পাথরঘাটা খাদ্য গুদাম থেকে ৫২ বস্তা চাল পাচার, ১১ বস্তা জব্দ

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫০ পিএম, ৭ জুলাই ২০২১

পাথরঘাটা খাদ্য গুদাম থেকে ৫২ বস্তা চাল পাচার, ১১ বস্তা জব্দ

পাথরঘাটা খাদ্য গুদাম থেকে বিভিন্ন সময়ে চাল পাচারের অভিযোগ রয়েছে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালামের বিরুদ্ধে। আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে সরকারি বস্তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন প্যাকেটে মোরকজাত করে বাজারজাত করেন বলেও জানান স্থানীয় ফিরোজ, জসিম সহ অনেকে।

এ বিষয়টি নিয়ে পাথরঘাটার স্থানীয় অনলাইন প্রোটাল পাথরঘাটা নিউজ এর অনুসন্ধান চলাকালে বুধবার বেলা দুইটার দিকে১১ বস্তা চাল জব্দ করে পাথরঘাটা উপজেলা প্রসাশনকে জানালে বরগুনার অতিরিক্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিট্রেড তানভীর আহমেদ চাল গুলো জব্দ করে পাথরঘাটা থানায় হস্তান্তর করেন।

পাথরঘাটা নিউজ এর আকন মোহাম্মদ বশির জানান, বুধবার সকাল থেকে পাথরঘাটায় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খাদ্য গুদাম থেকে চাল পাচার হচ্ছে বলে তিনি জানতে পারেন। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলা দুইটার দিকে ১১ বস্তা চাল সহ দুটি অটোরিকশাকে জব্দ করে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কে জানান। তিনি আরো জানান, সকাল থেকে মোট ৫২ বস্তা চাল খাদ্য গুদাম থেকে বের হয়েছে। এর মধ্যে তিনি ১১ বস্তা আটকাতে পেরেছেন।

চাল বহন করে নিয়ে যাওয়া অটো রিকশা চালক ইদ্রিস ও লিটু জানান, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালামের চাচা শশুর রাসেল কারী খাদ্য গুদাম থেকে ১১ বস্তা চাল এনে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়া করে। এর আগেও কয়েক গাড়িতে করে চাল খাদ্য গুদাম থেকে অন্য গাড়িতে বাজারে পাঠিয়েছে বলেও জানান তারা।

রাসেল কারী জানান, তিনি বিভিন্ন সময় উপকারভোগীদের চাল কিনে তার চাচাতো ভাই ( খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার শশুর) সাবেক কাউন্সিলর মরহুম লিটনের বাসায় রাখতেন। তিনি সেখান থেকেই চাল গুলো নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) এর প্রতিনিধি, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ও সমবায় কর্মকর্তা জাফর সাদিক জানান, বিষয়টি প্রাথমিক সত্যাতা মিলেছে। তবে তদন্তে এখনো খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম ও পাচারকারী স্থানীয় জাহাঙ্গীর কারির ছেলে রাসেল কারীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি তাই এখন পর্যন্ত বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

বরগুনার অতিরিক্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিট্রেড তানভীর আহমেদ জানান, যেহেতু চাল গুলো খাদ্য গুদাম থেকে বের হয়েছে সে ক্ষেত্রে এগুলো কি ভাবে বের হয়েছে এর কারনে অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানায় রেগুলার আইনের আওতায় মামলা হবে। তিনি জানান, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালামের অনুপস্থিতি সন্দেহ অনেকটাই নিশ্চিত করেছে যে সে এঘটনায় জড়িত।

এবিষয়ে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছেন বলেও জানান তানভীর আহমেদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বিভিন্ন সময় পাথরঘাটা সোনালী ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তার বাড়ি ভোলার দৌলতখান ব্রাঞ্চে মোটা অংকের টাকা পাঠাতেন। জুন মাসের শেষের দিকেও ৭ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন বলে ব্যাংক সূত্রে জানা যায়।

এদিকে ঘটনার পরপরই উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালামের সাথে আজকের পত্রিকার কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন না বলে ফোন কেটে নাম্বার ব্লাকলিষ্টে ফেলে রাখেন। পরবর্তীতে অন্য ফোন দিয়ে কল দিলে কল টি কেটে দিয়ে ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সার্কেল তোফায়েল আহমেদ সরকার জানান, জব্দ চালগুলো থানায় রয়েছে। এছাড়া পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)