বরগুনা-১: এক চিঠিতে মনোনীত দুই প্রভাবশালী নেতা, কে হবে নৌকার কান্ডারী

আকন মোঃ বসির
আকন মোঃ বসির, প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:২১ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

বরগুনা ১ আসনের আওয়ামীলীগ এর দুই কান্ডারী
পাথরঘাটা নিউজ ডেস্ক: বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-০১ আসন। এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতাকে। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রভাশালী দুই গ্রুপের মধ্যে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা।

মনোনয়ন পাওয়া দু’জনার মধ্যে একজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। আরেকজন হলেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ও বরগুনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবীর।

মনোনয়ন তালিকায় দু’জনের নাম ঘোষণা হওয়ার পরপরই প্রভাবশালী দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। চেম্বার অব কমার্সের বর্তমান সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ বছরের ত্যাগী নেতা হিসেবে আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবীরের পক্ষে রবিবার সন্ধ্যার পরে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করেও বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল বের করে উৎসুক জনতা ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা। একই সাথে মনোনয়ন তালিকায় জাহাঙ্গীর কবীরের নাম ঘোষণার পরে সন্তোষ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন জেলা যুবলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সকল অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা, সাবেক এমপি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুদীর্ঘ বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং নজির বিহীন অনিয়ম দুর্নীতি ও মাদক বাণিজ্যের কারণে বরগুনার সাধারণ মানুষ এখন অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর উপর ক্ষুব্ধ। বরগুনার মানুষ এখন পরিবর্তন চায়।

তিনি বলেন, বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে মনোনয়ন দেওয়া হলে কোনো অবস্থাতেই এ আসনে আওয়ামী লীগকে জেতানো সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগে আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবীরের অনেক অবদান রয়েছে। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলীয় সকল নেতাকর্মী একজোট হয়ে কাজ করবে।

সাবেক এমপি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের এ বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে বক্তব্য দিয়েছেন বরগুনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক, সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসাইন। একই মন্তব্য করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ।

এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ভেতরে রয়েছে এমপি শম্ভু বিরোধী শক্তিশালী জোট। বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু দীর্ঘ ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচ বার। এমপি হয়েছেন চার বার। নৌপরিবহন উপমন্ত্রীও হয়েছেন একবার। সুদীর্ঘ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় এমপি শম্ভু ও তার পুত্র সুনাম দেবনাথের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নসহ বহু অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং মাদক বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে সুনির্দিষ্ট ২৪ দফা লিখিত অভিযোগ দাখিল করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ। এ অভিযোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দও। একই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমপি শম্ভুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ। এরপর বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের ২৭ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষকে ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ে ডেকে দীর্ঘ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বরগুনা-০১ আসনের সকল বিষয়ে ইতোমধ্যেই দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু অবগত রয়েছেন। তিনিই এ বিষয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত দেবেন।

স্থানীয় নেতাকর্মী ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠনেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা জানা গেছে, এমপি শম্বু বিরোধী জোট হয়ে বরগুনা-০১ আসনে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তত এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ। এসব নেতৃবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ও বরগুনা জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবীর, সাবেক এমপি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা এনজিও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বরগুনার সভাপতি ও বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাড. মো. শাহজাহান, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি বিষযক কেন্দ্রিয় উপকমিটির অন্যতম সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এসএম মশিউর রহমান সিহাব, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম সরোয়ার ফোরকান, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম দেলোয়ার হোসেন, বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি অ্যাড. শাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ অলি, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন সাবু, সাবেক এমপি মরহুম নিজাম উদ্দিন আহমেদ-এর স্ত্রী ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিয়া এলিচ, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক জোমাদ্দার, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তৌফিক উজ্জামান তনু, প্রমূখ।

এসব প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ সবাই এক জোট হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের দাবি, এমপি শম্ভু ছাড়া যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তাকে নিয়েই একযোগে নির্বাচনে নামবেন বলে তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ।

অন্যদিকে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন ঐসকল নেতৃবৃন্দকে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এমপি শম্ভুও তার সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)