পাথরঘাটা দরিদ্র জেলে ইব্রাহিমের ৩৫ বছরের যাপিত জীবনের নির্মম গল্প এটি

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৯:৪০ এএম, ৫ মে ২০১৯

ইব্রাহিমের ৩৫ বছরের যাপিত জীবনের নির্মম গল্প এটি

সিডর-ফণিতে মাটিচাপা পড়ল ইব্রাহিমের সংসার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ইব্রাহিম। স্বজন, এলাকাবাসী শান্তনায় কি এমন শোক ভোলা সম্ভব। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে ছেলে আর মায়ের মরদেহ দেখতে হবে ভাবতেও পারেননি ইব্রাহীম। মৃত্যু বুঝি এমনই নিষ্ঠুর হয়! কান্না ভাঙা স্বরে বিলাপ তার, ‘মোর পোলা দুইডারে নেলো, লগে মায়ও গেলো!’
ইব্রাহিম থেমে থেমে শোক সামাল দিয়ে বলছিলেন,‘অগো রেডি রাখছিলাম পরিস্থিতি খারাপ হইলেই আশ্রয় কেন্দ্রে যামু। খালে পানি বাড়ছে কিনা দ্যাকতে বাইর হইছি, অ্যার মইদ্দে আচুক্কা বাতাস ছোডছে। আইয়া দেহি ঘর চাপা পইররা মোর মায় আর পোলাডা শ্যাষ’।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউপির দরিদ্র জেলে ইব্রাহিমের ৩৫ বছরের যাপিত জীবনের নির্মম গল্প এটি। অন্যের ট্রলারে মাছ ধরে শ্রমিকের জীবন ইব্রাহীমের। বিষখালী আর বলেশ্বর যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে ঠিক সেখানেই ইলিশ ধরে চলে ইব্রাহীমের সংসার।

স্ত্রী সন্তান আর বাবা-মাকে নিয়ে এক রকম ভালোই কাটছিলো ইব্রাহিমের। ২০০৭ সালে সিডর যখন উপকূলে আঘাত হানে তখনো জীবিকার তাগিদে মাছ ধরা ট্রলারেই ছিলো ইব্রাহীম। আচমকা ঝড়ে উল্টে যায় তার ট্রলার। অথৈ সাগরে ভাসতে থাকে ইব্রাহীম। এদিকে আশ্রয়ন প্রকল্পে যাওয়ার সময় জলোচ্ছ্বাসের প্রবল তোড়ে স্ত্রী জেসমিনের কোল থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয় বড় ছেলে রবিউলের।

চোখের সামনে নিজের কোল থেকে ছিটকে পড়ে হারিয়ে যাওয়া একমাত্র ছেলের স্মৃতিতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে জেসমিন। ২০১০ সালে জেসমিনের কোলে জন্ম নেয় ছোট ছেলে জাহিদুল। এরপর বড়ছেলে হারানোর শোক আর অভাব-অনটনে সংসারের দায় বইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেন স্ত্রী জেসমিন।

ছোট ছেলে জাহিদুল আর মেয়ে জান্নাতিকে নিয়ে এক রকম চলছিল ইব্রাহীমের। এরমধ্যে রোগে শোকে ভুগে একাধিকবার স্ট্রোক করে মৃত্যু হয় বাবা আ. বারেকের। সর্বশেষ গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আরেক ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে ঘরের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় মা নূরজাহান বেগম এবং জাহিদুলের।

ইব্রাহীম জানান, স্ত্রী জেসমিনের আত্মহত্যার দুই বছর পরে বিয়ে করেন তিনি। তার ছোট ছেলে রবিউল থাকতো মঠবাড়িয়ায় তার বড় বোন রাহিলার বাড়িতে। গত শুক্রবার সকালে বড়বোন রাহিলা তার ছোট ছেলে জাহিদুলকে নিয়ে বেড়াতে আসে।

তিনি আরো জানান, এসময় জাহিদুলকে রেখে ছোট মেয়ে জান্নাতিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় সে। শুক্রবার সন্ধ্যা রাতের দিকে সবাই মিলে একবার আশ্রয়ন কেন্দ্রে যেতে চাইলেও বৃদ্ধা মা নূরজাহান যেতে রাজি না হওয়ায় সবাই থেকে যান বাড়িতে। রাত ৩টার দিকে প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে হঠাৎই তাদের ঘর ভেঙ্গে পড়লে তার নিচে চাপা পড়ে মারা যান বৃদ্ধা মা নূরজাহান আর জাহিদুল।

শনিবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন পরিদর্শন করেন ইব্রাহীমের বাড়ি। সেসময় তিনি জেলা প্রশানের পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকার সহযোগিতা দেন ইব্রাহীমকে।

তিনি জানান, ইব্রাহীমের জীবন বড়ই দুঃখের জীবন। ইব্রাহীম যাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে আরো সহযোগিতা পান সে বিষয়ে তিনি সচেষ্ট থাকবেন।

পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবীর বলেন, ইব্রাহীমের ঘরটি বিধ্বস্ত। সন্তান হারা পিতা আর মা হারা সন্তানকে শান্তনা দেয়ার ভাষা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করবো ক্ষতি কাটিয়ে যাতে সে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
রুদ্র রুহান, বরগুনা ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)