মঠবাড়িয়ায় ঘটছে রাজনৈতিক সহিংসতা, ঝড়ছে প্রাণ

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২০

পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, রাজনৈতি
মঠবাড়িয়ায় ঘটছে রাজনৈতিক সহিংসতা, ঝড়ছে প্রাণ
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের মধ্যেকার দ্বন্দ্বে প্রায়ই ঘটছে সহিংসতা। এসব সহিংসতায় অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণের পাশাপাশি হারিয়েছেন প্রাণ। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে।

মঠবাড়িয়ার মিরুখালী সড়কের পাশের বাড়িটিতে সকলেই আছে। নাই শুধু বৃদ্ধ আফজাল হোসেনের ছেলে লিটন পন্ডিত। ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই উপজেলা শহরে রাজনৈতিক কর্মসূচির পাল্টাপাল্টি মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয় যুবলীগ কর্মী লিটন পন্ডিত। এ ঘটনায় একটি মামলা হলেও, এখন পর্যন্ত কোন বিচার পায়নি পরিবারটি। আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে লিটনের স্ত্রী ও সন্তান।

লিটনের মত গত বছর ২৫শে মার্চ নিজ বাড়ির কাছে দুই পক্ষের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষরা কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে জনি তালুকদার নামে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতাকে। এ ঘটনায় মামলা হলেও এর সুষ্ঠ বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় পরিবারের।

একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনের এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার দ্বন্দ্বের জেরে মামলার আসামি হয়ে জেলের ঘানি টানা ও পঙ্গুত্ব বরণ করা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিগত প্রায় এক বছর সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও গত মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাতে শুভ শর্মা শীল নামে এক ছাত্রলীগ নেতার হাতের কব্জি কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটলেও, এটি পরবর্তীতে ওই দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরই জেরে ওই দিন রাতে পৌর মেয়র ফেরদৌস এর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মর্তুজা বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় মেয়র ফেরদৌস এর ছেলে কামরুল আহম্মেদ রসিকেও আসামী করা হয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা আশরাফুর রহমান ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পৌর মেয়র ফেরদৌস এর আওয়ামী লীগে একক আধিপত্যে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী সৃষ্টি হয়। কিছুদিন তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলেও, পরবর্তীতে এই দুই নেতার নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

এছাড়া সেখানে পরপর দুই বার অন্য দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায়, তাদের দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব হয়নি। দুই পক্ষের এসব হানাহানির ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগের নেতারাও। তাদের দাবি দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায়, দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকে নেতাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রেখেছে। তাই বিষয়টি সমাধান করে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনার দাবি তাদের।

এছাড়া মঠবাড়িয়ায় আশরাফ-ফেরদৌস দ্বন্দ্ব এতটা চরমে যে, তাদের বিষয়গুলো নিয়ে কোন মন্তব্যও করতে রাজী নয় সাধারণ মানুষ।

তবে মেয়র ফেরদৌস মনে করেন আশরাফুর রহমান তাকে প্রতিপক্ষ মনে করায় তাদের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব চলছে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের সকলকে সাথে নিয়ে রাজনীতি করতে চান বলেও জানান।

মঠবাড়িয়ায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিরোধ যাই থাকুক না কেন মঠবাড়িয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সচেষ্ট বলে জানান মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ. জ. মো. মাসুদুজ্জামান।

তবে এসব বিষয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আর স্থানীয়দের আশা দুই পক্ষের এ হানাহানি বন্ধ হয়ে মঠবাড়িয়া পুনরায় শান্তির জনপদে পরিনত হবে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)