বামনায় হত্যা মামলার আসামির হামলায় দৈনিক আমাদের সময়ের সাংবাদিক টিপু রক্তাক্ত

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০২ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

দৈনিক আমাদের সময়ের সাংবাদিক টিপু
হত্যা মামলার আসামিকে নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বরগুনার বামনায় মোঃ মিজানুর রহমান টিপু নামের এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেছে হত্যা মামলার সেই আসামি ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোঃ হেমায়েত হোসেন মোল্লা (৩০)। রবিবার বেলা ১টার দিকে বামনা শহরের সদর রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক মিজানুর রহমান টিপুকে তাৎক্ষণিক বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার উন্নত চিকিৎিসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। বর্তমানে সে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় বামনা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। 

মিজানুর রহমান টিপু দৈনিক আমাদের সময়ের বামনা প্রতিনিধি হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করে আসছেন। অন্যদিকে হামলাকারী হেমায়েত হোসেন মোল্লা বরগুনা ডিসি অফিসের স্পিডবোট চালক জব্বার খান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮ নম্বর আসামি এবং বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।  

ভুক্তভোগী পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘খুনের আসামিকে সাথে নিয়ে সাংসদের ইফতার’ শিরোনামে হত্যা মামলার আসামি মোঃ হেমায়েত মোল্লাকে নিয়ে মিজানুর রহমান টিপুর পাঠানো একটি প্রতিবেদন ২০১৭ সালে ১২ জুন দৈনিক আমাদের সময়ের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার পর থেকেই হত্যামামলার আসামি হেমায়েত হোসেন মোল্লা মিজানুর রহমান টিপুকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে আসছিলো।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক মিজানুর রহমান টিপু জানান, রবিবার বেলা ১টার দিকে বামনা উপজেলা সদরের হেমায়েত হোসেন মোল্লার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ গৃহের নির্মাণ কাজের জন্য টাইলস ক্রয় করেন মিজানুর রহমান টিপু। বাড়ি পৌঁছে তিনি টাইলসের প্যাকেট খুলে ক্রয়কৃত টাইলসের চেয়ে কম টাইলস দেখতে পান। 

পুনরায় বাজারে এসে টাইলস কম হওয়ার কথা হেমায়েত হোসেন মোল্লাকে জানানোর পর হেমায়েত হোসেন মোল্লা তা অস্বীকার করেন। এ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে আকস্মিকভাবে হেমায়েত হোসেন মোল্লা মিজানুর রহমান টিপুর ওপর চড়াও হয়ে কিল-ঘুষি মেরে বাজারের সড়কে ফেলে দেয়। এসময় মিজানুর রহমান টিপু সড়কে পড়ে গেলে রড দিয়ে এলোপাথারী পিটিয়ে তাকে আহত করে ছাত্রলগি নেতা ও হত্যা মামলার আসামি হোমায়েত মোল্লা। এসময় পার্শ্ববর্তী অপর এক ব্যবসায়ি মো. শাহিন আকন বাঁধা দিয়েও তাকে রক্ষা করতে পারেনি।

এ ঘটনায় বামনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ওবায়দুল কবির আকন্দ দুলাল জানান, ‘এভাবে চলতে থাকলে সাংবাদিকরা কখনো সত্য সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না।’ এ ঘটনায় আইন শৃংখলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বামনার সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি নেবে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে হত্যা মামলার আসামি ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হেমায়েত হোসেন মোল্লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিএম শাহ-নেওয়াজ জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন।  লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান। 

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় বরগুনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্পিডবোট চালক মো. জব্বার খানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে ১২ আসামীর নাম উঠে আসে। জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি হেমায়েত হোসেন মোল্লাসহ পুলিশ ওই ১২ আসামীর নাম চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করে। চার্জশীটে নাম ওঠার পরে সকল আসামী গা ঢাকা দেয়। 

২০১৭ সালের ১০ জুন হেমায়েত হোসেন মোল্লা স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে বামনা আসমাতুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ইফতারপার্টিতে একত্রে ইফতার করে। এ নিয়ে দৈনিক আমাদের সময়সহ বিভিন্ন গলমাধ্যমে “খুনের আসামিকে সাথে নিয়ে সাংসদের ইফতার” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান টিপুসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের দেখিয়ে দেওয়ার হুমকী দিয়ে আসছিলো হেমায়েত হোসেন মোল্লা। 
সুত্রঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)