কেবল পানাহার ত্যাগ করলেই রোজা হয়না জেনে নিন করনীয়

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১২:২৩ এএম, ১৪ মে ২০১৮

রোজা, পানাহার
হজরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলে করিম (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ বলেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, আর রোজা একমাত্র আমার জন্য। এটি সে আমার উদ্দেশেই রাখে, তাই আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব।’ রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। যখন তোমাদের কেউ রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে, গালাগাল না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা ঝগড়া করতে চায়, এর জবাবে সে যেন কেবল এতটুকু বলে যে আমি রোজা রেখেছি। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ আছে, যা তাকে খুশি করে। যখন সে ইফতার করে, তখন সে খুশি হয় এবং যেদিন সে আল্লাহর সামনে হাজির হবে, তখন সে খুশি লাভ করবে (বোখারি, কিতাবুস সাওম)।

রমজান মাসে আমরা যদি এ প্রতিজ্ঞা করি যে আমরা সব পর্যায়ে, ঘরে, বাইরে, সমাজে, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে কাউকে গালি দেব না, লড়াই-ঝগড়া করব না, তাহলে নিশ্চিত বলা যায়, আমাদের সমাজের অনেক ঝগড়া-বিবাদের পরিসমাপ্তি ঘটবে আর সমাজে ফিরে আসবে শান্তি। পবিত্র রমজানে রোজা মহান আল্লাহ আমাদের জন্য ফরজ করেছেন। তাই রোজা রাখা নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা করা ঠিক নয়। আমাদের মধ্যে যাদের আল্লাহ তায়ালা সুস্থ রেখেছেন, তাদের অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। তবে এ রোজা রাখা যেন কেবল অভুক্ত থাকা নয়; বরং সব মন্দ কাজ পরিহার করে ইবাদতে মনোযোগী হতে হবে। রাতে উঠে নফল ইবাদতের জন্য দাঁড়াতে হবে। তবেই না এ রোজা আমাদের জন্য কল্যাণের কারণ হবে আর আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারব এবং জান্নাতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে, যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ পাক দিয়েছেন।

রমজান মাস ধৈর্য ধারণের মাস এবং এর পুরস্কার জান্নাত। এ মাস ভালোবাসা ও ভাতৃত্ব স্থাপনের মাস এবং এ মাস এমন যে এতে মুমিনদের বরকতমণ্ডিত করা হয়। হজরত আবু মাসউদ গাফফারি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, রমজান মাস শুরুর এক দিন পর হজরত রাসুল করিম (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম.)-কে বলতে শুনেছি, যদি মানুষ জানত যে রমজান মাসের ফজিলত কী, তাহলে আমার উম্মত আকাঙ্ক্ষা পোষণ করত, যেন সারা বছরই রমজান হয়ে যায়। এ কথা শুনে বনু খুযায়মার এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাদের রমজানের ফজিলতের কথা বলুন। হুজুর (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয় বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জান্নাতকে রমজানের উদ্দেশ্যে সুশোভিত করা হয়।
অতএব, যেই রমজান আরম্ভ হলে আল্লাহর আরশের নিচে বাতাস প্রবাহিত হতে শুরু করে দেয় (আততারগিব ওয়াত তারহীব, কিতাবুস সওম)।

আরেক হাদিসে রমজানের কল্যাণের কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে : হজরত আনাস বিন মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, আমি হজরত রাসুল করিম (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যেই রমজান এসে যায়, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানের পায়ে শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়। সে ব্যক্তির সর্বনাশ হয়ে গেছে, যে রমজান পেয়েছে কিন্তু আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়নি (তিবরানি আল আউসাত, আততারগিব ওয়াত তারহীব)।

অতএব, যে রমজানে ইমানের অবস্থায় সওয়াবের নিয়ত করে রোজা রাখবে, সে এমনভাবে পাপমুক্ত হয়ে যাবে, যেমন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিলেন।’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিষ্পাপ শিশুর মতো (সুনানে নিসায়ী, কিতাবুস সাওম)।
আমরা যেন কেবল ক্ষুধার্থ থেকে সময় অতিবাহিত না করি; বরং আমরা যেন সব অপকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখি আর উত্তম কর্মগুলো পালনে সচেষ্ট হই। আমাদের এ রোজা যেন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়। মহান আল্লাহ আমাদের পবিত্র রমজানের সব নিয়মনীতি মেনে রোজা রাখার শক্তি দান করুন।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)