আরাফাতের ময়দানের কিছু ইতিহাস

আবু জর রফি
আবু জর রফি, সাব-এডিটর
প্রকাশিত: ১০:১৫ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আরাফাতের ময়দান

আরাফাতের ময়দানের সবুজ-শ্যামলিমার দিকে তাকালে বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে।

মনে পড়ে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথাও! যে ময়দানে হাশর হবে সেই ময়দান এখন বাংলাদেশ থেকে জিয়াউর রহমান কতৃক পাঠানো ২০০০০ নিমগাছের সুশীতল ছায়াতলে হাজীগণ প্রশান্তির সাথে অবস্থান করছে।

অথচ এই ময়দান ১৯৮০ সালের আগেও ছিল মরুময়।

এর একটা পটভূমি আছে। ১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিশ্রুত ইমাম মাহাদী হবার দাবী নিয়ে জুহাইমান আল ওতাইবি নামের এক ভণ্ড ও তার দলবল মসজিদুল হারাম ও কাবা শরীফ দখল করে নেয়।

হাজারো হাজীকে তারা জিম্মি করে। সৌদি সেনাবাহিনীর সাথে মসজিদুল হারামের দখল নিয়ে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ

মন অবস্থা কয়েকদিন যাবত চলতে থাকে। কিন্তু পবিত্র কোরআনে মক্কা নগরীতে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সংঘাত ও রক্তপাতকে নিষিদ্ধ করায় সৌদি সামরিক বাহিনী ও তাদের সাথে যুক্ত হওয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এসএসজি কমান্ডো ফৌজ কোন শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারছিল না।

এমতাবস্থায় প্রখ্যাত আলেম আবদুল আজিজ ইবনে বাআযের নেতৃত্বে সৌদি উলেমাগণ অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে সৌদি ও পাকিস্তানী বাহিনীকে বলপ্রয়োগ ও রক্তপাতের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ মুক্ত করার অনুমতি দিয়ে ফতোয়া জারি করে।

যৌথবাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমণে ভণ্ড নবী ও তার শাগরেদরা পরাজিত হয়। কাবা শরীফ মুক্ত হয়।

এই ঘটনা সেসময় মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পরের বছর কাবা ঘর পরিস্কারের সময় প্রত্যেকটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বায়তুল্লাহতে হাজির হন।

কাবার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব তারা সকলে ভাগ করে নেন। জিয়াউর রহমানের ভাগে পড়ে কাবার পবিত্র মেঝের একাংশের পরিস্কারের দায়িত্ব। তিনি নিজের রুমাল জমজমের পানিতে ভিজিয়ে কাবার মেঝে মোছেন।

এতো মর্যাদাবান সম্মান পেয়ে জিয়া দেশে ফিরেই আরাফাতের ময়দানে বনায়ন করতে ২০০০০ নিমগাছের চারা পাঠিয়ে দেন সৌদি আরবে।

শুধু তাই নয়, সৌদি সরকার নিমগাছের উৎপাদন জারি রাখতে সেদেশে অনেক নার্সারি স্থাপন করেছে। জিয়াউর রহমান তৎকালীন সৌদি বাদশাহ খালেদ ইবনে আবদুল আজিজকে আনুষ্ঠানিক পত্র মারফত অনুরোধ করেছিলেন যেন আরাফাতের নিমগাছের পরিচর্যার ভার সৌদি প্রশাসন প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাতেই অর্পণ করে।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত এসব নিমগাছের রক্ষণাবেক্ষণে আরব প্রবাসী বাঙালিরাই নিয়োজিত আছে।

সৌদি সরকার কতৃক স্থাপিত নার্সারিসমূহতেও বাঙালিরাই কর্মরত। সবচেয়ে অসাধারণ তথ্য হচ্ছে এই গাছ সেখানে কেবল নিমগাছ নামে পরিচিত নয়, এগুলোকে ‘জিয়া দরখৎ’ বা জিয়া গাছ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।

আরাফার ময়দানে ছায়াদার করতে বাংলাদেশ উদ্যোগী হয়েছে।

এর বরকতে হলেও আল্লাহ এদেশকে রক্ষা করুন, এদেশের সম্পদে প্রাচুর্য দান করুন, এদেশের মুসলিম নামধারীদের অনুগত বান্দা হবার তৌফিক দান করুন…।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)