আল মাহমুদের চিরবিদায় এবং প্রগতিবাদীদের চেতনায় চপেটাঘাত!

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫৯ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | আপডেট: ১১:০১ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

কবীর আর মাহমুদ
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে। জানাজায় দেশের বিশিষ্টজনসহ হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু আসেননি প্রগতিবাদীরা!! জানাজা উপলক্ষে বাইতুল মোকাররমের মূল মসজিদ, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব গেইট প্রাঙ্গণ কবি প্রেমীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ গতকাল শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ইন্তেকাল করেন।
কবিকে তথাকথিত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক লেখক বুদ্ধিপাগলরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলেও মহান স্রষ্টা তাকে সম্মানীত করেছেন! তার আকুতি কবুল করেছেন ।
শুক্রবারে মৃত্যুর আকাংখা ছিল কবি আল মাহমুদের; হয়েছেও তাই! আল্লাহ কবির ইচ্ছা পূর্ণ করেছেন।
‘স্মৃতির মেঘলাভোরে’ নামক একটি কবিতায় কবি ইচ্ছার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। ওই কবিতায় তিনি লিখেছিলেন:
কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।
ফেলে যাচ্ছি খড়কুটো, পরিধেয়, আহার, মৈথুন–
নিরুপায় কিছু নাম, কিছু স্মৃতি কিংবা কিছু নয়;
অশ্রুভারাক্রান্ত চোখে জমে আছে শোকেরলেগুন
কার হাত ভাঙে চুড়ি? কে ফোঁপায়? পৃথিবীনিশ্চয়।
স্মৃতির মেঘলাভোরে শেষ ডাক ডাকছে ডাহুক
অদৃশ্য আত্মার তরী কোন ঘাটে ভিড়ল কোথায়?
কেন দোলে হৃদপিণ্ড, আমার কি ভয়ের অসুখ?
নাকি সেই শিহরণ পুলকিত মাস্তুল দোলায়!
আমার যাওয়ার কালে খোলা থাক জানালা দুয়ার
যদি হয় ভোরবেলা স্বপ্নাচ্ছন্ন শুভ শুক্রবার।

আলহামদুলিল্লাহ শুক্রবারেই মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে তাকে ডাক দিলে তিনি খুশি মনেই তার ডাকে সাড়া দিয়ে মাওলায়ে হাক্বিকীর কাছে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

আমার দৃষ্টিতে কবি আল মাহমুদ ছিলেন কবি শামসুর রাহমানের চেয়েও অনেক উচু মর্গের কবি!! কারণ আল মাহমুদের কবিতার ভাষায় ধারণ করেছিলেন, স্রষ্টা এবং তার অনুপম সৃষ্টি! অবহেলিত গ্রাম, নদী, পাহাড়, পর্বত, দেশ, নগর থেকে শুরু করে পুরো বৈশ্বিক পরিসর। অন্যদিকে, শামসুর রাহমান নিতান্তই ‍একজন নাগরিক কবি ছিলেন, যার কবিতার ভাষা একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে ছিল! শামসুর রাহমান প্রধানত নগরসমাজ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেই ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয় তার কফিন, ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন উভয় বাংলার তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতি ব্যক্তিত্ব ও কবিরা। তার মৃত্যু সংবাদ ও জানাযা নিয়ে আমাদের প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় বিশাল জায়গাজুড়ে ছিল লিড প্রতিবেদন।
সত্যি বলতে কি এই সব ধর্ম বিদ্বেষী মিডিয়া আল মাহমুদকে শামসুর রাহমানের মতো আয়োজন করে সম্মান প্রদর্শন করেনি!!

গতকাল শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯) রাতে আল মাহমুদের মৃত্যুর পর আজকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রধান জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতা খোঁজে দেখলাম। নাহ, আল মাহমুদকে তারা পারেনি শামসুর রাহমানের মতো সম্মান প্রদর্শন করতে!! এর একটাই কারণ: শামসুর রাহমান ব্যক্তি হিসেবে তথাকথিত প্রগতিশীল সেকুলার ছিলেন; কিন্তু আল মাহমুদ পরিবর্তিত হয়ে একজন বিশ্বাসী ধার্মিক কবি হয়ে উঠেছিলেন। আল মাহমুদের এই পরিবর্তন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা মেনে নিতে পারেনি! তাই হলুদ মিডিয়ার মাধ্যমে আল মাহমুদকে তারা একজন মৌলবাদী বা প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি হিসেবে ট্যাগ দিয়ে মূলধারা থেকে কাবু করে রেখেছিল বছরের পর বছর।

পরিতাপের বিষয় হলো: কবি আল মাহমুদের সাথে আমাদের মিডিয়া যতটা আচরণ করেছে কবি হিসেবে, তারচেয়েও বেশি করেছে ব্যক্তি হিসেবে। আল মাহমুদের ক্ষেত্রে তারা নৈর্ব্যক্তিক ও নিরপেক্ষ থাকতে পারলো না। আল মাহমুদকে অন্তত একজন মহান কবি হিসেবে তারা যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান জানাতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা ও দৈন্যতা!

মৃত্যুর পর তথাকথিত মিডিয়ার মাধ্যম ছাড়াই জনগণের অকৃত্রিম ভালবাসায় আল মাহমুদ যেভাবে ধ্বনিত ও অনুভূত হয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে সেটাই আল মাহমুদের আসল প্রাপ্তি ও বিজয়!

আল মাহমুদ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করেছেন। কিন্তু তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী!! ধর্ম বিদ্বেষী হিংসুকরা আবার ও প্রমাণ করল বাংলাদেশের প্রগতিশীল সেকুলাররা আসলে ফ্যাসিস্ট মিডিয়াতেই কৃত্রিমভাবে বেঁচে থাকে, জনগণের হৃদয়ে তারা জায়গা করে নিতে ব্যর্থ।

এম এ বাসিত আশরাফ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)