“প্রসঙ্গ শাবনূর”বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৮

শাবনূর
বাংলা ফিল্মের ইতিহাসে যে
কয়েকজন নায়িকা তাদের স্নিগ্ধ
মুখখানা দর্শক হৃদয়ে গেঁথে দিতে সক্ষম
হয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম এক নাম
“শাবনূর!” ক্যারিয়ারের প্রতিটি ভাঁজে
তার রাজকীয় জৌলুশতা চোখে পড়ার
মতো!
তের বছর বয়সের একটা বাচ্চা মেয়ে
চাঁদনী রাতে বাংলা ফিল্ম দুনিয়ায়
এসে হাজির হয়েছিল!
সেই রাতে সামান্য আমাবস্যা থাকলেও তার বর্ণীল আলো ছিল সেই বিদঘুটে অন্ধকারের কাছে ম্লান!
তাইতো বছর ঘুরেই বাংলার রাজপুত্র
সালমানের রাজকুমারী হিসেবে সে সারা বাংলায় আলোড়ন তোলে!
সমস্ত চিত্রজগত সালমান-শাবনূর বন্দনায় ডুবে গিয়েছিল!
ইতিহাস তার সাক্ষী আছে!
কিন্তু সময়ের সেরা এই জুটির সাফল্যে
ঈর্ষান্বীত মহল বরাবর শাবনূরের বিপক্ষ
ছিল!
তাইতো অজানা রহস্যে খুন হওয়া
সালমান হত্যার দায় পড়লো তার কপালে!
অসহায় মেয়েটি তখন কোথায় যাবে
ভেবে পায়নি!
চারদিকে আতঙ্ক! তাকে নিঃস্ব করার
অপচেষ্টা!
অতঃপর একটা সময় নিজেও পৃথিবীকে
বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন!
কিন্তু সত্যের মহিমা যার মাঝে আলো
ছড়াচ্ছে তাকে হারাতে দেয়নি সিনেমা পাগল দর্শক!
.
টাইটানিক ফিল্মের মতোই জ্যাককে
(সালমান) হারিয়ে রোজকে(শাবনূর)
নিয়েই দর্শক তাদের স্মৃতিময় কালজয়ী
জুটিকে স্মরণ করার প্রতিক্রিয়া জানান দেন, সাপোর্ট দেন তাকে নতুন করে সবকিছু শুরু করার!
আর তখনই আলোকিত শাবনূরের নতুন এক অধ্যায় রচিত হয়!
নায়ক নির্ভর নায়িকার সীল মুছে দিয়ে
এই ধাপটি একেবারেই নতুন নতুন মুখ
নিয়ে জুটিতে তিনি বাজিমাৎ করেছেন!
.
.
ক্যারিয়ারের প্রতিটি ভাঁজেই দারুণ সব চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি সালমানের একমাত্র যোগ্য সহকর্মী!
.
.
একের পর এক গল্প প্রধান সিনেমা, নারী প্রধান চরিত্র আর অশ্লীল যুগে শালীন উপস্থিতি দিয়ে তিনি হয়ে উঠেন বাংলা সিনেমার এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাজ্ঞী!
.
.
এই শাবনূর ছিল বলেই আমরা পেয়েছি
“মাটির ফুল, কাজের মেয়ে, কাল সকালে, নিরন্তর, বাঙলা, দুই নয়নের আলো, সুন্দরি বধূ, কে অপরাধী, মধুর মিলন, আমার স্বপ্ন তুমি, আনন্দ অশ্রুর মতো গল্প প্রধান কালজয়ী সিনেমা!
শাবনূর ছিল বলেই “নদী, মালতী,
দোলা, সেঁজুতি, ফুলবানু, পারুল,
সিমা,খুশি, তিঁথি”রা আজো দর্শকের
চোখ ভিজিয়ে যায়!
.
সময়ের ধারাবাহিকতায় মানুষ ক্রমেই
নিজের পরিবর্তন দেখতে পায়! কখনো
সেই পরিবর্তন কন্ট্রোল করার দায়িত্ব
নিজের কাছে থাকে, কখনো তার দায়িত্ব চলে যায় ঈশ্বরের হাতে!
তাইতো ঈশ্বরের দেয়া থাইরয়েড প্রব্লেমের জন্য সময়ের সবচেয়ে স্টাইলিশ, তাক লাগানো গ্ল্যামার গার্ল শাবনূর একটা সময় তার ফিটনেস নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেনি!
মেদহীন ছিপছিপ গড়নের দেহটা হঠাৎ
করেই স্থূলতায় রূপ নেয়!
তারপর বিয়ে, বাচ্চা সবমিলিয়ে তিনি
তার ফিটনেস অনেকটাই হারিয়ে
ফেলেন!
কিন্তু ২০ বছরের রাজকীয় ক্যারিয়ার
কি তাতে মিথ্যা হয়ে যাবে?
.
.
না! মিথ্যা হয়ে যায়নি! এখনো হঠাৎ
অনিয়মিত প্রিয় নায়িকার হৃদয়স্পর্শী
হাসিটা খুঁজে ফেরে দর্শক!
এখনো তাদের চোখে শাবনূর চিরসবুজ,
এখনো তার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন দেখবে বলে আশায় বুক বেঁধে আছে হাজার সিনেমাপ্রেমী দর্শক!
.
কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যিনি
হাজার নিন্দাকে পদলিত করে টানা ১৭
বছর নাম্বার ওয়ান বিজয়ের মুকুট পরেছিলেন, আজ বাস্তবতার কাছে
পরাজিত এই শাবনূরের ফিটনেস নিয়ে
কিছু নোংরা মানুষ নোংরামি করে যাচ্ছে!
যে নায়িকাকে বাংলা সিনেমার দেবী বলে আখ্যায়িত করা হয় তাকে অসম্মান করতে তাদের বুঁক একবারও কম্পিত হয় না!
.
আজ সেই নোংরা মনের মানুষগুলার
উদ্দেশ্য করে বলছি, “আরে, শাবনূরকে নিয়ে উল্টাপাল্টা ……. যাই বলিস না কেনো, ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে!
.
তার অনবদ্য পারফর্ম, অনাবিল সৌন্দর্য
আর হৃদয়স্পর্শী হাসিটা এখনো দর্শককে
আন্দোলিত করে যায়! বড় পর্দায় নেই,
অথচ স্যাটেলাইট চ্যানেল সবসময়
শাবনূরময় হয়ে আছে!
আশ্চর্যজনক কথা হলো, কতো পুরনো ছবি, কিন্তু সেইগুলোই বারবার সর্বোচ্চ
টি.আর.পি পেয়ে যাচ্ছে!
.
এটাই শাবনূরের ম্যাজিক!
শাবনূর এমন একটি নক্ষত্রের নাম, যার
কোনো কেনা সাংবাদিক নেই, যে সবসময় তাকে নিয়ে বড় বড় মনগড়া কথা
লিখে নিউজ ছাপিয়ে বেড়াবে!
.
শাবনূর সেই তারকা যার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে নাটকে অভিনয় করতে হয়নি!
.
শাবনূর সেই তারকা যার জন্য সময়ের নাম্বার ওয়ান অশ্লীল ভিলেন ডিপজলও বাধ্য হয়েছিল ভাল অভিনেতা হিসেবে নিজেকে সামান্য প্রকাশ করতে! “গুন্ডার প্রেম” মুভিতে শাবনূরের প্রেমিক হিসেবে সামান্য স্ক্রিন শেয়ার করতে নিজেই এই ফিল্মের গল্প লেখেন!
.
শাবনূর সেই তারকা যে কখনোই অশ্লীল আইটেম গানে নাচেনি!
.
শাবনূর সেই তারকা যে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে কখনোই কোন ইন্টার্ভিউ প্রোগ্রামে মুখ দেখায়নি!
.
মূলত, তার তুমুল জনপ্রিয়তার কাছে তার সবকিছুই ছিল আলোকিত! তাই, আজ সে দর্শকদের হৃদয়ের ক্যানভাসে এতোটা সুন্দরভাবে মিশে গেছে যে, সেখান থেকে হাজার চেষ্টা করেও তার নাম মুছে দেয়া সম্ভব না!
.
শাবনূর মুটিয়ে গিয়েও তার একটা
ইন্টার্ভিউ, তার একটা নিউ পিক
পাওয়ার জন্য দর্শক থেকে সুধিমহলে
যেভাবে হাহাকার পড়ে যায়, তা
আজকালের ইন্টারনেট যুগের আধুনিক
নায়িকারাও সেই রেশ তৈরি করতে
পারেনি!
.
শাবনূরকে কেনো বাণিজ্য লক্ষি বলা
হতো জানেন, কারণ শাবনূর তার
জনপ্রিয়তা এতোটাই জোরালো করে
রেখেছিল যে, সে ফিল্মে আছে এটা
হলেই হয়! নায়ক কে তা দেখার প্রয়োজন
ছিল না দর্শকদের!
তাই সে বারবার নতুনদের নিয়ে রিক্স
নিয়েছেন! সফল হয়েছেন শতভাগ!
শেষের দিকে থাইরয়েড প্রব্লেম বেড়ে
গিয়ে স্থূলতা বেড়ে যাওয়ায় হয়তো নতুন জুটিতে তেমন সাড়া জাগাতে পারেননি! কিন্তু নতুন জুটিতে তার ক্যামেস্ট্রি সবসময় ছিল আলোচনার তুঙ্গে!
.
শাবনূর তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে পুরো
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রাজত্ব করেছিল বলেই, “মানিক, লাভলুরা” এখনো তার আশায় গল্প তৈরি করে বসে আছেন!
চরিত্রগুলোর সাথে এতোদিন তার
ফিটনেস মানানসই হয়নি বলেই ঘোষণা
দিয়েও তারা চুপ হয়ে আছেন!
তারা তো চাইলে শাবনূরকে বাদ দিয়ে
অন্য নায়িকাকে নিয়েই চালিয়ে
দিতে পারে!
কিন্তু গল্পগুলো যে শাবনূরের জন্য! তাই
তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতেও তারা
রাজি!
.
শাবনূর মুটিয়ে গিয়েও দেশে এলেই যেভাবে কাজের অফার তার ঘরে
অটোমেটিক চলে আসে, তার সমসাময়িক পপি, পূর্ণিমারা ফিট
থেকেও বেকার বসে আছে!
.
শাবনূরের ব্যক্তিত্ব, সহকর্মীর সাথে
তার সুন্দর আচরণ সবসময় তাকে
শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে রেখেছে!
আজ তো এই আলোটা নেই
বলেই মনে রাখার মতো কোন ফিল্ম
নেই! সিনেমা আজ ছিঃনেমা হয়ে
গেছে!
শাবনূর কেমন ধূমকেতুর নাম সেটা আরো
টের পাবেন সময়ের সাথে সাথে! বড়
পর্দায় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র নিয়ে খেলা করা একমাত্র নায়িকা হিসেবে তিনি যুগের সাথে যে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখে গেছেন তার
রেশ কখনোই বিলীন হয়ে যাবেনা!
তাই শাবনূরের মতো তারকাকে নিয়ে
যারা ব্যঙ্গাত্মক আচরণ করে, তাদের
ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এমনিতেই সামনে চলে আসে!
রাস্তার প্রভুহীন কুকুরের মতোই তাদের
চাপাবাজি আর নোংরামি মেশানো
আর্তনাদ দিন শেষে কালের
গর্ভেবিলীন হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি
খায়!
.
বাজার থেকে কেনা দামী চাউলের
মধ্যেও যেমন অনেক সময় পাথর খুঁজে
পাওয়া যায়, তেমনি একজন শাবনূরের
ক্যারিয়ারেও দু’একটা গল্পহীন
বস্তাঁপচা মুভি থাকবে এটাই
স্বাভাবিক!
কিন্তু তাতে তার আলোকিত অধ্যায়
ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে এই স্বপ্ন দেখা
চামচিকার কাজ!
.
আরে,
যে নায়িকা ক্যারিয়ারের চিন্তা না
করে বারবার নতুনদের নিয়ে এগিয়ে
গেছেন সে তো এমনিতেই এক জলন্ত
আগ্নেয়গিরি! তার নতুন করে প্রমাণ
দিতে হয় না!
.
শাবনূর যদি ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতো
তবে আজকের কথিত সুপারস্টার বলে
কেউ কেউ লাইভে এসে চাপামারতে
পারতো না!
শাবনূর এক নায়কে বন্ধী থাকলে অপু
দিদির মতো ৮০+ বস্তাপঁচা করে অতঃপর সেই নায়ককে নিয়েই বোমা ফাটাতে পারতেন!
.
তার জন্য কতো নায়ক ব্যর্থ প্রেমিক
উপাধি পেয়ে বনবাসে গেছে তার করুণ
ইতিহাস জাতি ভাল করেই জানে!
শাবনূর যেমন চমৎকার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন
মানুষ, তেমনি চমৎকার চরিত্রের অধিকারী ছিলেন! তাই আজ সে নবীনদের আইডল হিসেবে অভিভূত হয়েছেন!
.
.
কাজেই, শাবনূরের সাথে পাঙ্গা নেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই, আর ভবিষ্যৎকালেও থাকবেনা! শাবনূর সিনেমায় অনিয়মিত থেকে এখনো তার যে পপুলারিটি আছে, বর্তমান স্লিম নায়িকারা শরীর দেখিয়েও সেই ক্ষেত্র তৈরি করতে পারেনি!
শাবনূরকে এখনো নায়িকা হিসেবেই দেখতে চাই দর্শক, সে মুটিয়ে গেছে এটা যেনো কারো মনেই নেই! সবার চোখে
কল্পনাবিলাসী হয়েই শাবনূর তার সেই
রহস্যময় সৌন্দর্য ধরে রেখেছে! অভিনয়
আর শালীনতার তেজে সে বরাবর
পুরস্কারের সকল আসর আলোকিত করে
রেখেছিল! শুধু জাতীয় পর্যায়ে লবিং
করতে পারেনি বলেই বারবার বঞ্চিত
হয়েছে! কিন্তু অন্য সকল ক্ষেত্রে দর্শক
তাকে ঢেলে দিয়েছেন!
তাই তিনি যদি আর সিনেমা নাও করেন, তবুও তার গড়া রাজত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা!
কারণ একজন শাবনূর বাংলা সিনেমার
ইতিহাস হয়ে আছেন! সেই ইতিহাস
তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগ যুগ!
.
পরিশেষে একটা গুড নিউজ দিয়ে শেষ করছি,
শাবনূর অলরেডি তার ফিটনেস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন! আর, মাত্র কয়েক মাস……… হয়তো ফিরছে নতুন এক শাবনূর!
যার হাতে রচিত হবে ঢালিউডের আরেক ইতিহাস………. ! আমি নবীন….. দেখিনি শাবনূরের রাজকীয় অধ্যায়! কিন্তু যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই তার অভিনয়, স্নিগ্ধ হাসি আর লাস্যময়ী সৌন্দর্য আমার হৃদয়কে গ্রাস করে রেখেছে! আমি হতভাগা…… কারণ, এখন পর্যন্ত শাবনূরের কোন ফিল্ম হলে দেখার সুযোগ হয়নি! আমি এখন অনেকটাই আশাবাদী…….. আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শাবনূর ফিরবে এবং রাজকীয় বেশেই ফিরবে!
তার সাম্প্রতিক সময়ের কিছু পিকচার অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেছে! সেখানে দর্শক এবং সিনেমাপ্রেমীরা যেভাবে তাকে পুনরায় পর্দায় দেখতে চেয়ে অসাধারণ সব মন্তব্য করেছে তাতে আমি মুগ্ধ!
এই হল অভিনেত্রী……… যে শরীর দেখিয়ে নয়, দক্ষ অভিনয় দিয়ে সবার মনে দাগ কেটে দিয়েছে! তাই দীর্ঘ বিরতিতেও তার রেশ সামান্যও বিলীন হয়ে যায়নি!
আমি শাবনূরের ক্ষুদ্র ভক্ত হিসেবে স্বার্থক, কারণ, আমি এমন তারকার ভক্ত যে তারকার বাস সবার অন্তরে!
আশায় আছি নতুন করে শাবনূরের আরেক ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার জন্য!
এ এম বি। পি এন

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)