তৃণমূল আ’লীগের বিরোধিতার মুখে বরগুনা-২সহ দক্ষিণের ৬ এমপি

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৮

তৃণমূল আ’লীগের বিরোধিতার মুখে বরগুনা-২সহ দক্ষিণের ৬ এমপিতৃণমূল নেতা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরোধিতার মুখে দক্ষিণের আওয়ামী লীগের ৬ এমপি। আগামী নির্বাচনে এসব এমপি যাতে মনোনয়ন না পান সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল থেকে রেজুলেশন নেয়া থেকে শুরু করে কেন্দ্রে চিঠি দেয়া হচ্ছে। কোথাও এমপিদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হচ্ছে। তৃণমূলের এ অবস্থায় বিচলিত নন এমপিরা, তারা পাত্তাও দিচ্ছেন না। কেউ কেউ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে সবাই পক্ষে থাকবে এমন নয়। যাদের অন্যায় আবদার মানা হয়নি তারাই বিরোধিতা করছেন।’

বেশি বেকায়দায় বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের এমপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ। স্থানীয় কমিটির নেতারা প্রায় সবাই পঙ্কজের বিরুদ্ধে একাট্টা। দলের দুই কর্মীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলাও হয়েছে। মেহেন্দীগঞ্জে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের জমি দখলের অভিযোগে হয়েছে আরও একটি মামলা।

কাজীরহাট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জব্বার খান বলেন, ‘এলাকায় অবস্থান কতটা দুর্বল হলে একজন এমপির বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা হতে পারে, ভাবুন। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা শুধু উপেক্ষিতই নয়, চরমভাবে অবহেলিত।’

হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপু বলেন, ‘এলাকার তিনটি সাংগঠনিক থানার পক্ষ থেকে আলাদা রেজুলেশন করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনে পঙ্কজ মনোনয়ন পেলে নৌকার বিজয় অসম্ভব হবে।’

জানতে চাইলে পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘ত্যাগী নেতাকর্মী মাপার পরিমাপক যন্ত্রটা কি বলবেন? প্রধানমন্ত্রী জানেন, আমার কারণে দলের ক্ষতি হয়েছে নাকি উপকার হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তার।’

পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মাহবুব তালুকদারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বিচারাধীন। তৃণমূলের অভিযোগ, স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্র্থী মনোনয়নে আত্মীয়করণ এমনকি নিজের স্ত্রীকেও প্রার্থী করার চেষ্টা করেন মাহবুব। নানা কারণে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে সবাই একাট্টা।

কলাপাড়ার পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘মাহবুব তালুকদারকে ফের মনোনয়ন দিলে ফল ভালো হবে না। ক্ষমতার অপব্যবহার, নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে তার জনসমর্থন শূন্যের কোঠায়।’

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব তালুকদার বলেন, ‘তাকে যাতে আর মনোনয়ন না দেয়া হয় সেজন্য নেত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি।’ জানতে চাইলে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘মনোনয়ন নিশ্চিত হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। মাঠের নেতাকর্মী এবং ভোটাররা নৌকার প্রশ্নে দ্বিমত করে না। সেটাই আসল ব্যাপার।’

৩০ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালী-২ আসন অর্থাৎ বাউফলের এমপি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, তার এমপি পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে এক আওয়ামী লীগ নেতা মামলা পর্যন্ত দিয়েছেন।

বাউফলের উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমান বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের ২-৪ জন ছাড়া আর কেউই এখন তার পক্ষে নেই।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, প্রবীণ নেতা নিজাম উদ্দিন খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে আওয়ামী লীগ করছি। জাতির জনক ব্যক্তিগতভাবেও আমায় চিনতেন। পরিস্থিতি যা চলছে তাতে ভালো আছে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা। ফিরোজকে বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজের কাউকে মনোনয়ন না দিলে নৌকা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।’

আ স ম ফিরোজের সঙ্গে চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘এসব পাগলের প্রলাপ। ফিরোজই এখানে দলের একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। তিনি মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জিতবে নৌকা।’

১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের তলব এবং হোটেল রেইনট্রির কলঙ্কিত অধ্যায় নিয়ে বিপাকে ঝালকাঠি-১ আসনের এমপি বিএইচ হারুন। অভিযোগ রয়েছে, তার বাবা ‘বুলবুলে পাকিস্তান’ ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি। হারুন ১৯৯১ সালে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নির্বাচনী কর্মকাণ্ড করেন জেপির (মঞ্জু) প্রার্থীর পক্ষে।

রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন মাতব্বর বলেন, ‘আমাদের ওপর তাকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।’

কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুণ সিকদার বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার ১২টি ইউনিয়নের প্রায় সবটিতে বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হারুন।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএইচ হারুন বলেন, ‘তরুণ-রিয়াজ এরা কারা? এরা তো দলের কেউ নয়। এলাকার ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমার পক্ষে আছেন। তাছাড়া নেত্রী ভালো জানেন, সিদ্ধান্ত তার।’

অসংখ্য অভিযোগ বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে। তার বাবা খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন এবং সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘তাকে আবার মনোনয়ন দেয়া হলে এখানে আওয়ামী লীগের বিজয় দূরের কথা দল জামানত হারাবে।’

বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ বলেন, ‘তার বাবা রাজাকার ছিল। মুক্তিকামী বহু মানুষের রক্ত লেগে আছে এই পরিবারের হাতে।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এমপি রিমন বলেন, ‘আমার স্ত্রী এবং কন্যা অসুস্থ। আমি তাদের নিয়ে ব্যস্ত আছি। এ মুহূর্তে কিছুই বলতে পারব না।’

আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদীকে হারিয়ে তাক লাগানো ইমেজ খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি পিরোজপুর সদর আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএমএ আউয়াল। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সন্ত্রাসের বিস্তর অভিযোগ। এমনকি তার ভাইয়েরা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে, তার মতো একটা নষ্ট মানুষকে মনোনয়ন দেবে না কেন্দ্র। দিলে জামানত হারাবে আওয়ামী লীগ।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পৌর মেয়র এবং এমপি আউয়ালের আপন ভাই হাবিবুর রহমান মালেক বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই আউয়ালকে যেন মনোনয়ন দেয়া না হয়।’

আলাপকালে এমপি আউয়াল বলেন, ‘২০১৪ সালে এখানে ৩০ জনেরও বেশি নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। নেত্রী আমার ওপর ভরসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভালো করে জানেন আমার সম্পর্কে। কে কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না। আশা করি আমিই মনোনয়ন পাব।’(তথ্য সূত্রঃ যুগান্তর)

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২০ আগস্ট

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)