মঠবাড়িয়ার ‘রাজলক্ষ্মী’ পাথরঘাটায় অলক্ষী!

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১২ এএম, ২৪ জানুয়ারী ২০১৯

‘রাজলক্ষ্মী’
তারিকুল ইসলাম কাজী রাকিব,
একসময়ে জমিদার মেয়ে শত বছর বয়সী রাজলক্ষ্মী, মঠবাড়িয়া উপজেলার চরকগাছিয়া ইউনিয়নের নামকরা আখড়া বাড়ির গুরু চরন হাওলাদারের মেজো মেয়ে রাজলক্ষী। দক্ষিণ সুন্দরবনের বলেশ্বর নদীর
পূর্ব পার্শ্বে বেড়িবাধের পাশেই কুড়ে ঘরে তার বসবাস। বয়স কত বলতে না পারলেও বয়স যে একশ পেরিয়েছে তা সঠিক করেই বলতে পেরেছেন তিনি। স্বাধীনতার পূর্বেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রাজলক্ষী স্বরানন দম্পতি। তখনকার সুখের সংসারের সৃতি চারন করে কেঁদে ফেলেন রাজলক্ষী। স্বামী আর মেয়ে হারিয়ে এখন একমাত্র পুত্র সন্তান সমিরন চন্দ্র হাওলাদারকে নিয়েই কুড়ে ঘরে বসবাস করছেন রাজ কন্যা রাজলক্ষী। রাজলক্ষ্মীর কথায় এখন তার কপাল পোড়া!

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের পরিঘাটা গ্রামের বাসিন্দা রাজলক্ষ্মী। স্বরানন হালদারের স্ত্রী তিনি। স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। একমাত্র কন্যার বিয়ের ২ মাসের মাথায় মৃত্যূ হয়।

সিডর সহ তিনবার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নিজেদের জমিজমাসহ সর্বস্ব হারিয়ে সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন বহু বছর ধরে। একমাত্র ছেলে সমিরন হাওলাদার দিন মজুরী দিয়ে সংসার চলছেনা তার। অভাবের তাড়নায় এই বৃদ্ধ বয়সেও কখনো দু এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। স্বামী হারা, একমাত্র কন্যা হারা, বার্ধক্যজনিত নানা রোগ আর ভিটেমাটি ছাড়া জীবনটা অলক্ষ্মী ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন বাস্তব গল্প নিয়ে কথা হয় শতবর্ষী রাজলক্ষ্মীর সাথে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজলক্ষ্মী আমাদের সময় প্রতিবেদককে বলেন, তিনবার ওয়াপদা ভাঙছে, আমার সবকিছু শেষ হইয়া গেছে। জমি শেষ, বাড়ি-ঘর শেষ, স্বামী-মেয়ে নেই। সরকারি জমিতে থাইক্যাও পাইনা বয়স্ক ভাতা। আমার কপালডাই পোড়া।

পাথরঘাটা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সরেজমিনে দেখা যায় (২৩ জানুয়ারি বুধবার) সকালের মৃদু রোদে ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে দুপুরের খাবারের জন্য লাউশাক রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাছ মাংস কবে খেয়েছেন তা ভুলে গেছেন রাজলক্ষী। ওয়াপদার পাশে সামান্য শাক সবজির গাছ লাগিয়েই চলে অভাবের সংসার।

রাজলক্ষ্মী অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাতা সংস্থার মাধ্যমে আসা কোন সাহায্য সহযোগিতাও পাচ্ছেন না তিনি।

রাজলক্ষ্মী বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতা না পাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাঠালতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম জানান , সে যদি বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা না পেয়ে থাকেন তাহলে খুবই শীঘ্রই পাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে জানান।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)