রাস্তায় গোয়াল ঘর, চলাচলে বাধা

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ২৪ মার্চ ২০১৮

রাস্তায় গোয়াল ঘর, চলাচলে বাধা
গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের তৈরিকৃত রাস্তায় মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। উপজেলার দোয়ানী গ্রামে লাখ টাকা ব্যয়ে নাগরী ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক রাস্তাটি এখন ওই গ্রামের মৃত পেদ্রু ক্রুশের ছেলে সেন্টু আন্তনী ডি ক্রুশের গবাদি পশুর দখলে। শুধুমাত্র একটি পরিবারের জন্য একদিকে যেমন ভূক্তভোগীরা রাস্তার সুবিধা না পেয়ে ওই এলাকায় জমি ক্রয় করে পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে রাস্তা না পেয়ে বেশ কয়েকটি পরিবার গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকা শহরে চলে গেছে।

জানা গেছে, উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডের দোয়ানী গ্রামের সেন্টু ক্রুশের বাড়ী থেকে ষ্টেনলী রোজারিও’র বাড়ী পর্যন্ত রাস্তার দাবি উঠে। দীর্ঘদিন যাবৎ রাস্তার জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি পরিবারের যেমন চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল তেমনি ওই এলাকায় নতুন করে প্লট ক্রয় করা কয়েকজন মালিক রাস্তার জন্য বাড়ী করতে পারছেন না। দীর্ঘ দিনের এই দাবি আদায়ে ২০১৩ সালে দোয়ানী গ্রামের ভূক্তভোগী রবি রোজারিও, রেমল পিউরী, সুশীল রোজারিও, পারুল মারিয়া গমেজ, হিউবার্ট পিরিচ, জেমস কোড়াইয়া, ষ্টেনলী রোজারিও, সুনীল চালর্স রড্রিগস মিলে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সিরাজ মোড়লের কাছে রাস্তার জন্য আবেদন করেন।

চেয়ারম্যান আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অরুণ রোজারিও এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কোহিনূর বেগমের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন। সভায় সেন্টু ক্রুশের বাড়ী থেকে ষ্টেনলী রোজারিও’র বাড়ী পর্যন্ত ইটের সলিং রাস্তার উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় লাখ টাকা। কিন্তু ওই রাস্তার বাধা হয়ে দাঁড়ায় দোয়ানী গ্রামের সেন্টু আন্তনী ডি ক্রুশ। পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংসদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির ধারস্থ হন।

প্রতিমন্ত্রী জনগণের স্বার্থে বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও সেন্টু মেনে না নিলে বিষয়টি খ্রীস্টান ধর্মের ন্যায় ও শান্তি কমিটি হিসেবে পরিচিত নাগরী প্যারিস কাউন্সিলে গড়ায়। নাগরী প্যারিস কাউন্সিলের তৎকালীন সভাপতি ও ফাদার সিপ্রিয়ান রোজারিও সেন্টু আন্তনী ক্রুশকে একাধিকবার ডেকেও তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা পাননি এবং ওই ব্যাপারে সমাধানে ব্যর্থ হয়ে আবেদনকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
দোয়ানী গ্রামের ষ্টেনলী রোজারিও’র স্ত্রী শেফালী গমেজ প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী প্রবাসে চাকুরী করেন। দুই ছেলে নিয়ে তারা ঢাকায় থাকতেন। সেন্টু আন্তনী ক্রুশ সম্পর্কে তার ননদের স্বামী। তারা সেন্টুর অনুরোধে তার বাড়ীর পশ্চিম দিকে জমি ক্রয় করে বাড়ী তৈরির জন্য। আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে চলাচলের রাস্তা দিবে মৌখিক কথার ভিত্তিতে সেন্টুর কাছ থেকে জমি নিয়ে বাড়ী তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই বেরিয়ে আসেন সেন্টুর আসল রূপ। চলাচলের রাস্তায় সে প্রায়ই বাধা প্রদান করত। রাস্তায় কাটা ও বেড়া দিয়ে রাখত এবং অন্যদিক দিয়ে চলাচল করতে বলত। কিন্তু তার ছেলেরা স্কুলে গেলে কাটা ও বেড়া অতিক্রম করে অনেক কষ্টে স্কুলে যাওয়া-আসা করত। পাশের বাড়ীর উপর দিয়ে ও অন্যের ফসলী জমির উপর দিয়েও চলাচল করত। কিন্তু সেন্টুর কাছে রাস্তার কথা বললে সে রাস্তার জন্য অতিরিক্ত টাকা দাবি করত। এভাবে তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তারা পূনরায় ঢাকা ফিরে যান।

তিনি আরো জানান, শুধু তারা নয়, সেন্টু ও তার পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নিজ গ্রাম ও বাড়ী ছেড়ে তারা এখন রাজধানীতে বাসা ভাড়া করে থাকেন। তাছাড়া রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে সেন্টু ও তার পরিবার দ্বারা তিনি হামলার শিকারও হন। পরে এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লাখ টাকা উন্নয়ন ব্যয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কর্র্র্তৃক ইটের সলিং করা তৈরি রাস্তায় সেন্টু গবাদী পশু দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছেন। রাস্তার মাঝে পানি, খড় ও ঘাস খাওয়াতে গরুর জন্য চারি ও খাঁচি তৈরি করে সাধারণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছেন।

নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়া জানান, রাস্তাটি তৎকালীন চেয়ারম্যান পরিষদ কর্তৃক রেজুলেশন মোতাবেক রাস্তা তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই রাস্তার ইট খুলে সেন্টু রাস্তার উপর গরুর জন্য গোয়াল ঘর তৈরি করে। পরে সেই ইট খুলে পূনরায় তিনি রাস্তা তৈরি করেন। শুনেছি ওই রাস্তায় আবারও সেন্টু ও তার পরিবার গবাদি পশু দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। তবে জনসাধারণের স্বার্থে তাদের নিয়ে খুব দ্রুত রাস্তাটি দখল মুক্ত করবেন বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সেন্টু আন্তনী ক্রুশ জানান, যাদের কাছে তিনি জমি বিক্রি করেছেন তাদের কাউকেই রাস্তা দেওয়ার কথা ছিল না। তার মালিকানাধীন সম্পত্তির উপর দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তৈরি রাস্তায় মানুষ চলাচল করবে তা হবে না। তাই তিনি তার জমিতে গবাদী পশু পালন করছেন বলে জানান।
এ এম বি / পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)