উপকূলে হঠাৎ রুপালি ইলিশ- বেড়েছে জলদস্যু প্রবনতাও

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৮

প্রতিকী ছবি
চলতি বছরে ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে আকস্মিক ঝড়ে ওলট-পালট করে দিয়েছে জেলেদের জীবনযাত্রা। কেড়ে নিয়েছে ডজনখানেক প্রাণ। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অর্ধশত জেলে। বর্তমানে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে রুপালি ইলিশ। সাগর থেকে আহরিত ইলিশের সাইজ ও দাম ভালো হওয়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। 

সুদরবন কেন্দ্রীক নতুন করে কয়েকটি জলদস্যু বাহিনী সৃষ্টি হওয়ায় শতাধিক ট্রলারে গনডাকাতি ও কয়েকশতাধিক জেলে অপহরন করলে জায়গা জমি বিক্রি করে জলদস্যুর কাছ থেকে মুক্তিপন দিয়ে বার বার ছাড়িয়ে এনে নিঃস্ব হয়ে হয়ে গেছে জেলে পরিবার গুলো। এ বছরের বিগত দিনে ইলিশ না পেয়ে মৌসুমের শেষ বাতলায় সাগরে এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে পিছনের ধারদেনা পরিশোধ করে তারা লাভের মুখ দেখতে পারবেন বলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের আশা।

অপরদিকে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় ট্রলার অবাধে মাছ শিকার করায় ক্ষুব্ধ জেলেরা। সেখানে বাংলাদেশী জেলেদের তাড়িয়ে দিয়ে একচ্ছত্রভাবে মাছ শিকার করছে বলে অভিযোগ বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসিতে গিয়ে দেখা গেছে, বিশখালীর মোহনার পাথরঘাটার খালে নোঙর করে রয়েছে বেশ কিছু ইলিশ বোঝাই ট্রলার। কাক ডাকা ভোর থেকে শরু হয় এ মৎস্য বন্দরের কার্যক্রম। ঘাটে ভেড়ানো ট্রলার থেকে ঝাকা বোঝাই করে নামানো হয় ইলিশ। 

সকাল সাড়ে ৬টায় ঘণ্টা বাজিয়ে ইলিশ পাইকারিভাবে বেচা-কেনার ডাক শুরু হয়। সকাল ৯ টা পর্যন্ত চলে ইলিশের পাইকারি বেচাকেনা। দৈনিক প্রায় কয়েক টন ইলিশ বিক্রি হয় এ বাজারে। দৈনিক লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার।

ইলিশ আমদানির খবর শুনে বেশ কিছু পাইকার ভিড় করছে বিএফডিসির মৎস্য কেন্দ্রে। তারা মোটামুটি বড় সাইজের ইলিশ বেশি দামের আশায় এখান থেকে কিনে উত্তরাঞ্চলসহ রাজধানী ঢাকায় পাঠাচ্ছে।

আড়ৎদার সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন মুন্সী জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর সাগরে মাছ কম ধরা পড়ছে। তবে এখন সমুদ্রে মাছের দেখা মিলেছে। এ বছর মাছের সাইজ খুব বড় না হলেও মাঝারি ও ছোট সাইজের মাছের বেচাকেনা বেশ ভালই। বাজারে ছোট সাইজের ( ৪ থেকে ৫’শ গ্রাম) এক মন ইলিশ ২০থেকে ২৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর মাঝারি সাইজের (৬ থেকে ৭’শ গ্রাম) এক মন ইলিশ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে। তিনি জানান, বড় সাইজের ইলিশ তেমন না আসায় দাম অনেক বেশি। গ্রেড ১ কেজির উপরে কিছু ইলিশের দেখা মিললেও ৫০ থেকে ৫২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লে তারা বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে অনেক মৎস্যজীবী আশা করেন। 

এদিকে, ২০থেকে ২৫ হাজার টাকায় পাইকারি বাজার থেকে কেনা এক মন ইলিশ খুচরা বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬’শ থেকে ৭’শ টাকায়। আর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় কেনা মাঝারি সাইজের ইলিশ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১’শ থেকে ১২’শ টাকায়। 

সাগর থেকে ফেরা মাঝি কালাম খাঁ বলেন, বর্তমানে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। তিনি শুক্রবার ট্রলারে করে এক ট্রিপে ৩ হাজারের বেশি ইলিশ এনেছেন। সাগরে এ ধরনের পরিবেশ আরো কয়েকদিন বিরাজ থাকলে তারা আরো কয়েক ট্রিপ মাছ ধরতে পারবেন। 

আরেক জেলে বাদল মিয়া জানান, এখন জলদস্যুদের উৎপাত অনেক বেশি। সরকার যদি দস্যু দমনে সজাগ না থাকে তাহলে এ মৌসুমে ইলিশ ধরে তারা আগের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেনা। 

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জানান, জলবায়ুর পরিবর্তন ও পানির স্তর পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রে ইলিশের দেখা পেতে একটু বিলম্বিত হচ্ছে।
তিনি আশা করছেন সামনের দিনগুলোতে আরো ইলিশ বৃদ্ধি পাবে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, গত বছরের মত এবছরেও জেলেরা যেন সাগরে নির্বিঘ্নে ইলিশ ধরতে পারে সে বিষয়ে বনদস্যু ও জলদস্যু বাহিনী দস্যুতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আবেদন জানান। সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)