৬৫ দিনের অবরোধভাতের মাড় খেয়ে ইফতার, পান্তা খেয়ে রোজা

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, ২৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ০৯:১৬ পিএম, ২৭ মে ২০১৯

ভাতের মাড় খেয়ে ইফতার, পান্তা খেয়ে রোজা
ইলিশের প্রজনন মৌসুম পাল্টে গেলেও পাল্টায়নি মৎস্য অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার সময়। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে ৬৫ দিনের অবরোধ। জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় না করে আরোপ করা হয়েছে এই অবরোধ। এর ফলে মৎস্যজীবীরা পড়েছেন হতাশায়। সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার যেতে না পারায় কয়েক লাখ মাঝিমাল্লা দুর্বিসহ জীবন পার করছেন।

একদিকে রমজান মাস, অন্যদিকে ৬৫ দিনের মৎস্য অবরোধ। আয়ের একমাত্র পথটি বন্ধ থাকায় কোনো মতে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বরগুনা পাথরঘাটার জেলেরা। তাইতো জেলেদের অনেকেই ভাতের মাড় খেয়ে ইফতার এবং পান্তা খেয়ে রোজা রাখছেন। সরেজমিনে বিভিন্ন জেলেপল্লী ঘুরে জেলেদের বেকারত্ব জীবনের এমন গল্প জানা গেছে।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা গুচ্ছ গ্রামের জেলে বেলাল, রিপন, সোলায়মান বলেন, ‘মোরা সাগরকূলে থাইক্যা মাছ ধরা ছাড়া কিছুই জানি না। কোনো দক্ষতা নাই। বছরের আশ্বিন মাসে (৭-২৮ অক্টোবর) ২২ দিন যায় মা মাছ রক্ষার নিষেধাজ্ঞা, ৮ মাস চলে জাটকা নিধন প্রতিরোধ। এর পর জৈষ্ঠ্য থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ৫ মাস থাকে মাছ ধরার জন্য। এ সময়ে সামুদ্রিক নিম্নচাপ,লঘুচাপসহ নানা দুর্যোগের বাধা মেনে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরি। এর মধ্যে নতুন করে ৬৫ দিনে অবরোধ মোগো জানে মারার কৌশল করছে সরকার।’

আরো পড়ুন

পাথরঘাটার জেলেরা ৬৫ দিনের অবরোধে দিশেহারা
আরো পড়ুন

মাছ আহরনে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা
পাথরঘাটাসহ উপকূলে জেলেদের ঈদ আনন্দ বঞ্চিত হওয়ার আশংকা

আরেক জেলে আব্দুর রহিম বলেন,‘ছোট বেলা থেকেই নামাজ রোজা পালন করে আসছি। কামাই বন্ধ তাতে তো আর রোজা বন্ধ করতে পারি না।’

কীভাবে রোজা রাখছেন জানতে চাইলে- জেলে আব্দুর রহিম বলেন, ‘বাড়িতে থাকা মহিলারা শরবতের বদলে ভাতের মাড় দিয়ে ইফতার করে ভাত খায়। আর আমি নাতিডারে লইয়া মসজিদে যাইয়া রোজা খুলি। আর শেষ রাইতে পান্তা ভাত খাইয়া রোজা রাখি।’

উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার অধিকাংশ মানুষ গভীর সমুদ্রে গিয়ে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। পরোক্ষভাবে এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা। এ উপজেলার ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ভাবেই এ পেশায় জড়িত। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ (২ মাস ৫দিন) দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার উপর সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা চলছে।

স্থানীয় জেলে ও ট্রলার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন, সারা বছর পাঁচ মাস ইলিশ ধারার সময় থাকলেও নতুন করে ৬৫ দিনের অবরোধ আরোপে মৎস্য পেশায় সংশিলিষ্টদের এখন মহা দুর্দিন। অবরোধের ৯ দিন পার হলেও সরকার থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় বাড়ছে হতাশা ও ক্ষোভ।

বাংলাদেশ মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান,‌‘সরকার যে উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা আমাদের ইলিশ ধরার জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ আমরা ৪ ইঞ্চি ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরি। সমগ্র উপূকূলে আমরা এর প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেছি। সরকারের কাছে আমাদের রক্ষার আবেদন করেও ফল পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মাছ ধরা বন্ধে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কবির মাহমুদ বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধকালীন সময়ে জেলেদের কোনো ধরনের সহযোগিতা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপকূলীয় জেলেপল্লীগুলোতে মাঝিমাল্লারা এক ধরনের অসহায়ত্ব জীবনযাপন করছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)