আজ রাতে পবিত্র শবেমিরাজ জেনে নিন শবেমিরাজ এর ফজিলত।

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৯:২৩ এএম, ৩ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ১০:০২ এএম, ৩ এপ্রিল ২০১৯

শবেমিরাজ
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে আজ রাতে সারা দেশে পবিত্র শবেমিরাজ উদযাপিত হবে।
রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সাঃ-এর কর্মময় জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও তাঁর আদেশ-উপদেশ মেনে চলা উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে আমাদের অবশ্য কর্তব্য। হজরত রাসূল সাঃ-এর জীবনে সংঘটিত ‘শবেমিরাজ’ এমন একটি বাস্তব অত্যাশ্চর্য ঘটনা, যার মাঝে আমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম শিক্ষা। বছর ঘুরে শবেমিরাজ আসে আমাদেরকে নবীজী সাঃ-এর সেই মহান ঘটনাকে স্মরণ করাতে। আমরা সাধারণত ওই পবিত্র রজনীটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে কাটিয়ে থাকি। কিন্তু পবিত্র শবেমিরাজের মাঝে আমাদের জন্য যে উত্তম শিক্ষণীয় ধর্মীয় বিষয় নিহিত আছে, তা অনেকেই গভীরভাবে চিন্তা বা বিশ্লেষণ করি না।

‘মিরাজ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ­ সিঁড়ি, ঊর্ধ্ব গমন, আরোহণ। ইসলামী পরিভাষায় হজরত রাসূল সাঃ-এর মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে (জেরুসালেমে) উপনীত হওয়া এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশ ভ্রমণ করে মহান আল্লাহ পাকের একান্ত সান্নিধ্য লাভ করার ঘটনাকে ‘মিরাজ’ বলা হয়। নবুয়তের দশম বর্ষ, অর্থাৎ হজরত রাসূল সাঃ-এর পঞ্চাশ বছর বয়োক্রমকালে আরবি রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মিরাজ নামক এই মহা ঘটনা সংঘটিত হয়। ২৪ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা সাহাবি মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে (বন্ধুকে) রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল মসজিদুল হেরাম থেকে আল মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-১)। বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত শরিফসহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে ‘মিরাজ’-এর বর্ণনা রয়েছে। সংক্ষেপে ঘটনাটি এ রকম­ হজরত রাসূল সাঃ চাচা আবু তালিবের গিরি সঙ্কটে উম্মে হানি রাঃ-এর গৃহে ঘুমিয়েছিলেন। রজনী দ্বিপ্রহরে জিব্রাঈল আঃসহ তিনজন ফেরেস্তা তাঁর কাছে আগমন করেন এবং তাঁকে কাবা প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা আলোর গতির চেয়ে ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন ‘বুরাক’-এ আরোহণ করে যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হন। সেখানে যাত্রাবিরতিপূর্বক দুই রাকাত সালাত আদায় করেন। অতঃপর সেখান থেকে বুরাকে আরোহণ করে ঊর্ধ্বাকাশে ছুটে চলেন। মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা প্রথম আকাশে উপস্থিত হন এবং সেখানে হজরত আদম আঃ-এর সাথে হজরত রাসূল সাঃ-এর দেখা হয়। হজরত আদম আঃ তাঁকে অভিনন্দন জানান ও উভয়ের মাঝে সালাম বিনিময় হয়। একইভাবে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তমাকাশে যথাক্রমে হজরত ঈসা আঃ, হজরত ইউসুফ আঃ, হজরত ইদ্রিস আঃ, হজরত হারুন আঃ, হজরত মূসা আঃ ও হজরত ইব্রাহীম আঃ-এর সাথে হজরত রাসূল সাঃ-এর দেখা হয়। আসমানী কাবা বায়তুল মামুরে হজরত ইব্রাহীম আঃ উপস্থিত ছিলেন। প্রতি দিন চল্লিশ হাজার ফেরেস্তা এখানে ইবাদত করতে আসেন। একবার যার আসার সুযোগ হয় কিয়ামত পর্যন্ত আর দ্বিতীয়বার তাঁর সেখানে আসার সুযোগ হয় না। তখন হজরত রাসূল সাঃ-কে বেহেশত ও দোজখ দেখানো হয়। এখানে জিব্রাঈল আঃ হজরত রাসূল সাঃ-এর সঙ্গ ত্যাগ করেন। তারপর নবীজী সাঃ যেখানে উপস্থিত হলেন, তা এক মহাআলোক বা জ্যোতির্ময় জগৎ। অপূর্ব জ্যোতিতে এ স্থান চিরস্নিগ্ধ ও চির মনোরম। এ যেন এক ধ্যান ও কল্পনার জগৎ। তথায় হজরত রাসূল সাঃ-কে সত্তর হাজার নূরের পর্দা অতিক্রম করানো হয়। তিনি আরো ঊর্ধ্বে অগ্রসর হয়ে পবিত্র আরশের সন্নিকটে পৌঁছেন এবং আরশ মোবারকে আরোহণপূর্বক মহান আল্লাহ পাকের সাথে একান্তে মিলিত হন। উভয় বন্ধুর মাঝে প্রেম বিনিময় এবং প্রয়োজনীয় আলোচনা শেষে হজরত রাসূল সাঃ-এর কাছে সৃষ্টি জগতের যাবতীয় রহস্য উন্মোচিত করা হয়। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি [রাসূল সাঃ] তাঁর (আল্লাহর) নিকটবর্তী হলেন, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মাঝে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা আরো কম। তখন আল্লাহ তাঁর বন্ধুর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা করলেন। যা তাঁর অন্তঃকরণ অস্বীকার করেনি’ (সূরা নাজম, আয়াতঃ ৮-১১)। হজরত ইবনে আব্বাছ রাঃ থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূল সাঃ বলেছেন, ‘আমি আমার রব আল্লাহ্‌ ইজ্জতকে দেখেছি’ (তাফসিরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা-১২৩, ‘দৈনিক ইত্তেফাক তাং ১৮-৭-০৮ ‘ধর্ম চিন্তা’ পাতায় ড. নজরুল ইসলাম খাঁন আল মারুফ লিখিত ‘মিরাজ’ প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)। মিরাজ শেষে হজরত রাসূল সাঃ তাঁর উম্মতদের জন্য স্বর্গীয় নিয়ামত দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান নিয়ে কাবা প্রাঙ্গণে ফিরে আসেন। এসে দেখলেন জগৎ যেমন চলছিল তেমনি চলছে।

হাদিস বিশারদ, তাফসিরকারক ও তাসাউফ বিজ্ঞানীদের মতে, হজরত রাসূল সাঃ জাগ্রত অবস্থায় সশরীরেই মিরাজ গমন করেছিলেন। তা না হলে বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন মক্কায় এত হইচই পড়ার কথা নয়। কারণ স্বপ্নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের বেলায়ও অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে। এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করে না। তিনি যদি বলতেন যে, তিনি স্বপ্নে মিরাজ গমন করেছিলেন, তাহলে এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলত না। অতএব তিনি যে জাগ্রত অবস্থায় মিরাজ গমন করেছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।

হজরত রাসূল সাঃ মিরাজ থেকে ফিরে এসে ঘোষণা করলেন­ ‘আস্‌সালাতু মিরাজুল মু’মিনিন’ অর্থাৎ- সালাত মুমিন ব্যক্তির জন্য মিরাজস্বরূপ। তিনি আরো বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির দিল (হৃদয়) আল্লাহর আরশ।’ হাদিসদ্বয়ে ‘মুমিন’ ব্যক্তির উচ্চ মর্যাদা ঘোষিত হয়েছে। কাজেই আমাদের মুমিন হওয়ার শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। কী করে মুমিন হওয়া যায় সে সম্পর্কে হজরত রাসূল সাঃ বলেন, ‘ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাকে তার স্ত্রী, পুত্র, পরিজন ও ধনসম্পদ অপেক্ষা বেশি ভালোবাসতে না পারবে।’ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন, ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ্‌, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়। কেউ আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূল ও মুমিনগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে আল্লাহর দলই তো বিজয়ী হবে’ (সূরা মায়িদা, আয়াতঃ ৫৫-৫৬)। তাই মুমিন হয়ে কি করে আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করা যায় সে শিক্ষা আমাদের নিতে হবে। আর মুমিন হওয়াই মিরাজের প্রকৃত শিক্ষা।

মিরাজ রজনীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। এ রাত্রিতে হজরত রাসূল সাঃ আল্লাহপাকের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছিলেন বলে এ রজনীর মর্যাদার উসিলায় আল্লাহ দয়া করে তাঁর বান্দাদের মার্জনা করে থাকেন। বেশি করে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। হজরত রাসূল সাঃ-এর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনাপূর্বক তাঁর প্রতি দরূদ ও শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করে অফুরন্ত রহমত ও বরকত লাভ করা যায়। আল্লাহ দয়া করে আমাদের ‘সালাতে মিরাজ’ লাভের শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দান করুন।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)