ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে রাতের তাণ্ডবে আগুন ও ভাঙচুর: একটুর জন্য বেঁচে গেলেন উপাচার্য

নোমান আল সাকিব
নোমান আল সাকিব, ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৯:৪২ এএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১০:০০ এএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮

ভাঙচুরকৃত বাসা ও আগুনে জ্বলছে বাসভবনে থাকা গাড়ি
ঢাকা: কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই রবিবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা ভাঙচুর চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামানের বাসভবনে।

এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে আন্দোলনকারীরা ভেতরে ঢুকে গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। উপাচার্যের বাসভবনের আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া, বাসভবনের আশপাশেও একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই তাণ্ডব চলে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে।
---
ঢাবি উপাচার্যের পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাত ১টার দিকে এক থেকে দুই হাজার বিক্ষোভকারী বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা মূল গেট ভেঙে ফেলে এবং দেয়ালের তারকাঁটা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়ে। তাদের হাতে রড, হকিস্টিক, লাঠি ও বাঁশ ছিল। আমরা ভয়ে বাসভবনের পেছনে পালিয়ে যাই। তবে হামলায় উপাচার্যের পরিবারের কেউ আহত হননি বলে জানান তিনি।

প্রথমে নীরব দর্শক ছিলেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। পরে সপরিবারে বাড়ির কোনো এক আঙ্গিনায় লুকিয়ে থেকে প্রাণে বেঁচেছেন। ধংসের পর আর ঘরে ঢুকতে পারেননি তিনি। বাইরে একটি চেয়ারে প্রায় নির্বাক হয়ে বসেছিলেন শেষ রাতেও।
---
সোমবার সকালে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা বাড়ি তছনছ হয়ে রয়েছে। আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। বিভিন্ন কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এখানে-ওখানে। গোটা বাড়ির বিভিন্ন ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে জানালার কাঁচের টুকরা। বাসভবনের সামনের চত্বর থেকে দোতলা পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গেটে প্রবেশ করার পর থেকে দুই পাশের চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ ভেঙে পড়ে রয়েছে। বাসভবনের মূল ভবনের ভেতরে ও বাইরের সব আসবাবপত্রও হামলাকারীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। এসি, টেলিভিশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি কাগজপত্র, চেয়ার টেবিল, সোফাসেট, কাচের জিনিসপত্র, ফুলের টব, ছবি- সবকিছুই মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।এমনকি ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বাথরুমও।

উপাচার্যের বাসভবনে থাকা ঢাবি ইসলামের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান বলেন, বাসভবনের গেট ভেঙে আক্রমণকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে।

বাসভবনের সামনের অংশে থাকা কিছু চেয়ার-টেবিল থেকে সকালেও আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের আক্রমণে ভাঙচুর হওয়া উপাচার্য বাসভবন দেখতে আসেন ঢাবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
---
ঢাবি দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, ‘ভিসির বাসভবন ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বাড়ি আক্রান্ত হবে, এটি অকল্পনীয়। এটা আন্দোলনের অংশ হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিসির বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। যারা এর ক্ষতি করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’

ভিসির বাসভবনে দুটি গাড়ি ভাঙচুর ও দু’টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভাংচুর করা দুই গাড়ির পার্সও চুরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বুদ্ধিজীবী পরিবারের সভাপতি আবু মুসা মো. মাসুদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ির নাম্বার ঢাকা মেট্রো-চ-১৩৯০৬৬। এই গাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কখনও এটা করতে পারে না।’ তিনি জানান, পুরো বাসভবনের ছোট-বড় ১০টি কক্ষ রয়েছে। প্রায় সব কক্ষতেই ভাঙচুর করা হয়েছে।

এদিকে, ঢাবির চারুকলা অনুষদের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্যে বিভিন্ন ধরনের বাঁশ ও কাঠ আনা হলেও প্রায় দেড়শ বাঁশ এবং অসংখ্য কাঠের টুকরো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। চারুকলা অনুষদের নিরাপত্তারক্ষী মো. আলী বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে চারুকলার দুটি গেট ভেঙে আন্দোলনকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ভেতরে ঢুকে বাঁশ ও কাঠ নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।’

চারুকলা ইনস্টিটিউশনের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী সুফিয়ান বলেন, চারুকলার গেট দুই-তিনবার ভাঙা হয়েছে।

এন এ এস/পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)