বাকেরগঞ্জে মাদ্রাসা সুপার লাঞ্ছিতের ঘটনার অন্যতম আসামী সোহেল খন্দকার গ্রেফতার

নোমান আল সাকিব
নোমান আল সাকিব, ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১১:২১ পিএম, ২০ মে ২০১৮ | আপডেট: ১১:২৯ পিএম, ২০ মে ২০১৮

---
দুর্ধর্ষ এই তরুণই সোহেল খন্দকার ওরফে চোরা সোহেল। যাকে বাকেরগঞ্জবাসী চোর ও ছিনতাইকারী হিসেবেও চেনেন। নামের সার্থকতার পরিচয় তিনি প্রায় দিয়ে থাকেন। তবে এবার একটু ভিন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে গণমাধ্যম, মিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় ভাইরাল হয়ে গেছেন। তার এমন ঘৃণ্য ও জঘন্য কর্মকান্ডের ভিডিও বিশ্বের মুসলমানের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। ভিডিও ফুটেজটি যারা দেখেছে তারা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

গত ১১ মে (শুক্রবার) ফজরের নামাজ শেষে বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম ও কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাৎ দাখিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার মাও: মো: আবু হানিফা হুজুরের মাথায় মানুষের মল ঢেলে লাঞ্ছিত করা হয় এবং বিষয়টি নিয়ে বারাবারি করলে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ তৈরী করে তা গণমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সেখানে ইসলামকে একটি ঘৃণ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেই ভিডিওটি দেখে শুধু বাংলাদেশ নয় বহিরবিশ্বেও সমালোচনার ঝড় বইছে। ওই ভিডিওতে লাল শার্ট পরিধেয় যে উগ্রবাদী সন্ত্রাসী লোকটি ইমাম সাহেবের হাত মুচরিয়ে ধরে রেখেছে এবং পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে মল মাথায় মাখিয়ে দিয়েছে সেই মানুষরূপী শয়তান লোকটিই এই সোহেল খন্দকার।

এ ঘটনার সাথে জড়িত ৮ জনকে আসামী করে মাও: আবু হানিফা হুজুর থানায় মামলা দিলে মানুষরূপী শয়তানগুলো নিজ এলাকা ছেড়ে গোপন স্থানে আত্মগোপনে করে রয়েছে।
---
একপর্যায় গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এস.আই কমল চন্দ্র দে এবং হায়দারের নেতৃত্বে একটি টিম মামলার অন্যতম আসামী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এমদাদ খন্দকারের কুলাঙ্গার পুত্র সোহেল খন্দকারকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পটুয়াখালীর জেলার মির্জাগঞ্জ থানাধীন মহিষকাটা এলাকার প্রাক্তন চেয়ারম্যান কাঞ্চন গাজীর ছেলে রুবেল গাজীর ঘরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ইতিপূর্বে এ ঘটনার সাথে জড়িত মিনজু মুসল্লী, বেলাল হোসেন ও ফরহাদ মুসল্লী নামের ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এবং ভিডিও ফুটেজ দ্বারাই তাদের উপস্থিতি নিশ্চত করা হয়েছে।

তবে এ ঘটনার ইন্ধোন দাতা ও মূল হোতা জাহাঙ্গীর খন্দকার, জাকারিয়া হোসেন, মাছুম সরদার ও এনামুল কে গ্রেফতার করতে না পারায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবীতে সমাবেশ ও মানববন্ধন চলছে।

স্থানীয় সমালোচকরা জানান, যারা এ কর্মকান্ড করেছে তারা বিগত দিনেও এলাকার নিরীহ মানুষদের অত্যাচার, জুলুম, হয়রানি, মারধর, খুন, গুমসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল। তাদের ক্ষমতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ভয়ে তারা মূখ খুলতে পারছিল না। এই সন্ত্রাসীরা মিলে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে বারাবারি করতে গিয়ে মাত্রা অতিক্রম করে ফেলেছে। এবার এমন জগন্যতম অপরাধ করার পর তারা এবারও কি পার পেয়ে যাবেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, পৌরসভা এলাকায় যত চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি হয় সবই সোহেল খন্দকারের নেতৃত্বে। সোহেল এলাকার স্কুল ও কলেজ পড়–য়া যুবকদের সর্বনাশা ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করিয়ে তাদের দ্বারা এসব অপকর্ম করায়। গত বছরের ২৭ রমজান পৌরসভার পদক্ষেপ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে নিজ নিজ বাড়িতে গেলে ওই সুযোগে সোহেল ও তার সহযোগীরা রাতের আঁধারে রুমের তালা ভেঙ্গে নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং ৬টি মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোহেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলে ৪টি মোবাইল ফোন ফেরত দিলেও বাকী ২টি মোবাইল এবং ৭০ হাজার টাকা ফেরৎ দেয়নি তিনি। এছাড়াও একই এলাকার সাহিন মাষ্টারের ঘরে গভীর রাতে প্রবেশ করে আলমারীতে রাখা রক্ষিত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি করেন তিনি। সোহেল খন্দকার ওরফে চোরা সোহেলের বিরুদ্ধে এলাকায় এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। তার কাছে দেশীয় অস্ত্র রক্ষিত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাকে সন্ত্রাসী বললেও ভুল বলা হবে না। অস্ত্র ছাড়াও তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে, যে বাহিনী দিয়ে উপজেলায় চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করান। ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন ও গাঁজা খেয়ে মাতাল হয়ে এলাকায় হট্টগোল ও তান্ডব চালানো তার পুরনো অভ্যাস। মাতাল অবস্থায় যাকে তাকে মারধর তার অন্যতম শখ। কিন্তু এবার একজন ইমামমের মাথায় মানুষের মল ঢেলে তিনি সমালোচনার ঝড়ে পড়ে গেছেন।

পুলিশের খাতায় অপরাধী হিসেবে সোহেল খন্দকারের নাম অনেক আগে থেকেই তালিকাভুক্ত হয়। বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় মারামারি, চুরি, ছিনতাই, নারী কেলাংকারী ও মাদক ব্যবসায়ের ঘটনায় সোহেল খন্দকারের নাম সবার সামনে চলে আসে। এমনকি টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কন্ট্রাকে ডাকাতি, মানুষ খুন ও গুম করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তারা বংশগত বলিয়ান বিধায় এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকত। তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ দিলে কোন সুষ্ঠু বিচার পেত না। ফলে কাউকে যেন পরোয়া করেন না তিনি। এভাবেই অনেকটা বেসামাল হয়ে ওঠেন সোহেল খন্দকার।

বিভিন্ন অপকর্মের হোতা এই সন্ত্রাসী সোহেল কে রুখবে কে? সবার একটাই প্রশ্ন, এত অপকর্মের পর এবারও কি তিনি পার পেয়ে যাবেন? পুরো এলাকাটা যেন তারই রাজ্যপাট। অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন তার অপকর্মগুলো। কাউকে মানা বা তোয়াক্কাই করেন না। কেউ তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই পড়ে যান রোষানলে। তার হিংস্র থাবা থেকে তখন আর কে বাঁচায় তাকে। সোহেল খন্দকার ওরফে চোরা সোহেল এলাকায় এক মূর্তিমান আতংকের নাম।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)