গুহা থেকে যেভাবে উদ্ধার হচ্ছে কিশোরেরা!

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০১ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৮

গুহা থেকে যেভাবে উদ্ধার হচ্ছে কিশোরেরা
থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবলারদের উদ্ধারকাজে মনোযোগ ছিল বিশ্বের অনেকেরই। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমও নিয়মিত হালনাগাদ খবর পরিবেশন করেছে। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই চার কিশোরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় সময় আগামীকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত উদ্ধার অভিযানে বিরতি দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিন ধরে এরা গুহায় আটকে আছে।

থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহার একটি থাম লুয়াং। গত ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে বন্যার কারণে সৃষ্ট প্লাবনে আটকা পড়ে ফুটবল দলটি। এর ৯ দিন পর ২ জুলাই তাদের জীবিত থাকার খবর দেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। তারা গুহায় ঢোকার পর হঠাৎ ভারী বৃষ্টি এবং এতে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে যায় গুহামুখ। ভেতরেও ঢুকে পড়ে পানি। প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল, এই গুহায় কিশোরের দল মাসব্যাপী থাকতে পারবে। তবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবারও বৃষ্টির পানি গুহায় ঢুকে যেতে পারে। তাই দ্রুত তাদের বের করে আনতে রোববার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এখন প্রশ্ন, কীভাবে চলেছে উদ্ধারকাজ। বিবিসিসহ কয়েকটি গণমাধ্যম সেই প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।

গুহাটি সাপের মতো প্যাঁচানো। এর ভেতরে অনেক ফাটল আছে, যা উদ্ধারকারীদের জন্য যেকোনো সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। থাম লুয়াং গুহাটির কোথাও কোথাও ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, কোথাও কোথাও অত্যন্ত সরু আবার কোথাও কোথাও সেটি পানিতে পূর্ণ হয়ে আছে। কাজটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, সেটা স্পষ্ট হয়েছে একজন উদ্ধারকারী ডুবুরির মৃত্যুর ঘটনায়। থাই নৌবাহিনীর সাবেক একজন অভিজ্ঞ ডুবুরি তিন দিন আগে গুহার ভেতরে বাচ্চাদের কাছে অক্সিজেনের ট্যাংক পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসার সময় মারা যান।

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত গুহার যে শুকনো উঁচু জায়গাটিতে দুই সপ্তাহ ধরে দলটি আশ্রয় নিয়ে আছে, তাদের উদ্ধারে ৯০ জন অভিজ্ঞ ডুবুরি কাজ করছেন। দুজন ডুবুরির তত্ত্বাবধানে একেকজন কিশোরকে বের করে আনা হচ্ছে। পুরো পথ পার হতে তাদের অন্তত ছয় ঘণ্টা করে সময় লাগছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আটকে পড়াদের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বের করা সম্ভব হবে। পানিতে ডুবে যাওয়া সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে এদের বাইরে আনার জন্য ডুবুরিরা নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন।

প্রথমে ডুবসাঁতারের মাধ্যমে তাদের বের করে আনার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ কিশোর সাঁতার জানে না। ডুবসাঁতারের মাধ্যমে কীভাবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার কাদাযুক্ত ও অনেক স্থানের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাইরে আসবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে সামান কুনান নামের এক ডুবুরি আটকে পড়া ব্যক্তিদের অক্সিজেন সরঞ্জাম দিয়ে ফেরার পথে মারা যান। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত শুক্রবার উদ্ধার পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। কিশোরদের কাছে পৌঁছাতে গুহার পাহাড়ের পেছনের দিকে অনেকগুলো জায়গায় খনন শুরু হয়। রোববার পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক গর্ত খনন করা হচ্ছে। তবে রাতেই আবারও বৃষ্টি হয় এবং আরও বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)