‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন’ মন্ত্রিসভায় উঠছে মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে সুবিধা পাবে পরিবার

আবু জর রফি
আবু জর রফি, সাব-এডিটর
প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
অনলাইন ডেস্কঃ

যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সোয়া দুই লাখেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণে ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার।

খসড়ায় মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে সুবিধাভোগী হিসেবে তার পরিবারের সদস্যরা একই সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদেরও এই প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ভাতার আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা এবং ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে ট্রাস্টি বোর্ড, নির্বাহী কমিটি গঠনের পাশাপাশি তহবিল পরিচালনা, নিরীক্ষার বিধানও খসড়া আইনে রাখা হয়েছে।

খসড়া ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৮’ নীতিগত অনুমোদনের জন্য আজ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে প্রণীত প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশের আওতায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত হলেও এবারই প্রথম নতুন আইন করা হচ্ছে।

গেল বছর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এক সভায় ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। পরে তা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত ২১শে জানুয়ারি ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৮’-এর খসড়ায় মতামত দিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে ৮ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ই- মেইলে মতামত দিতে বলা হয়।

ওই সব মতামত সংযুক্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে তারা। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে তা বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের জন্য পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন,

মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে ফেব্রুয়ারিতেই খসড়াটি বিল আকারে সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে।

খসড়া আইনটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সব মিলিয়ে আইনটিতে ২৪টি ধারা রয়েছে। ছয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত খসড়ার প্রথম অধ্যায়ে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নতুন করে পরিবর্ধন করা হয়েছে। আইনের ২ (২) ধারায় বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত যে সব ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা ছাড়াও নিচের (ক থেকে ঝ) উল্লিখিত ব্যক্তিগণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।

(ক) মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ব্যক্তি বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন,

(খ) যে সকল বাংলাদেশি পেশাজীবী ও নাগরিক একই সময়ে বিদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করেছেন,

(গ) যারা মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা/কর্মচারী/দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, (ঘ) সশস্ত্র বাহিনী, গণবাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, নৌ-কমান্ডো, আনসার বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন,

(ঙ) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজিবনগর সরকারের সহিত সম্পৃক্ত তৎকালীন এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) ও এমপিএগণ (মেম্বার অফ পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি) যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হন,

(চ) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত (বীরাঙ্গনা) নারীগণ,

(ছ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়গণ এবং

(ঝ) মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিকেল টিমের চিকিৎসক, নার্স ও সহকারীরা। তবে শর্ত থাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধকালীন বয়স ন্যূনতম সাড়ে ১২ বছর (সংশোধিত বিধান অনুসারে) হতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধাভোগী: প্রস্তাবিত আইনের ৬ ধারায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধাভোগীদের বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুবিধাভোগী অর্থ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা।

এ ক্ষেত্রে তাদের অবর্তমানে পরিবারের সদস্য বলতে গিয়ে প্রস্তাবিত আইনের ব্যাখ্যায় চার দফা বর্ণনা করা হয়েছে।

দফ
(১) স্ত্রী/স্ত্রীগণ/স্বামী,

(২) স্ত্রী/স্ত্রীগণ/স্বামীর অবর্তমানে পিতা/মাতা
(৩) স্ত্রী/স্ত্রীগণ/স্বামী/পিতা/মাতার অবর্তমানে পুত্র/কন্যাগণ,
(৪) ১ থেকে ৩ দফায় বর্ণিতদের অবর্তমানে ভাই/বোন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধাভোগী হবেন।

ট্রাস্টের কার্যক্রম: মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমেই ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। তবে এই ট্রাস্টের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য প্রস্তাবিত আইনে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন, নির্বাহী কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পদাধিকারবলে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী এবং ভাইস চেয়ারম্যান হবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। এ ছাড়াও বোর্ডের সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত চারজন সংসদ সদস্য এবং পদাধিকারবলে অর্থ সচিব, শিল্প সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল অফিসার (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের) ও কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এ ছাড়াও ছয় সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সভাপতি থাকবেন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। প্রস্তাবিত আইন অনুসারে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সরকারকে বার্ষিক প্রতিবেদন দিতে হবে।
পাথরঘাটা নিউজ/এজেআর/০৯ এপ্রিল

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)