ইলিশ মওসুম ঘিরে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুরা বেপরোয়া

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ৬ আগস্ট ২০১৮

এই ছবিটি প্রতীকিইলিশ ধরার মওসুম ঘিরে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি। জেলেদের জিম্মি করে ডাকাতরা বোটপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করছে। জেলেদের জীবন বাঁচাতে ও বোট ফিরে পেতে বোট মালিকরাও ডাকাতদের কাছে হাতে হাতে, কখনো মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। আর ভয়ে বোট মালিকরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ডাকাতির অভিযোগও করতে পারছেন না, বা করছেন না। ভুক্তভোগী জেলে এবং বোট মালিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা যায়।

গত বুধবার (২৫ জুলাই) থেকে এ পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে ১৪টি ট্রলার ডুবে গেছে যার মধ্যে ৪৯ জেলে এখন পর্যন্ত নিখোজ রয়েছে ও ৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বঙ্গোপসাগরে বরগুনা, পাথরঘাটা, তালতলী, বাঁশখালী ও আনোয়ারার ফিশিং ট্রলারগুলো বেশির ভাগই জলদস্যুর কবলে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে ইলিশের মওসুম শুরু থেকেই জলদস্যুরা জেলে বহরে হানা দিয়ে আসছে এবং সে থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশত জেলেকে মুক্তিপণের বিনিময়ে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে ৩০ জন জেলে ফিরে এসেছে এবং ২০ জন জেলে এখন পর্যন্ত কোথায় আছে তা কেউ জানতে পারেনি।

একসূত্রে জানাগেছে বঙ্গোপসাগরে বরগুনা অঞ্চলের তিনটি জলদস্যু বাহিনী সক্রিয় ভাবে দস্যুতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা হলো, ছোট ভাই বাহিনী, ডন বাহিনী ও গরিবের বন্ধু ছত্তার বাহিনী। তারা গত শনিবার (২১ জুলাই) গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়া কিছু জেলেদের উদ্ধার করে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতা চালায়। পরে র্যাবের টের পেয়ে মংলা সমুদ্র বন্দরের কাছে নামিয়ে দিয়ে যায় ও তাদেরকে এক হাজার টাকা বাড়ি ফেরার জন্য দিয়ে দেয় ও সবাইকে বলে যায় তারা যেন তাদের কথা কাউকে না বলেন। সুন্দরবন, বরগুনার ডাকাত দলগুলোও ফিশিং ট্রলার ডাকাতির সাথে সক্রিয় রয়েছে।

৪৯ জেলে এখনো নিখোঁজ

এ দিকে গত ২ আগস্ট মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা এক জেলের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাকে জলদস্যু ছোট ভাই বাহিনী জেলেবহর থেকে নিয়ে এক লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তি দিলেও তার ওপর যে অত্যাচার করেছে তাতে তার কাজ করে চলা আর সম্বব নয়। তার ভিটে মাটি যা ছিল সব কিছুই শেষ হয়ে গেছে। এখন সে নিঃস্ব।

অন্য দিকে কোস্টগার্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ফিশিং বোট ডাকাতির ব্যাপারে কেউ অভিযোগ জানাতে আসে না। আর অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থাও নেয়া যায় না। সমুদ্রে কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল রয়েছে। ডাকাতির ঘটনা জানানো হলে ব্যবস্থাা নেয়া হবে। ডাকাতরা বিভিন্ন এলাকার ফিশিং বোটগুলোতে মাঝিমাল্লার ছদ্মবেশেই থাকে। তারা সুযোগ বুঝে ডাকাতি করে।

বরগুনা জেলা মৎস্য জীবী ট্রলার মলিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ও বরগুনা জেলা ফিসিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাস্টার নয়া দিগন্তকে বলেন, ২১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত যে ট্রলার ডুবির ঘটনা কোস্টগার্ড তেমন কোনো ভূমিকা রাখেননি। আমাদের ট্রলার মালিক সমিতি ও ফিসিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে কিছু ট্রলারের জেলেদেও জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও বেশ কিছু জেলেদের এখন পর্যন্ত সন্ধান পাইনি। আবার কিছু জেলেদের দিয়ে জলদস্যু দস্যুতাও করিয়েছে বলে যানা গেছে। কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও র্যাব যদি তাদের নিয়মিত টহল থাকলে জলদস্যুদের হাত থেকে আমাদের জেলেরা রেহাই পেত।

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৬ আগস্ট

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)