ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক বন্ধন

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

ছবিঃ সংগ্রহীতমানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক জীব। বিচ্ছিন্ন মানব জীবনের কল্পনা করাও অসম্ভব। সমাজ ছাড়া মানুষ কখনো চলতে পারে না। বস্তুত সমাজবদ্ধভাবে জীবন যাপন করা মানুষের স্বভাবগত ও প্রকৃতিগত ব্যাপার। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে একা থাকতে দেওয়া হয়নি; বরং হাওয়া (আ.)-কেও সৃষ্টি করে তার সঙ্গে একত্রে বসবাস করতে দেওয়া হয়েছিল। হজরত আদম (আ.)-এর জোড় সৃষ্টি করে আল্লাহপাক তাকে বলেছিলেন, হে আদম! তুমি তোমার জোড়সহ জান্নাতে বসবাস কর (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৫)।

মানব ইতিহাসের শুরুতেই সমাজের মূল ভিত্তি পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাসের সূচনা থেকেই মানুষ পরিবারবদ্ধ হয়ে মিলেমিশে বাস করে। পরবর্তী পর্যায়ে এই পরিবারগুলো গোত্র এবং গোত্রসমূহ সমাজে পরিণত হয়।

নিজের, নিজ পরিবার-পরিজনের, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা ও কল্যাণ সাধন প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। ‘ইসলামে হুক্কুল ইবাদ’ তথা অপরের প্রতি কর্তব্য পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বস্ততার সঙ্গে ‘হুক্কুল ইবাদ’ আদায় করা ইসলামী সমাজ জীবন যাপনের অপরিহার্য শর্তবিশেষ। শুধু নিজের বা নিজ পরিবারের আরাম-আয়েশ করার অধিকার কোনো মুসলিমকে দেওয়া হয়নি; বরং তার আনন্দ-বেদনা, সুখানুভূতি ও সম্পদে রয়েছে তার প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-দুঃখী মানুষের অংশ ও অধিকার।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন (সুরা রূম, আয়াত : ২১)। এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে মানুষকে মূলত সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সমাজবদ্ধতা মানব-প্রকৃতির এমন একটি চাহিদা যা থেকে শুধু এই পার্থিব জীবনেই নয়; বরং আখিরাতের জীবনেও সে পৃথক থাকতে পারে না। জান্নাতেও মানুষ কেবল তখনই মানসিক স্বস্তি ও পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করবে, যখন সে স্বজাতীয় ব্যক্তিদের সাহচর্য, লাভ করবে। মানব জীবনের বহুমুখী কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজন সমাজের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক ও বহুবিধ সম্পৃক্ততা। যার যার প্রয়োজন পূর্ণ হওয়া ছাড়াও তাদের মাঝে বিরাজ করে এক প্রকার মধুর সম্পর্ক। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তাই স্বাভাবিক, আবার ধর্মেরও দাবি। অধিকন্তু, আখিরাতের কামিয়াবির জন্যও আবশ্যক দুনিয়ার জীবনে সুন্দর-সুষ্ঠু সামাজিক বন্ধনের।

পবিত্র কোরআনের বিধানসমূহ মানব কল্যাণের জন্য এবং মানব সমাজকে লক্ষ্য করেই নাজিল হয়েছে। এমনকি কোরআনের যেসব আয়াতে ব্যক্তি গঠন ও ব্যক্তি সংশোধন বিষয়াদির উল্লেখ রয়েছে। সেগুলোও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নয়; বরং সমাজের সঙ্গে তা সম্পৃক্ত।

সালাত, জাকাত ও হজসহ যাবতীয় মৌলিক ইবাদত যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য সমাজ-জীবনই প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র। সালাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমানের পরেই সালাতের স্থান। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রোকন এই সালাত জামাতের সঙ্গে আদায় করাই শরিয়তের বিধান। ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদত জাকাত, যা সমাজের ধনীদের থেকে সংগ্রহ করে গরিব-অসহায়দের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলামের আরেকটি স্তম্ভ হজ আদায় করা এবং হজের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করা একা কোনো ব্যক্তির পক্ষে অকল্পনীয় ব্যাপার।(সূত্রঃ আমাদের সময়)

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২০ ডিসেম্বর

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)