খাবার না পাইলে ড্যান্ডি খাই, তহন ক্ষুধা লাগে না

আকন মোঃ বসির
আকন মোঃ বসির, প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:১২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০৪:০০ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

আকাশ

আহ্কাফ জিরাদ চয়নঃ শিশুটির বয়স আট বছর। তার নাম আকাশ। তবে সবাই তাকে ‘টোকাই’ নামেই ডাকে। শনিবার এই শিশুটিকে দেখা গেল রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে। তার হাতের মুঠে একটি পলিথিন।

সেটি নিয়ে সে ফ্লাইওভারের নিচে একটি পিলারের আড়ালে লুকিয়ে গেল। এরপর সে পলিথিনের মুখটিতে নিজের মুখ ঢুকিয়ে শ্বাস নিতে শুরু করল। শিশুটি নেশাজাতীয় দ্রব্য ‘ড্যান্ডি’ সেবন করছে। শুধু এই শিশুটিই নয় বরং পথশিশুদের অনেকেই ড্যান্ডি নামের নেশাদ্রব্যে আসক্ত। ঢাকার পথশিশুদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এমনকি ক্ষুধার কষ্ট ভুলে থাকতে এই শিশুরা নিয়মিত মাদক সেবন করে। বয়স অনুযায়ী নিয়মিত তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও আকাশরা সারাদিন ঘুরে বেড়ায় শহরের আনাচে-কানাচে।

অভিভাবকহীন এই শিশুদের অনেকেরই দুই বেলা খাওয়ার সুযোগ হয় না। আর এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুধার জ্বালা যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য তারা মাদক নিচ্ছে। রাজধানীর শাহবাগ, কমলাপুর রেলস্টেশন, মগবাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকার পথশিশুদের দল বেঁধে পলিথিনে ড্যান্ডি নিয়ে রাস্তার ওপর বসেই তা সেবন করতে দেখা যায়।
আকাশ02

আকাশের কাছে মাদক গ্রহণের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে, ‘সারাদিন রাস্তায় কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল কুড়াই। পরে ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি কইরা যে টাকা পাই তা দিয়ে ড্যান্ডি কিইন্না খাই। কোনোদিন খাবার খাইতে পারি আবার কোনোদিন পারি না। যেদিন খাবার পাই না সেদিন ড্যান্ডি খাই। তহন আর ক্ষুধা লাগে না।’মাদক বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্যান্ডি স্থানীয় একটি শব্দ। এর আক্ষরিক তেমন কোনো অর্থ নেই। মূলত ইন্ডিয়ায় তৈরি ড্যান্ডরাইট নামক একটি আঠা থেকে ‘ড্যান্ডি’ শব্দের উৎপত্তি। মূলত জুতা তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য এই আঠাটি আমদানি করা হয়ে থাকে। এই আঠা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে তার গন্ধ নেয়াই হচ্ছে ড্যান্ডি সেবনকারীদের কাজ। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ড্যান্টরাইট সেবন করলে এর গন্ধে সেবনকারীদের শ্বাসতন্ত্রের মধ্যে এক ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি হয়, যার কারণে তাদের নাকে অন্য কোনো গন্ধ কাজ করে না। এ ছাড়া শরীরের নেশা জাতীয় এক ধরনের অনুভূতির সঞ্চার হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদকাসক্ত পথশিশুদের নিরাময় কেন্দ্রে থাকার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ শিশুই সড়কে ঘুরে বেড়ায়। এরা যে পরিবেশে থাকে সেখানে সহজেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আবার এদের অভিভাবকরাও বিভিন্ন মাদক বিক্রেতা চক্রের সঙ্গে জড়িত। বাড়তি আয়ের জন্য তারা সন্তানদেরও মাদক চক্রের সঙ্গে ভিড়িয়ে দেন। অনেকের কেউ নেই। নানা কারণে তারা পরিবার থেকে দূরে।

এ এম বি / পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)