উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনের সৌন্দর্য: দখল হয়ে গড়ে উঠছে জনবসতি

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০২:২৯ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

---

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান (নিজস্ব প্রতিনিধি)।। বরগুনা দক্ষিণ উপকুলে অবস্থিত রয়েছে বিশাল আয়তনের সংরক্ষিত বন। পাশাপাশি রয়েছে সমুদ্র সৈকত আর দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনা। যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। যেখানে গড়ে উঠেছে একটি দৃষ্টি নন্দিত ইকোপার্ক।

তবে স্থানীয় কিছু দখলদারদের কবলে পরে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এ বনের পরিধি ও গাছপালা। অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে, অর্থের বিনিময় বসতি স্থাপনের। আবার কেউ কেউ রাতের আঁধারে জোড় পূর্বক গড়ে তুলছে বসত-বাড়ি। পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের দাবি, এ বন রক্ষায় আইনের প্রয়োগ বাস্তবায়ন খুবই জরুরী। অন্যথায় অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে এ বিশাল বনভূমি। তবে জেলা প্রশাসনের আশ্বাস বন বিভাগের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বন রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ ট্যাংরাগিরি বনাঞ্চল। এটি স্থানীয়ভাবে ফাতরার বন হিসেবে পরিচিত। আয়তন প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার একর। ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই এ বনকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষনা করা হয়। যার একটি অংশের নাম আশারচর। এখানে রয়েছে- কেওড়া, গেওয়া, রেইনট্রি, বাইন, সুন্দরী, হেতাল, গরান, জাম, গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির গাছ। যেখানে বসতি স্থাপনের কোন সুযোগ নেই। অথচ এ সংরক্ষিত বনের মধ্যেই প্রায় ২ একর জমি দখল করে বাউন্ডারি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে তথাকথিত গাজী কালু নামের একটি মাজার। যেখানে রয়েছে মুরগির খামারসহ সাধারণ মানুষের বসবাস। অন্যদিকে বনের ভিতরেই অস্থায়ী আস্থানা গেড়ে ব্যবসা পেতেছেন অনেকেই । আর পোনা শিকারিরা গড়েছেন বসতি। ঘর তৈরি ও রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে বনেরই গাছপালা। অভিযোগ রয়েছে, এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে মিলছে বসতি গড়ার অনুমতি। এরপর প্রতিমাসে বন বিভাগ কর্মীদের কাছে গুনতে হয় নির্দিষ্ট অংকের টাকা।

এ বনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মো: রফিক আকন নামের এক জেলের কাছ থেকে সংরক্ষিত বন এলাকায় মাছ শিকার আর শুকনা মাছের বর্জ ব্যবস্থাপনার জন্যে রশিদের মাধ্যমে তিনশত পয়তাল্লিশ টাকা নিয়েছে বন বিভাগ। কিন্তু রফিক আকনের দাবি এ বনে বসতি স্থাপন এবং মাছ শিকার সব মিলিয়ে বন বিভাগ কর্মীদের দুই থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়।

এ বনে বসবাসকারী হোসনেয়ারা মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী বলেন, “এহানে ঘর উডানের সময় ফরাস্টারেগো দেড় হাজার টাকা দিছি, এহোনও মাসে মাসে টাহা দিয়া থাহি, আর টাহা না দেলে মোগো ফরেস্টারেরা এহানে থাকতে দেয়না। কি পরিমান টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে মনোয়ারা বলেন, য্যার দাইরদা য্যা নিয়া পারে, দুই হাজার, তিন হাজার, পাঁচ হাজার।” এ সময় একইস্থানে বসবাসকারী মো. নুরু মিয়া, হাবিবুল, বাশারসহ একাধিক জেলে বন বিভাগকে সরকারি রাজস্বের বাইরে অতিরিক্ত টাকা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ ব্যাপারে টেংরাগিরি বিট কর্মকর্তা মো. জাহিদ প্রামানিক বলেন, সংরক্ষিত বন এলাকায় মাছ শিকার আর শুকনা মাছের বর্জ ব্যবস্থাপনার জন্যে নির্দিষ্ট অংকের রেভিনিউ ছাড়া অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না। তবে যারা অভিযোগ করছেন তার কোন সত্যতা নেই।

এ ব্যাপারে তালতলী উপজেলা নির্বার্হী অফিসার মোসাঃ ফারজানা রহমান জানান, বন বিভাগের সমন্বয়ে সংরক্ষিত বনে বসতি স্থাপন এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এনএএস/পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)