পাথরঘাটায় স্ত্রীকে গলায় ফাঁস, মেয়েকে চুবিয়ে মারে ঘাতক শাহিন

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২১

পাথরঘাটায় স্ত্রীকে গলায় ফাঁস, মেয়েকে চুবিয়ে মারে ঘাতক শাহিন

পাথরঘাটার চাঞ্চল্যকর স্ত্রী সুমাইয়া ও নয় মাসের শিশু সন্তান জুঁইকে হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক সাহিন। বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মল্লিকের আদালতে জবানবন্দি দেয় শাহিন। এতে স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখার কথা স্বীকার করে সে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআরও সহকারী উপ-পরিদর্শক আজাদ হোসেন। অপরদিকে আদালত চলাকালীন সময়ে পাথরঘাটা শেখ রাসেল স্কয়ারে সাহিনের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

এর আগে গত সোমবার চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকা থেকে শাহিন কে আটক থেকে আটক করে সিআইডি।শাহিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাতেমপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।

ঘটনার দু’দিন পর ৩জুলাই নিজ বাড়ির সংলগ্ন খালের পাড়ে গর্ত থেকে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পাথরঘাটা পুলিশ। পরের দিন ময়না তদন্ত শেষে সুমাইয়ার বাবার বাড়িতে পুলিশের উপস্থিতিতে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় গত ৩ জুলাই।ঘাতক শাহিনের মা শাহিনুর বেগম ও মামাতো ভাই ইমাম হোসেনকে আটক করে পুলিশ। তারা বরগুনা জেল হাজতে রয়েছে। এ‌ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি রিমন হাওলাদার পালাতক রয়েছে।

সহকারী উপ-পরিদর্শক আজাদ হোসেন জানান, পাথরঘাটায় চাঞ্চল্যকর স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার দায়ে ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ঘাতক শাহিনকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে হাজির করা হয়। হত্যার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে শাহিন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১ জুলাই রাত নয়টার দিকে পারিবারিক কলহের জের ধরে উত্তেজিত হয়ে এক পর্যায়ে সুমাইয়াকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে সাহিন। এরপর লাশ গুম করার জন্য পার্শ্ববর্তী খালে নামিয়ে পানিতে টেনে একটু দূরে নিয়ে ব্যারের (নালা) মধ্যে রাখে। এরপর বাড়িতে থেকে কোদাল এনে গর্ত খুঁড়ে নায়লনের সুতা দিয়ে গলা ও পা বেঁধে গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়। এরপর ঘরে গিয়ে ঘুমান্ত নয় মাসের মেয়ে সামিরা আক্তার জুঁই কে খালে ফেলে দেয় সাহিন। সেখানে জুঁইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে স্ত্রীর সাথে জুঁইকে ও মাটি চাপা দিয়ে তার মোবাইল ও সিম কার্ড টি খালে ফেলে দেয়। পরে গোসল করে বাড়ি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। তখন তার ঘরে বৃদ্ধ দাদী অবস্থান করছিল বলেও জানায় সাহিন।

জানা যায় রাত নয়টা থেকে সাড়ে এগারোটা বেজে যায় সুমাইয়া ও জুঁই কে হত্যা করে লাশ গুম করতে।

সাহিনের জবানবন্দি আদালতের মাধ্যমে রেকর্ড করে বুধবার বিকেলে বরগুনা জেল হাজতে প্রেরণ করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মল্লিক।

বরগুনার অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক মো. সেলিম সরদার আজকের পত্রিকাকে জানান, ঘটনার পর থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। সোমবার সকালে পাথরঘাটা থানা থেকে মামলার তদন্তভার সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়। সেদিন রাতেই শাহিন কে চট্টগ্রাম বন্দর থানা এলাকা আটক করা হয়। আটকের পর ঢাকায় নিয়ে আসা হলে সেখান থেকে আমরা গ্রহণ করে পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মল্লিকের আদালতে হাজির করি। যেহেতু সাহিন স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছে সেকারনে রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তারপরও যদি প্রয়োজন হয় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে আদালতে হাজির করার সময় আজকের পত্রিকার সাথে সাহিনের একান্ত আলাপ হলে সে জানায় তার স্ত্রী সুমাইয়ার পরোকিয়ার কথা। এ নিয়ে সুমাইয়ার বাবা রিপন বাদশাহকেও জানিয়েছেন বলে জানায় সাহিন। সাহিন আরো জানায় কাঠালতলী এলাকার সুমন নামে এক যুবককে সাথে পরোকিয়ায় জরিয়ে পরে সুমাইয়া। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ছেলের সাথে সখ্যতা ছিল তার। যখন পেশাগত কাজে সে সাগরে মাছ ধরতে যেতো তখন সুমন সুমাইয়ার সাথে দেখা করতো বলেও জানায় সাহিন।

তবে স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে তার মধ্যে কোন অনুশোচনা লক্ষ্য করা যায় নি। সাহিন জানান তার মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী লিমা সুমাইয়ার পরোকিয়ায় সহযোগিতা করতো। এমনকি তাদের সংসার থেকে তার মা সাহিনুর বেগমকে আলাদা করে দেয়ার জন্য কুপরামর্শ দিতো লিমা। এবিষয়ে লিমার কাছে জানতে চাইলে সে জানান, সুমন নামে এক যুবককে সাথে সুমাইয়া কথা বলতো এবিষয়টি আমি লোক মারফত জানতে পেরেছি। তবে আমি তাকে এ বিষয়ে কোনো সহায়তা করতাম না।

পাথরঘাটা থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাহিনের সাথে সুমাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এতে সুমাইয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে‌। অনাগত সন্তানের ভার সাহিন গ্রহন করতে না চাইলে সাহিনের বিরুদ্ধে সুমাইয়ার বাবা রিপন বাদশা একটি ধর্ষণ মামলা করে। এ মামলায় পাঁচ মাস কারাভোগের পর গত সাত মাস পূর্বে জামিনে এসে পারিবারিক ভাবে সুমাইয়া ও সাহিনের বিবাহ হয়। গত ১ জুলাই সুমাইয়া হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ সে থেকেই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে অনুসন্ধান করে। ঘটনার দু’দিন পর ৩ জুলাই বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালের পাড়ে আগলা ঝুরঝুরে মাটি দেখতে পেলে সেখানে সন্ধান করে মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)