রেটিং পয়েন্ট ও ক্রিকেট র‌্যাঙ্কিংয়ের নিয়ম

আকন মোঃ বসির
আকন মোঃ বসির, প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:৩৫ এএম, ২ মার্চ ২০১৮

র‌্যাঙ্কিংয়ের নিয়ম
অনলাইন ডেস্কঃ অনেক ক্রীড়া প্রেমী আছে যারা ভালো খেলা বুঝে থাকেন। চায়ের দোকানে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেন। স্রম্পতি সময়ে বাংলাদেশ খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে এবং র‌্যাঙ্কিংয়ে বেশ উন্নতি করেছে। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বর্তমান রেটিং পয়েণ্ট ৯০ র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান ৭। তবে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৩৫১৮ এবং শ্রীলঙ্কার পয়েণ্ট ৬০৬৩ কিন্তু র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের এক ধাপ নিচে। প্রশ্ন উঠতেই পারে বেশি পয়েন্ট নিয়ে কেন শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে?

এই প্রশ্ন সমাধানের জন্য আমাদের আজকের আয়োজন-

সাধারণ ক্রিকেটপ্রমীদের মাঝে এই র‌্যাংকিং নিয়ে বেশ আগ্রহ থাকলেও বিষয়টা বুঝে উঠতে সমস্যা হয়। এর কারণও আছে, এই র‌্যাংকিং সিস্টেমটা ভালোই জটিল। ওডিআই আর টি-টোয়েন্টিতে এই দলীয় র‌্যাংকিং কীভাবে হিসেব করা হয় তা একটু সহজ করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম আজ।

ওডিআই ও টি-২০আই টিম র‌্যাংকিং সাধারণত ম্যাচ বাই ম্যাচ হিসাব করা হয়। যে দলের রেটিং যত বেশি সেই দল র‌্যাংকিংয়ে তত উপরে। যেকোনো দলের রেটিং=(মোট পয়েন্ট/মোট ম্যাচ)। সাধারণত সর্বশেষ ৩-৪ বছরের মধ্যে খেলা ম্যাচগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে কোন দলের পয়েন্ট হিসাব করা হয়। আইসিসির ১০ টেস্ট খেলুড়ে দেশ সরাসরি ওডিআই র‌্যাংকিং এ স্থান পায়। আর সহযোগী দেশগুলো প্রথমে একটা সেকেন্ডারি র‌্যাংকিং টেবিলে স্থান লাভ করে। সহযোগী দেশগুলোকে মূল টেবিলে জায়গা পেতে নিচের দুইটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করা লাগবে :

(১)আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে কমপক্ষে দুইটি ওডিআই জিততে হবে

(২)পূর্ণ সদস্য কোন দেশের বিপক্ষে কমপক্ষে একটি ওডিআই জিততে হবে এবং আইসিসির অন্য সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে খেলা কোয়ালিফাইং ম্যাচগুলোর কমপক্ষে ৬০% জিততে হবে

এই শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে পারলে সহযোগী দেশগুলো ওডিআই র‌্যাংকিং এ স্থান পায়।তবে টি-২০আই র‌্যাংকিং টেবিলে স্থান পেতে সব দলকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ম্যাচ খেলে আসতে হয়।

ওডিআই ও টি-২০আই র‌্যাংকিং এ পয়েন্ট হিসাবের নিয়ম একই। সাধারণত দুইটা কন্ডিশন মাথায় রেখে প্রতি ম্যাচ শেষে পয়েন্ট হিসাব করা হয়:

(১) দুই দলের রেটিং ব্যবধান ৪০ এর কম

(২)দুই দলের রেটিং ব্যবধান ৪০ বা এর বেশি

দুই দলের রেটিং ব্যবধান ৪০ এর কম: এক্ষেত্রে হিসাবটা তুলনামূলক সোজা। যেই দল জিতবে অপজিশন এর রেটিং থেকে ৫০ পয়েন্ট বেশি পাবে। যেই দল হারবে অপজিশন এর রেটিং থেকে ৫০ পয়েন্ট কম পাবে। ম্যাচ টাই হলে এক দল আরেক দলের রেটিং এর সমান পয়েন্ট পাবে। ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে ওটা কাউন্ট হবে না। ঐ ম্যাচের প্রাপ্ত পয়েন্ট মোট পয়েন্টের সাথে যোগ হবে। এরপর এই পয়েন্টকে ঐ ম্যাচসহ মোট ম্যাচ দিয়ে ভাগ দিয়ে আপনি দুই দলের রেটিং বের করতে পারবেন।

ধরুন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে বা টি-২০ ম্যাচ খেলবে। ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশের রেটিং ৯০ (২০ ম্যাচ খেলে ১৮০০ পয়েন্ট), আর অস্ট্রেলিয়ার রেটিং ১২০(৩০ ম্যাচ খেলে ৩৬০০ পয়েন্ট)। মানে রেটিং গ্যাপ ৪০ এর কম।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশ যদি ম্যাচ জিতে যায় তাহলে বাংলাদেশ পাবে ১২০+৫০=১৭০ পয়েন্ট। আর অস্ট্রেলিয়া পাবে ৯০-৫০=৪০ পয়েন্ট। তাহলে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট হবে ১৮০০+১৭০=১৯৭০; রেটিং হবে ১৯৭০/২১=৯৪ (আসলে ৯৩.৮১,দশমিকের ঝামেলা এড়াতে নিকটতম পূর্ণ সংখ্যা ধরা হয়)। এবার অস্ট্রেলিয়ারটা হিসাব করি।ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার মোট পয়েন্ট হবে ৩৬০০+৪০=৩৬৪০; রেটিং হবে ৩৬৪০/৩১=১১৭ (১১৭.৪২)।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়া জিতলে কি হত? চলুন হিসাব করি। অস্ট্রেলিয়া জিতলে অস্ট্রেলিয়া পাবে ৯০+৫০=১৪০ পয়েন্ট, আর বাংলাদেশ পাবে ১২০-৫০=৭০ পয়েন্ট।ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার মোট পয়েন্ট হবে ৩৭৪০; রেটিং হবে ৩৭৪০/৩১=১২১। বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট হবে ১৮৭০; রেটিং হবে ১৮৭০/২১=৮৯।

আর ম্যাচ টাই হলে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ পাবে ১২০ পয়েন্ট আর অস্ট্রেলিয়া পাবে ৯০ পয়েন্ট।ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট ও রেটিং হবে যথাক্রমে ১৯২০ ও ৯১।আর অস্ট্রেলিয়ার মোট পয়েন্ট ও রেটিং হবে যথাক্রমে ৩৬৯০ ও ১১৯।

যদি দুই দলের রেটিং ব্যবধান ৪০ বা এর বেশি: রেটিং গ্যাপ ৪০ বা এর বেশি হলে বেশি রেটিংধারী দলকে শক্তিশালী আর কম রেটিংধারী দলকে দুর্বল দল ধরে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে দুর্বল দল জিতলে নিজেদের রেটিং থেকে ৯০ পয়েন্ট বেশি পাবে, হারলে নিজেদের রেটিং থেকে ১০ পয়েন্ট কম পাবে। শক্তিশালী দল জিতলে নিজেদের রেটিং থেকে ১০ পয়েন্ট বেশি পাবে, কিন্তু হারলে নিজেদের রেটিং থেকে ৯০ পয়েন্ট কম পাবে। আর টাই হলে দুর্বল দল নিজেদের রেটিং থেকে ৪০ পয়েন্ট বেশি পাবে, শক্তিশালী দল নিজেদের রেটিং থেকে ৪০ পয়েন্ট কম পাবে। পরিত্যক্ত হলে যথারীতি ঐ ম্যাচ কাউন্ট হবে না। ঐ ম্যাচের প্রাপ্ত পয়েন্ট মোট পয়েন্টের সাথে যোগ হবে। এরপর এই পয়েন্টকে ঐ ম্যাচসহ মোট ম্যাচ দিয়ে ভাগ দিয়ে আপনি দুই দলের রেটিং বের করতে পারবেন।

ধরুন ভারত ও আফগানিস্তান ওয়ানডে বা টি-২০ ম্যাচ খেলবে। ম্যাচ শুরুর আগে ভারতের রেটিং ১২০ (৩০ ম্যাচ খেলে ৩৬০০ পয়েন্ট), আর আফগানিস্তানের রেটিং ৫০ (২০ ম্যাচ খেলে ১০০০ পয়েন্ট)। তাহলে যদি আফগানিস্তান জিতে যায় তাহলে আফগানিস্তান পাবে ৫০+৯০=১৪০ পয়েন্ট, আর ভারত পাবে ১২০-৯০=৩০ পয়েন্ট। ম্যাচ শেষে আফগানিস্তানের মোট পয়েন্ট হবে ১০০০+১৪০=১১৪০ পয়েন্ট; রেটিং হবে (১১৪০/২১)= ৫৪। ভারতের মোট পয়েন্ট হবে ৩৬০০+৩০=৩৬৩০; রেটিং হবে (৩৬৩০/৩১)=১১৭।

ভারত জিতলে ভারত পাবে ১২০=১০=১৩০ পয়েন্ট, আর আফগানিস্তান পাবে পয়েন্ট। ম্যাচ শেষে ভারতের মোট পয়েন্ট হবে ৩৭৩০; রেটিং হবে ৩৭৩০/৩১=১২০। আর আফগানিস্তানের পয়েন্ট হবে ১০৪০; রেটিং হবে ১০৪০/২১=৫০।

কিন্তু যদি ম্যাচটা টাই হয়ে যায়? তাহলে ভারত পাবে ১২০-৪০=৮০ পয়েন্ট, আফগানিস্তান পাবে ৫০+৪০=৯০ পয়েন্ট। ম্যাচ শেষে ভারতের মোট পয়েন্ট ও রেটিং হবে যথাক্রমে ৩৬৮০ ও ১১৯। আর আফগানিস্তানের মোট পয়েন্ট ও রেটিং হবে যথাক্রমে ১০৯০ ও ৫২।

প্রতি বছরের মে মাসে এ র‌্যাংকিং হালনাগাদ করা হয়। হালনাগাদের সময় সর্বশেষ ১২ মাসের অর্জিত পয়েন্ট এর ১০০% ও তার পূর্ববর্তী ২৪ মাসের অর্জিত পয়েন্টের ৫০% হিসাবে ধরা হয়। তারও পূর্ববর্তী ১২ মাসের অর্জিত পয়েন্ট তখন গণনার বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য,পাথরঘাটা নিউজের পাঠকদের উদ্দেশ্যে পরের পর্বে টেস্ট ক্রিকেটে রেটিং পয়েন্টর নিয়ম জানানো হবে।
এ এম বি/ পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)