বরগুনা-২ সুলতানা নাদিরার মানবিক কাজের ঋণ শোধ করবে নৌকায় ভোট দিয়ে

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ৫ জানুয়ারী ২০২৪ | আপডেট: ০৬:২৭ পিএম, ৫ জানুয়ারী ২০২৪

ছবিঃ পাথরঘাটা নিউজবরগুনার পাথরঘাটা বামনা বেতাগীতে মানবিক পরিবার হিসেবে পরিচিত গোলাম সবুর টুলু পরিবার। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মরহুম গোলাম সবুর টুলুর সহধর্মিণী সুলতানা নাদিরা জলি। তিনি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমুর খালাতো বোন।

জানা যায় স্বাধীনতার পর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-২ এর এ আসনটিতে প্রথমবারের মতো জয় ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম সবুর টুলু। ২০১৩ সালে তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এরপর উপনির্বাচনে তার পরিবারের কোন সদস্য নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে। এরপর থেকে তিনি পরপর দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন টুলুর সহধর্মিণী
সুলতানা নাদিরা।

গোলাম সবুর টুলুর মৃত্যুর পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরা গোলাম সবুর টুলু ফাউন্ডেশন ও স্মৃতি সংসদ নামে একটি মানবিক সংগঠন খুলেন। এর মাধ্যমে করোনা কালীন সময়ে লক্ষাধিক মানুষকে সহযোগিতা, অর্ধশত অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ও দরিদ্রদের মালামাল সহ দোকান ও বেটারি চালিত রিকশার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। এছাড়াও নানা দুর্যোগ কালীন সময়ে নগদ সহায়তার ব্যাবস্থা করেছেন এ পরিবারের সদস্যরা।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পধ্মা স্লুইস এলাকার মনির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী, সরকারের দেয়া ভাতা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে চলতে হিমশিম খেতাম। সুলতানা নাদিরার মাধ্যমে পধ্মা বাজারে একটি মালামাল সহ দোকান পাই‌। এ দিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আরেক উপকারভোগী নাসির উদ্দিন কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, কিছুদিন আগে আমার বেটারি চালিত রিকশা চোরে নিয়ে গেছে। আমি মাস খানেক অন্যের কাছ থেকে চেয়ে ভিক্ষা করে খেয়েছি। বিষয়টি সুলতানা নাদিরা জানতে পেরে আমাকে বেটারি চালিত রিকশা কিনে দিছে। আমি তার এ ঋণ কিভাবে শোধ করবো! তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এ ঋণ শোধ করতে চাই।

এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে প্রকাশ্যে পাশে থেকে সহযোগিতা করায় মানুষের কাছে মানবিক পরিবার হিসেবে পরিচিত হয়েছে সুলতানার পরিবারের সদস্যরা। তাই এ আসনের ভোটাররা এবার এই মানবিক পরিবারের কর্নধার সুলতানা নাদিরাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের ঋণ শোধ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বিএনএম (নোঙর প্রতীকে) প্রার্থী প্রফেসর ড. আবদুর রহমান খোকন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (হাতুড়ি প্রতীক) প্রার্থী জাকির হোসেন রাজু, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ প্রতীক) কামরুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব প্রতীক) মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা প্রতীকে) মো. আবুবক্কর সিদ্দিক ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা প্রতীক) প্রার্থী শাহ মো. আবুল কালাম।

এসব প্রার্থীর বিপরীতে মায়ের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সুলতানা নাদিরার ৩ মেয়ে। ইতিমধ্যে মা সুলতানা নাদিরার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, পথসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মিটিং করছেন তার ৩ মেয়ে ফারজানা সবুর রুমকি, সাবরিনা নাদিরা সবুর তিন্নি, ব্যারিস্টার হাছছানা সবুর তিয়াশা।

সুলতানা নাদিরার বড় মেয়ে ও জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ফারজানা সবুর রুমকি আজকের পত্রিকাকে জানান, আমার বাবা এই এলাকার প্রতিটি মানুষের জন্য ভাবতেন। বাবার মৃত্যুর পর তার নামে একটি মানবিক ফাউন্ডেশন খুলে সেই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সহযোগিতা করে বাবার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছি।

সুলতানা নাদিরা আজকের পত্রিকাকে জানান, আমার ছোট ভাই রিংকু ৭৫ সালের সেই কালো রাতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে শহীদ হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। আমার স্বামী এই জনপদের মানুষের জন্য ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর আমারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। আশাকরি আগামী ৭ জানুয়ারি এই এলাকার ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে আমাকে বিজয় করবে।

উল্লেখ্য এই আসনে ভোটার সংখ্যা মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৪৭ জন। এরমধ্যে পাথরঘাটায় ১ লাখ ৪১ হাজার ২৪৯ জন, বামনায় ৬৫ হাজার ৪৬৭ জন ও বেতাগীতে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৩১ জন ভোটার। ভোট গ্রহণের জন্য ১১৪টি ভোটারকেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)