আল্লাহর কাছে সবকিছু চাইতে হয়

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ২ মার্চ ২০১৮

---মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
‘গায়েব’ তথা অদৃশ্যের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই। আল্লাহই গায়েবি বিষয়ে সঠিক ইলম (জ্ঞান) রাখেন। আল্লাহ বলেন, ‘গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই। তিনি ছাড়া আর কেউই জানে না।’ (সূরা আনয়াম : ৫৯)। ‘আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে যারা আছে, তাদের কেউই গায়েব সম্পর্কে জানে না। শুধু জানেন আল্লাহ।’ (সূরা নমল : ৬৫)। এমনকি কোনো নবীর পক্ষেও সম্ভব নয় আল্লাহর অনুমতি ছাড়া গায়েব সম্পর্কে ইলম অর্জন করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া নিজের ভালোমন্দ করার অধিকার আমার নেই। আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম তবে নিজের জন্য কল্যাণই বয়ে আনতাম। কোনো ধরনের অকল্যাণ কখনই আমাকে স্পর্শ করত না।’ (সূরা আরাফ : ১৮৮)।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যে কোনো জ্ঞান গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। চাই তা আপাতদৃষ্টিতে যতই নিশ্চিত মনে হোক। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে।’ (সূরা লুকমান : ৩৪)। তাই কেউ যদি দাবি করে সে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানে বা ভবিষ্যতের কোনো বিষয় নির্ভুল বলে দিতে পারবে তবে এ ধরনের মানুষের কথায় বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ কুফরি। শুধু তাই নয়, কৌতূহলবশত তাদের কাছে যাওয়া, ভবিষ্যতের কোনো বিষয় জিজ্ঞাসা করা, তাদের কাছে বসা, তাদের কথা শোনাও কবিরা গুনা। শুধু যে কবিরা গুনা তাই নয়, যে এ ধরনের লোকদের কাছে যাবে তার ইবাদতের কবুলিয়াত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হবে। হজরত সাফিয়া (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, কেউ যদি কোনো গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে যায় তবে তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হবে না। (মুসলিম)। নামাজ কবুল না হওয়ার মতো বড় শাস্তি শুধু গণকের কাছে গিয়ে কৌতূহলবশত বসার কারণে বা তার কথা শোনার কারণে। অনেকে বলেন, আমরা তো গণকের কথা বিশ্বাস করি না, তাই আমাদের কোনো গুনা হবে না। এসব ধারণা যে নিতান্তই ভুল তা প্রমাণিত হয়েছে এই হাদিস দিয়ে। আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে মুয়াবিয়া ইবনে আল হাকাম আস-সালামি (রা.) থেকে। রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, হে নবী! আমাদের কোনো কোনো ভাই গণকের কাছে যায়। এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন? রসুল (সা.) স্পষ্ট বলে দিলেন, ‘না। তাদের কাছে যেও না।’ (মুসলিম)।

গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে যাওয়া, তার আসরে বসা এজন্যই গুরুতর অপরাধ যে, একপর্যায়ে মন গণকের কথায় বিশ্বাস করে ফেলতে পারে, আর তখনই কোরআনে বর্ণিত আয়াত ‘গায়েবের ইলম আল্লাহর কাছে আছে’ তা অবিশ্বাস করা হবে এবং আল্লাহর ইলমে গণককে শরিক করা হবে; একই সঙ্গে বান্দা শিরক ও কুফরের মতো দুটি ভয়বাহ গুনা করে ফেলবে শুধু গণকের আসরে যাওয়া বা তার কথা শোনার কারণে। তাই কঠোরভাবে ধর্মে এ কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তার কথা বিশ্বাস করা বা তাদের কথায় সত্যতা থাকতে পারে ধারণা করা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ গণকের কাছে যায় এবং তার কথা বিশ্বাস করে তবে সে মুহাম্মাদ (সা.)-এর ধর্মের বিরোধিতা করল, কুফরি করল।’ (আবু দাউদ)। একইভাবে কেউ যদি ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত বা গণনাবিদ্যার বই পড়ে, তার ওপর বিশ্বাস রাখে তবে সেও একই অপরাধে অপরাধী হবে।

আজকের দিনে হাত বাড়ালেই গণকের অভিজাত চোখ ধাঁধানো স্বপ্নঘরের দেখা মেলে। টিভি খুললেই সব সমাধানের বাহারি বিজ্ঞাপন মানুষকে ঘরছাড়া করে। এ পরিস্থিতিতে মুসলমানের ইমান ধরে রাখা কঠিন। অথচ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হচ্ছেন দৃশ্য-অদৃশ্যের মালিক। সবকিছু হয় ইল্লাল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ আমাদের খাঁটি ইমানদার বানান। আল্লাহ থেকে সবকিছু চেয়ে নেওয়ার বিশ্বাস দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
www.selimazadi.com

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২ মার্চ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)