পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ আবুল ফাত্তার বিরুদ্ধে একাধিক স্টাফ এর অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ

জাফর ইকবাল
জাফর ইকবাল, সিনিয়র রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৪:৩৮ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০

ছবিঃ পাথরঘাটা নিউজবরগুনার পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবুল ফাত্তার আর্থিক,মানোসিক ও মৌখিকসহ বিভিন্ন নির্যাতনে অতিষ্ঠিত হয়ে ফাত্তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ তুলে ডাক্তার,নার্সসহ অর্ধশতাধিক স্টাফ উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় এমপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগের মধ্যে রয়েছে (১) একাধিক স্টাফের নামে বরাদ্দ হওয়া অর্থ অন্য লোক দিয়ে উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎ (২) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে অসাদাচরণ এবং অশ্লীল ব্যবহার (৩) মেডিকেল অফিসার ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএইচএফপিও এর ট্রেনিং এর টাকা আত্মসাৎ (৪) অফিস চলাকালিন সময় অফিসেবসে রোগী দেখে ব্যক্তিগত প্যাডে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ৫শত টাকা ভিজিট গ্রহণ করা (৫) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ আয়শা ছিদ্দিকার বেতন হতে বিনা রিসিপ্টে অর্থ আদায় করা (৬) অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে মাতৃত্বকালিন ছুটিতে থাকা একজন মেডিকেল অফিসারের বাসার আসবাবপত্র জোরপূর্বক তালা দিয়ে রাখা (৭) উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে লকডাউনের মাঝে ঢাকায় আটকেপরা ডাঃ সুমাইয়া আফরিনকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাকে ঢাকায় থাকার অনুমতি দিয়ে,পরবর্তিতে উক্ত মেডিকেল অফিসার নিজ উদ্যোগে কর্মস্থালে যোগদান করাস্বত্বেও হয়রানি করে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করা (৮) সিভিল সার্জণের মৌখিক আদেশে সংযুক্তিতে বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে হয়রাণির উদ্দেশ্যে মিথ্যা কারণ দর্শাণোর নোটিশ প্রদান করা (৯) হাসপাতালের কোয়ার্টার হতে ডাক্তারদের উচ্ছেদ করার জন্য অবিবাহিত ডাক্তারদের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে-এ সরকারি ডরমিটরির সুবিধা থাকা স্বত্বেও এর ব্যবস্থা অস্বীকৃতি প্রদান করা (১০) মেডিকেল অফিসারগন কর্মস্থালে উপস্থিত থাকা স্বত্বেও হেনস্থা করার উদ্দেশ্যে হাজিরা খাতায় বিশেষ চিহ্ন ও লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত করে রাখা (১১)সরকারি কোয়ারর্টারের ভাড়া বহন না করে দুইটি ভবন ব্যবহার করা (১২) কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে স্টাফদের জন্য প্রনোদনা বাবদ ও কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থ থেকে আত্মসাৎকরা। (১৩) ইমাম ও মুয়াজ্জিমদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য ফলগাছ ইজারা দিয়ে উত্তোলনকৃত টাকা তাদেরকে না দিয়ে নিজে আত্মসাৎকরা (১৪) ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামতের জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থ থেকে আত্মসাৎকরা। (১৫) হাসপাতালে ঘটে যাওয়া কর্মচারী ও রোগীর দর্শনার্থীর মাঝে অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে পুঁজি করে অসহায় রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা।
(১৬) মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে- বরাদ্দ হওয়া অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মো. নাসির উদ্দিন,পরিছন্ন কর্মী মো. লিটনসহ একাধিক স্টাফের নামে বরাদ্দ হওয়া অর্থ অন্য লোক দিয়ে উত্তোলন করে একাধিকবারে কয়েক লক্ষটাকা আত্মসাৎ করেছে ডাঃ আবুল ফাত্তাহ। এছাড়াও কৌশলে একাধিক ডাক্তারদের কাছ থেকেও মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে উক্ত ডাঃ আবুল ফাত্তাহ।

ভুক্তভোগী এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার নাসির উদ্দিন বলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন এ্যাম্বুলেন্সটি অকেজ হওয়ার পরে স্যারের নির্দেশে আমি আমার টাকা দিয়ে এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করি। পরে ওই এ্যাম্বুলেন্স মেরামত বাবদ কর্তৃপক্ষ প্রথমে ১লক্ষ ১হাজার, পরে ৫৮হাজার ৬শত টাকা বরাদ্দ প্রদান করলে ওই টাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আবুল ফাত্তাহ অন্য লোক দিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। একই ভাবে পরিছন্ন কর্মী লিটন বলেন স্যারে এখানে যোগদান করার পরে আমিসহ আরো লোক দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিস্কার করার জন্য অনুরোধ করে বলেন এখন তোমার টাকা দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাউন্ডারির সকল স্থান পরিস্কার করো। এব্যাপারে খুব শীঘ্রই কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ প্রদান করবে, তখন তুমি সকল টাকা নিয়ে নিবা।

স্যারের নির্দেশে আমি নিজের টাকা ব্যয় করে লোক দিয়ে গোটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিস্কার করি। পরে কর্র্তৃপক্ষ পরিস্কার বাবদ বরাদ্দ প্রদান করলে প্রথমে ৮১হাজার, পরে ৮৭হাজার ও ৪৩ হাজার টাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আবুল ফাত্তাহ অন্য লোক দিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে।

এব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন স্টাফদের অভিযোগ আমি পেয়েছি,তবে আমি সরাসরি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় বিষয়টি বরগুনা সিভিল সার্জণকে অবহিত করেছি।

জানতে চাইলে বরগুনা সিভিল সার্জণ ডাঃ হুমায়ুক শাহিন খান বলেন ডাঃ মোহাম্মদ আবুল ফাত্তার বিরুদ্ধে স্টাফদের অভিযোগ আমি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত হয়েছে এখন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

এব্যাপারে অভিযুক্ত ডাঃ মোহাম্মদ আবুল ফাত্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ করা হয়েছে তা সবই অসত্য।

ফাত্তাহ বলেন, আমি কোন কাজ করতে গেলেই উপর মহলের তদবির আসে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)