করোনায় লোকসানের মুখে পড়ে কাঁকড়া চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন পাথরঘাটার কয়েকশ’চাষী

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২১

---চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতিতে চিনে আমদানি স্থগিত রাখায় রপ্তানির অভাবে শুধু বরগুনার পাথরঘাটাতেই গত বছর প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এ এলাকার কাঁকড়া চাষীরা। চাষীরা জানান রপ্তানির আশায় কাঁকড়া চাষ করে রপ্তানি না করতে পারায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।


গত দু’বছর যে কাঁকড়া চিন, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে সে কাঁকড়া গতবছরে পানি থেকে আলোর মুখ দেখেনি। সে কারণে প্রত্যেক চাষী লোকসানের মুখে পড়ে এবছর আর এ পেশায় আগ্রহ নেই তাদের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু।এজন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে ডেভলপমেন্ট ফ্যাসিলিটেটর (ইউডিএফ) স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাইকার উদ্যোগে রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ সম্মেলন সম্মেলন কক্ষে বিশেষ প্রশিক্ষণ আয়োজন করে মৎস্য বিভাগ।


এতে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ, ভাইস-চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন, উপজেলা ডেভলপমেন্ট ফ্যাসিলিটেটর (ইউডিএফ), স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাইকা এর প্রতিনিধি মো. মোত্তালেব হোসেন প্রমুখ। এতে পঞ্চাশ জন কাঁকড়া চাষী অংশগ্রহণ করেন।


উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের প্রবীন কাঁকড়া চাষী মনোতোষ জানান তিনি ১৮ বছর ধরে পেশায় জড়িত। গত দু’বছর লোকসানে পরে এ বছর হিমসিম খাচ্ছি চাষে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতবছরে গোনট পূর্ণাঙ্গ কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে এ উপজেলার পাঁচশতাধীক চাষীদের।

চাষীরা জানান গত দু’বছর আগে স্ত্রী কাঁকড়া ২৯৫০ টাকা ও পুরুষ কাঁকড়া ১৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই কাঁকড়া গতবছরে স্থানীয় বাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে।


পাথরঘাটার সবচেয়ে বড় কাঁকড়ার আরৎদাড় চৈতি ট্রেডার্সের সমির চন্দ্র বেপারি জানান, গত বছর মাল চাষে (কাঁকড়া চাষে) চাষীরা লোকসানে পড়ায় এবছর অনেক পুকুরে মাল (কাঁকড়া) পরেনি।


উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নে উত্তম মজুমদারের ১ একর জমিতে নির্মিত ঘেরে প্রতিবছর আড়াই হাজার কেজি কাঁকড়া চাষ করতেন। তার স্ত্রী পুতুল রানি জানান , পরপর দুই বছর লোকসানের মুখে পড়ায় এবছর কাঁকড়া চাষ করার আগ্রহ নাই। যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহয়তা পাই তাহলে সামনে আগাতে পারবো।


এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে উপজেলার মনোজ ব্যাপারী, তপু, কিশোর, মহিন্দ্র, জোৎস্না রানী ও শিল্পী রানী সহ শতাধিক উদ্যোক্তা জানান মৎস্য বিভাগের পরামর্শে আবারও ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া চাষ করছি। তবে এবারো যদি চিনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকে তাহলে ভিটেমাটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।


পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান,

আন্তর্জাতিক ভাবে করোনাভাইরাসের জন্য বাজার খারাপ হওয়ার কারণে এর প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। সংকটের সামাল দিতে চীনের বিকল্প দেশের খোঁজ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অতিশীঘ্রই এ সংকট কেটে যাবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)