ওয়াজের উদ্দেশ্য ও আদবঃ- অধ্যক্ষ ড. সৈয়দ মুহাঃ শরাফত আলী

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩০ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০৯:৫৬ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৮

অধ্যক্ষ ডঃ সৈয়দ মুহাঃ শরাফত আলী


অধ্যক্ষ ডঃ সৈয়দ মুহাঃ শরাফত আলীঃ
আমাদের দেশে পুরো হেমন্ত, শীত, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালকে ওয়াজের মৌসুম বলা যেতে পারে। অন্য সময়েও মসজিদভিত্তিক ওয়াজ হয়ে থাকে।

বিশেষ করে মাহে রমজানের ইফতার মাহফিল, রবিউল আউয়াল মাসের অনুষ্ঠান এবং প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আরবি খুতবা পাঠের আগের বয়ান মুসলমানদের মনে ইসলামী জীবনবিধান গ্রহণের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে থাকে।

ইসলামী জ্ঞানে পারদর্শী আলেম, পীর, বুজুর্গ, মুবাল্লিগ ও হাদিরা ওয়াজ-নসিহত করে থাকেন। তবে কিছু পেশাদার ওয়ায়েজও আছেন। ওয়াজের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্মের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, যাতে কেউই কিয়ামতে দাবি করতে না পারে যে, ইসলাম কী? তা আমাকে জানানো হয়নি।

এর দ্বারা উম্মতের প্রতি ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর দায়িত্বও যৎকিঞ্চিত পালন হয়ে যায়। তবে ওয়াজের দ্বারা অনেক সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়ে থাকেন।

ওয়াজ করা ও শোনার দ্বারা অশেষ সওয়াব হাসিল এবং আল্লাহর আজাবের প্রতি ভয়ের সঞ্চার হয়। ওয়াজ দ্বারা কাক্সিক্ষত উপকার লাভের
জন্য ওয়াজকারী ব্যক্তির মধ্যে যেসব গুণাবলির সমাবেশ থাকা এবং তাকে যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত তা মোটামুটি নিম্নরূপ

* তিনি খোদাভীরু হবেন এবং তার নিয়ত খালেস হবে।

* ইসলামী জ্ঞানে পারদর্শী হবেন।

* ধৈর্যশীল হবেন।

* মানুষের প্রতি কপটহীন আন্তরিক হবেন।

* ওয়াজ করার আগে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।

* ওয়াজের প্রতি শ্রোতার মনোযোগ থাকা অবধি ওয়াজ করা।

* যে ওয়াজ শুনতে আগ্রহী নয় তাকে ওয়াজ না করা।

* শ্রোতাদের বিরক্তি ও অলসতার সময় ওয়াজ না করা।

* শ্রোতাদের ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধি- বিবেকের দিক বিবেচনায় রাখা।

* সমাজের রোগ নির্ণয় করে গুরুত্বের ক্রমানুসারে পর্যায়ক্রমে ওয়াজ করা।

* কর্কশ ভাষা পরিহার করে বিনম্র ভাষায় ওয়াজ করা।

* কথার ভদ্রতার প্রতি খেয়াল রাখা।

* কোনো মন্দ কাজের বিষয়ে কাউকে সরাসরি আঘাত না করা।

* নিজের প্রতি দোষ চাপিয়ে ইঙ্গিতে শ্রোতাদের বোঝানো।

* শ্রোতাদের উপলব্ধির প্রতি খেয়াল রাখা।

* যা বলা হবে তা যেন সঠিক এবং তার পরিণাম যেন অশুভ না হয়।

* সব বিষয়ে মতামত দেয়ার চেষ্টা না করা এবং যা জানে তার সবটুকু না বলা।

* অবস্থার নিরিখে উত্তম পদ্ধতিতে ওয়াজ করা।

* শুরুটা যেন সুন্দর হয়।

* সুন্দরভাবে শেষ করা।

* সম্বোধনের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনা।

* ধীর বা দ্রুত না করে থেমে থেমে কাটা কাটা কথা বলা।

* আওয়াজের মধুরতার প্রতি যত্নবান হওয়া।

* গুরুত্বপূর্ণ কথা দু’বার বলা।

* কোরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াজের অলঙ্করণ করা।

* চিত্তাকর্ষক সহিহ ঘটনা বলা।

* কবিতার পঙ্ক্তি, প্রবাদ বাক্য ও হেকমতপূর্ণ কথা দ্বারা ওয়াজকে অলঙ্কৃত করা।

* উপমা ও দৃষ্টান্ত দিয়ে ওয়াজ করা।

* উদ্ধৃতিগুলো নির্ভুলভাবে উচ্চারণ করা।

* এমন কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, যার ফল ভালো হয় অথবা যা দ্বারা মানুষ মন্দের ছোঁয়া থেকে বেঁচে থাকে।

* ওয়াজের সঙ্গে অর্থবোধক ইশারা করা।

* শ্রোতাদের প্রতি প্রশ্ন রাখা।

* ওয়াজের মর্ম শ্রোতাদের কাছে জানতে চাওয়া।

* শ্রোতাদের বোধগম্য ওয়াজ করা।

* সমালোচনায় উত্তেজিত না হওয়া।

* সব বিষয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ রাখা।

* ওয়াজের দ্বারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ উদ্দেশ্য করা।

* কারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য অপেক্ষমাণ না থাকা।

* ধোঁকাবাজি ও কপটতা পরিহার করা।

* কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখা এবং

আত্মম্ভরিতাকে প্রশ্রয় না দেয়া।

.

লেখক : অধ্যক্ষ, ছারছীনা
দারুস্সুন্নাত কামিল মাদরাসা, নেছারাবাদ অধ্যক্ষ ডঃ সৈয়দ মুহাঃ শরাফত আলী- পিরোজপুর

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)