর দশ জন স্বাভাবিক নারীর মত সুখী জীবন-যাপন করেছেন।

১৯২৮ সালে মার্টিল করবিন এক ধরণের চামড়ার ইনফেকশনে ভুগে মারা যান। এবং এরই সাথে শেষ হয় সম্ভবত, পৃথিবীর একমাত্র চারপেয়ে মহিলার জীবনের গল্প।(সূত্রঃ এগিয়ে-চলা.কম)

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২১ মে

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)