আগে দোহানে আড্ডা দিতাম আর এহন পরিবারে সময় দেই

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৭:৪৬ পিএম, ২৬ মে ২০২৩

ছবিঃ পাথরঘাটা নিউজপ্লান ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগীতায় এবং সাউথ এশিয়া পার্টনারশীপ বাংলাদেশ (স্যাপ-বিডি) এর আয়োজনে বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় পাচঁটি ইউনিয়নে পাচঁ দিন ব্যাপী “পরিবার মেলা’’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেন্ডার ট্রান্সফর্মেটিভ আর্লি চাইল্ডহুড ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট এর ’ইনোভেশন স্প্রিন্ট কম্পোনেন্টের মাধ্যমে আয়োজিত এই “পরিবার মেলায়’’ পরিবারের শিশুদের যত্ন ও বিকাশকে উদ্ভুদ্ধ করতে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

নভেম্বর ২০২২ এ ইনোভেশন স্প্রিন্ট কম্পোনেন্ট এর কার্যক্রম শুরু হয়। গর্ভাবস্থা থেকে শিশুর বয়স ৮ বছর পর্যন্ত যথাযথ বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সময় হওয়ায়, শিশুর যত্ন, শারীরিক বিকাশ, বর্ধন এবং বুদ্ধিবিত্তিক বিকাশ সাধনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

তাই এই সময় মা-বাবার পাশাপাশি পরিবারের সকল সদস্যদের ভূমিকা শিশুর যত্নে গুরুত্ব বহন করে। শিশুর বিকাশকে তরান্বিত করতে অভিভাবকদের বিশেষ করে মায়ের পাশাপাশি বাবাদের অংশগ্রহনকে উৎসাহিত করতে ইনোভেশন স্প্রিন্ট কম্পোনেন্ট প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় পরিবার মেলার মাধ্যমে শিশুর বিকাশের যত্ন ও লালন-পালনে জেন্ডার সংবেদনশীল পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে পরিবারের সবাইকে জানানো এবং শিশুর বিকাশে মায়ের পাশাপাশি বাবাদের সমান ভূমিকা পালনের জন্য পরিবার মেলায়, মা ও বাবাদের বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক খেলা-ধূলা, সচেতনতামূলক জারি গান ও বিতর্ক প্রতিযোগীতা ও শ্রেষ্ঠ বাবাদের সম্মাননা আয়োজনের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইনোভেশন স্প্রিন্ট কম্পোনেন্টের মূল উদ্দেশ্য হল প্রাক শৈশবকাল থেকেই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরন ছেলে এবং মেয়ে উভয় শিশুর জন্যই বেড়ে ওঠার সমান সুযোগ নিশ্চত করা। এই লক্ষ্যে বরগুনা জেলার পাচঁটি ইউনিয়নে শুধু মাত্র বাবাদের নিয়ে ৩০ টির বেশি ’’ফাদার্স ক্যাফে’’ গঠন করা হয়েছে।

যারা নিজেদের পরিবারের পাশাপাশি সমাজে শিশুদের লালন-পালনে জেন্ডার বৈষম্য নিরশনে সকলকে উৎসাহ প্রদান করে আসছেন এবং নিজেও পরিবর্তিত হয়েছেন। উক্ত ’’পরিবার মেলায়’’ গর্ভকালীন সময় মায়ের যত্ন, শিশুদের যত্ন এবং জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পরিবার এবং সমাজে ভূমিকা রাখার জন্য ফাদার্স ক্যাফের কয়েকজন নির্বাচিত ‘’শ্রেষ্ঠ বাবা’’দের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হয়।

১নং বদরখালী ইউনিয়নের মোঃ ফারুক হাওলাদার (৪৫) বলেন “ইনোভেশন স্প্রিন্ট কম্পোনেন্টের ফাদার্স ক্যাফের আমি একজন সম্মানিত সদস্য।
ক্যাফেতে বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষনে অংশগ্রহন করে জানতে পারছি পারিবারিক কাজ ও সন্তান লালন -পালন শুধুমাত্র মায়ের একার দায়িত্ব না, একজন বাবা হিসেবে আমারও অনেক দায়িত্ব আছে যা এতদিন অবহেলা করে পালন করা হয়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমি শুধু নিজেকেই পরিবর্তন করছি তা কিস্তু নয়। আগে দোহানে আড্ডা দিতাম আর এহন পরিবারে সময় দেই এবং আমার বন্ধুদেরও আমার মত পরিবারে সময় দিয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বলি।

তবে আমি মনে করছি একটি অভ্যাস সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব নয় তাই এই ধরনের প্রকল্পের কার্যক্রম অভ্যাহত থাকলে শতভাগ মানুষই অভ্যাস পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে।

ষাঠোর্ধ জাহানারা বেগম পরিবার মেলায় এসে তার নাতনীর নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে রীতিমত হয়রান ‘‘দাদী পুরুষ মানসের সূই-সূতা গাঁথা আর মহিলা মানসের হাড়িভাঙ্গা’’? এটা আবার কেমন খেলা? পাশের চেয়ারে বসে থাকা নাসরিন (৪৩) নিজের অজান্তেই শিশুর প্রশ্নের উত্তরে বলে উঠলো ‘‘মা ঘর-গৃহস্থলীর কাজে পুরুষ মহিলা আলাদা কিছু নেই, চাইলে ঘরের কাজে মা বাবা উভয় একে অপরকে সাহায্য সহযোগীতা করতে পারে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মাদ হোসেন, ডিরেক্টর প্রোগ্রাম, স্যাপ বাংলাদেশ, ঢাকা, মো: সাইফুল ইসলাম, প্রকল্প সম্বয়কারী ও মর্জিনা মাহমুদা, টেকনিকাল অফিসার, বরগুনা, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সর্বস্তরের জনগণ।

মেলায় উপস্থিত সকলে জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর ভূমিকা এবং সাউথ এশিয়া পার্টনারশীপ এর প্রকল্প বাস্তবায়ন অভ্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)