জুমার দিনের বিশেষ ৫টি আমল

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ৮ মে ২০২০

ছবিঃ সংগ্রহীতজুমার দিন হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ। এ দিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক আহকাম ও ঐতিহাসিক নানা ঘটনা। আমলের দিক থেকে আল্লাহ তায়ালা যেসব দিনকে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন এর অন্যতম হলো জুমার দিন। এই দিনের মর্যাদার সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা এই কথা জানানো হয়েছে। হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত;  মদীনার    তাজেদার,    রাসূলদের  সর্দার,  হুযুরে  আনওয়ার (আ.) ইরশাদ করেন:   “যে  ব্যক্তি  এক  দিনে  পাঁচটি   কাজ     সম্পাদন  করবে,  আল্লাহ  তাআলা  তাকে  জান্নাতী  হিসাবে  লিখে  দিবেন:

 ১।  যে    ব্যক্তি    রোগীকে  দেখতে  যাবে, 
২।  জানাযার নামাযে উপস্থিত হবে
৩। রোযা  রাখবে,
৪। জুমার  নামাযে যাবে   এবং
৫।   গোলাম আযাদ  (মুক্ত) করবে।”   
  (আল     ইহসান      বিতরতিবে     সহীহ      ইবনে হিব্বান, ৪র্থ খন্ড, ১৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭৬০)

জান্নাত ওয়াজীব হয়ে গেলো
হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত; প্রিয় আক্বা, উভয় জগতের দাতা, মাদানী মুস্তফা (রা.)  ইরশাদ  করেন:  “যে  ব্যক্তি  জুমার  নামায আদায় করে, ঐ দিন রোযা রাখে, কোন   অসুস্থ   ব্যক্তির   সমবেদনা   জ্ঞাপন   করে,   কোন  জানাযায় উপস্থিত হয়, কারো বিয়েতে অংশগ্রহণ করে, তবে ঐ  ব্যক্তির    জন্য  জান্নাত   ওয়াজীব হয়ে গেলো।” (আল       মুজামুল       কবীর,       ৮ম        খন্ড,        ৯৭       পৃষ্ঠা, হাদীস-৭৪৮৪)

শুধু জুমার দিন রোযা রাখবেন না
শুধুমাত্র জুমাবার কিংবা শনিবার রোযা  রাখা   মাকরূহে তানযিহী। তবে নির্দিষ্ট কোন তারিখের রোযা যেমন ১৫ ই   শাবান   শবে    বরাতের    রোযা,    ২৭শে   রজব   শবে মেরাজের  রোযা ইত্যাদি যদি  জুমাবার কিংবা  শনিবার এসে  যায়,  তাহলে  ঐ  দিন  রোযা  রাখা  মাকরূহ  নয়।  রাসূলুল্লাহ     (স.)   ইরশাদ করেন:   ‘জুমার    দিন   তোমাদের    জন্য    ঈদের     দিন। সুতরাং  তোমরা  ঐ  দিন  রোযা   রেখো  না।  তবে  তার   আগের   দিন   বা     পরের    দিনে   রোযা   রাখো।’   (আত তারগীব ওয়াত তারহীব,  ২য় খন্ড, ৮১   পৃষ্ঠা,  হাদীস- ১১)

দশ হাজার বছরের রোযার সাওয়াব
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন (রা.) বলেন: ‘বর্ণিত আছে যে, জুমাবারের রোযার সাথে বৃহস্পতিবার   অথবা   শনিবারের  রোযা মিলিয়ে রাখলে দশ   হাজার   বছরের   রোযার   সমান   সাওয়াব   পাওয়া  যাবে।’ (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া,  নতুন সংস্করণ, ১০তম খন্ড, ৬৫৩ পৃষ্ঠা)

জুমার রোযা কখন মাকরূহ
জুমার  রোযা  প্রত্যেক   ক্ষেত্রে মাকরূহ   নয়,  মাকরূহ শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রে  হবে, যখন কোন বিশেষত্ত্বের সঙ্গে জুমার  রোযা  রাখা  হয়।    অতঃপর  জুমার  রোযা  কখন মাকরূহ     এই     প্রসঙ্গে     ফতোওয়ায়ে     রযবীয়া     নতুন  সংস্করন   ১০ম  খন্ড,  ৫৫৯  পৃষ্ঠার   প্রশ্নের  উত্তর   লক্ষ্য করুন: প্রশ্ন: ওলামায়ে  কিরাম এই মাসয়ালা প্রসঙ্গে কি বলেন যে, জুমার নফল রোযা রাখা কেমন? এক ব্যক্তি জুমার   দিন   রোযা   রাখলো,   অন্যজন   তাকে   বললো:  জুমা  মু’মিনদের  ঈদ।    এই  দিন   রোযা  রাখা   মাকরূহ এবং  বাগবিতন্ডার    পর   দুপুরেই   তার  রোযা  ভাঙ্গিয়ে দিলো।  উত্তর:  জুমার  দিনের  রোযা  বিশেষ  করে  এই  নিয়্যতে যে, আজ জুমা, এর  নির্দিষ্ট রোযা রাখা উচিত, তখন   মাকরূহ।    কিন্তু   সেই    মাকরূহ   হওয়ার    কারণে ভেঙ্গে  ফেলাটা  আবশ্যক   নয়   এবং  যদি   বিশেষ  করে নির্দিষ্ট       ভাবে       কোন       নিয়্যত       ছিলো       না,       তখন  মৌলিকভাবে   কোন  মাকরূহ   নয়।   ঐ   দ্বিতীয়  ব্যক্তির  মাকরূহ   এর    ব্যাপারে   অবগত  ছিলো   না,  তবে   তার ব্যাপারে  অভিযোগ  করা  শুরু    থেকেই    বোকামী  হলো এবং     রোযা     ভেঙ্গে      ফেলাটা      শরয়ীভাবে     মারাত্মক দুঃসাহসীকতা।     আর     যদি     অবগতও     হয়,     তাহলে  মাসয়ালা     জানিয়ে     দেওয়াটা     যথেষ্ট       ছিলো     রোযা  ভাঙ্গানো  নয়। আর তাও  দুপুরের পর যেটার  অধিকার নফল রোযার ক্ষেত্রে মা-বাবা আর কারো নয়। ভঙ্গকারী ও       যে       রোযা       ভাঙ্গিয়ে       দেয়       উভয়ে       গুনাহগার  হলো।ভঙ্গকারীর উপর কাযা আবশ্যক  হলো। মৌলিক কাফ্ফারা নয়।

জুমার  দিন   (শুক্রবার) পিতা-মাতার কবরে   উপস্থিতির সাওয়াব
প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী, মক্কী মাদানী হাশেমী (আ.) ইরশাদ করেন: ‘যে ব্যক্তি আপন  পিতা-মাতা  উভয়ের   কিংবা একজনের কবরে প্রত্যেক জুমার   দিন   যিয়ারতের   জন্য   উপস্থিত  হয়,    আল্লাহ্  তাআলা তার গুনাহ ক্ষমা  করে দেন এবং পিতা-মাতার সঙ্গে    উত্তম   আচরণকারী   হিসেবে   লিখা  হয়।’  (আল মু’জামুল   আউসাত  লিত   তাবারানী,  ৪র্থ   খন্ড,  ৩২১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬১১৪)

মাতা-পিতার  কবরে  ‘সূরা  ইয়াসি’ পাঠ  করার ফযীলত
হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম  ইরশাদ  করেন: ‘যে  ব্যক্তি জুমার দিন তার পিতা-মাতা উভয়ের কিংবা একজনের কবর যিয়ারত করবে এবং কবরের পাশে সূরা ইয়াসীন পাঠ   করবে,   তাকে     ক্ষমা     করে   দেয়া   হবে।’  (আল কামিল ফি দুয়াফায়ির রিজাল, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা)

তিন হাজার মাগফিরাত
আল্লাহ্র  প্রিয়  হাবীব,  হুযুর  পুরনূর   ইরশাদ    করেন: ‘যে  ব্যক্তি  প্রত্যেক  জুমার  দিন তার  মাতা-পিতা  উভয়ের  কিংবা একজনের কবর যিয়ারত  করে সেখানে  সূরা   ইয়াসীন পাঠ   করবে, আল্লাহ্   তাআলা   তাকে     সূরা   ইয়াসিন   শরীফে   যতটি অক্ষর     আছে   তত   সংখ্যক   ক্ষমা  প্রদর্শণ   করবেন।’  (ইত্তেহাফুস সাদাত, ১৪তম খন্ড, ২৭২ পৃষ্ঠা)

জুমার দিন সূরা ইয়াসীন শরীফ পাঠকারীর মাগফীরাত হবে
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম,  রাসূলে আকরাম  ইরশাদ  করেন:  ‘যে   ব্যক্তি জুমার  রাত (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার   ও শুক্রবার মধ্যবর্তী   রাত)  সূরা  ইয়াসীন  শরীফ পড়বে  তার  মাগফীরাত (ক্ষমা)  হয়ে  যাবে।’ (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ১ম খন্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪)

রূহ সমূহ একত্রিত হয়
জুমার  দিন রূহ সমূহ একত্রিত হয়, তাই সে দিন  কবর যিয়ারত  করা    উচিত।  জুমার  দিন   জাহান্নামের  আগুন প্রজ্বলিত করা হয় না। (দুররে  মুখতার,  ৩য়  খন্ড,   ৪৯ পৃষ্ঠা)  আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন  (রা.) বলেন:  ‘কবর  যিয়ারতের    সর্বোত্তম  সময় হলো,         জুমার দিন  ফযরের নামাযের  পর।’ (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৯ম খন্ড, ৫২৩ পৃষ্ঠা)

সূরা কাহাফের ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)   থেকে   বর্ণিত, নবীয়ে   রহমত,  শফীয়ে   উম্মত,  তাজদারে   রিসালাত   (রা.) আশাদ করেন: ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ‘সুরা কাহাফ’ পাঠ করবে,   তার  কদম  থেকে   আসমান পর্যন্ত    নূর   দ্বারা আলোকিত   হবে   এবং  কিয়ামতের  দিন  ঐ   নূর  তার সামনে উদ্ভাসিত  হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহে  তার  থেকে   সংগঠিত  গুনাহা  সমূহ্   ক্ষমা   করে  দেয়া হবে। (আত্ তারগীব   ওয়াত তারহীব,  ১ম  খন্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২)

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)