অভিযান-১০ লঞ্চ ট্র্যাজেডির এক বছর পাথরঘাটার পপির জন্য এখনো পথ চেয়ে বসে আছেন মা

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২

ছবিঃ পাথরঘাটা নিউজ২৪ ডিসেম্বর আজ, ২০২১ সালের এই দিনে সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। সুগন্ধা নদীর মধ্যে ভয়াবহ সেই ট্র্যাজেডিতে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৪৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। তাদের মধ্যে পাথরঘাটা উপজেলার ফজিলা আক্তার পপিও নিখোঁজ হয়। সেই ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্ণ হলেও এখনো পপির পথ চেয়ে বসে আছেন তার মা আমেনা বেগম। সেদিনের মানুষ পোড়া গন্ধে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল সুগন্ধা নদীর তীর। তার মধ্যে অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও পপির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ফজিলা আক্তার পপি পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের ছোট টেংরা গ্রামের মো: আফজাল হোসেনের মেয়ে।
বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরদিন নিহতদের মধ্যে অজ্ঞাত পরিচয়ের ২৪ জনকে বরগুনার ঢলুয়া ইউনিয়নে পোটকাখালীর গণকবরে দাফন করা হয়। এদের মধ্যে ডিএনএ টেস্টে তাদের ১৬ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বছর পেরিয়ে গেলেও বাকিদের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট শনাক্ত না হওয়ায় নিহতদের অর্থসহায়তাসহ হস্তান্তর করা হয়নি লাশ।
এ দিকে বরগুনা সিআইডি অফিস জানিয়েছে, সিআইডি ঢাকা ফরেন্সি ডিএনএ ল্যাবরেটরি থেকে তাদের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটা তারা বলতে পারবে। বরগুনা অফিসে কোনো তথ্য নেই।
পপির মা আমেনা বেগম জানান, পপি ঢাকার সাভার এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে ঢাকায় ভালো কোনো স্কুলে লেখাপড়া করাবেন সেই স্বপ্ন নিয়ে অভিযান -১০ লঞ্চে বাবার বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগলে নিখোঁজ হন পপি। ওই দিন রাত ৯টার দিকেও কথা বলেছেন তার মেয়ের সাথে।
তিনি আরো বলেন, সন্তানহারা মা কিভাবে থাকে। সন্তানের অভাব কেউ পূরণ করতে পারে না। খুব কষ্টে দিন পার করছি। পপি লঞ্চে ওঠার সময় ফোন দিয়া বলছিল- মা ছুটি কম, রুটি পিঠা খাইতে মন চায়। যা খাওয়াবা জলদি খাওয়াবা। সকালে শুনি যে লঞ্চে আমার মেয়ে ছিল সেই লঞ্চেই আগুন লেগে পুড়ে গেছে। আর আমার মেয়ে এলো না। রুটি পিঠাও খাওয়াতে পারলাম না।
পপির মা জানান, এখন পর্যন্ত ডিএনএ রিপোর্টেও শনাক্ত হয়নি পপির লাশ। এ কারণে আমরা কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পপির মেয়ে লামইয়ার ভবিষ্যৎ। পপির মৃত্যুর সনদ না পাওয়ায় মেয়ের জন্য গচ্ছিত ডিপিএসের জমা টাকাও তুলতে পারছি না আমরা। কবর বুঝে নিতে চাইলে আবেদন করার কথা জানিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। এ ছাড়াও শিগগিরই শনাক্তদের সহায়তার অর্থ প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)